বরিশালের বাজিমাত: 'মারমুখী মুনিম', 'হিসেবী শফিকুল' ও 'ডেথ স্পেশালিস্ট রানা'তে চড়ে 'ফাইনাল ফরচুন'
ফরচুন বরিশাল-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, মিরপুর (টস-কুমিল্লা/বোলিং)
ফরচুন বরিশাল- ১৪৩/৮, ২০ ওভার (মুনিম ৪৪, গেইল ২২, জিয়া ১৭, শহিদুল ৩/২৫, মঈন ২/২৩, নারাইন ১/১৬)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-১৩৩/৭, ২০ ওভার (লিটন ৩৮, মঈন ২২, ডু প্লেসি ২১, রানা২/১৫, শফিকুল ২/১৬, মুজিব ২/৩৩)
ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ১০ রানে জয়ী
কুমিল্লাকে স্তব্ধ করে ফাইনালের টিকেট কেটে ফেলেছে বরিশাল। মুনিম শাহরিয়ারের ঝড়ো শুরু কাজে লাগাতে না পারলেও বরিশাল পেয়েছিল লড়াকু পুঁজি। দুই বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান রানা এরপর জাদু দেখালেন শুরু ও শেষে। তরুণ এই দুই দেশি পেসারের নৈপুণ্যে তাই সাকিব আল হাসানরা এখন শিরোপা থেকে এক ম্যাচ দূরে।
মুনিমের ঝড়ো শুরু
মুনিম শাহরিয়ার আর ঝড়ো শুরু যেন এই টুর্নামেন্টে সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্যতিক্রম হল না এদিনও। পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ের জন্য সুনাম কুড়ানো নাহিদুলকে দিয়েই বোলিং শুরু করান এদিন অধিনায়ক হিসেবে ফেরা ইমরুল কায়েস। সেই নাহিদুলের ওভারেই দুই ছয় এক চারে ১৬ রান নিয়ে শুরু করেন মুনিম। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় ওভারেও মারেন দারুণ এক ছয়। অন্য প্রান্তে গেইলও এদিন খেলছিলেন হাত খুলে। দুজন মিলে পাওয়ারপ্লেতে তুলে ফেলেছিলেন ৫৭ রান। পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই গেইল ফিরলেও মুনিম ছিলেন অবিচল। দশম ওভারে মুনিম যখন ফিরলেন ততক্ষণে ৩০ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে ফেলেছেন। ওই ওভারেই সাকিব আল হাসানও রান আউট হয়ে ফিরলে ম্যাচে ফিরে আসে কুমিল্লা। ওই ওভার শেষে ৮৬ রানে থাকা বরিশাল এরপর শহিদুল ইস্লাম-তানভির ইসলামদের দারুণ বোলিংয়ে পৌঁছাতে পেরেছিল ১৪৩ রান পর্যন্ত।
তবে মুনিমের ঝড়েই বরিশাল পেয়েছিল বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পুঁজি। সেই শুরু কাজে লাগাতে না পারলেও দিনশেষে ২ চার ও ৪ ছয়ে সাজানো তার এই মারমুখী ইনিংস ব্যবধান গড়ে দিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
শফিকুলের ওপেনিং স্পেল ও ১২তম ওভারের জোড়া আঘাত
১৪৩ রানের পুঁজি নিয়ে বরিশালকে শুরু থেকেই চেপে বসতে হত কুমিল্লার ব্যাটারদের ওপর। মুজিব-উর-রহমান ৬ রান দিয়ে শুরু করার পরের ওভারে আক্রমণে এসে মোটে ৫ রান দেন বাঁহাতি পেসার শফিকুল। পুরো পাওয়ারপ্লেতেই এরপর সেই চাপ ধরে রেখেছিলেন; ৩ ওভার বল করে রান গুনেছিলেন মোটে ১৪। তবে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে ফেলেছিলেন ১২তম ওভারে নিজের স্পেলের শেষ ওভার করতে এসে।
এর আগের ওভারেই মাহমুদুল হাসান জয়ের বিদায়ে ভেঙেছে ৬২ রানের ওপেনিং জুটি। তার সুযোগ নিয়ে উইকেটে নবাগত ইমরুলকে ফেরালেন শফিকুল। ৩৪ বলে ৩৮ রানে থাকা লিটন দাস যখন হাত খোলার সুযোগ খুঁজছেন তখনই দারুণ এক স্লোয়ারে উপড়ে ফেললেন তার স্টাম্প। ওই দুই উইকেটের বিনিমিয়ে রান দিলেন মাত্র ২। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ওই ওভার শেষে শফিকুলের বোলিং ফিগার ছিল: ৪-০-১৬-২।
ডেথ ওভারের যম রানা
ম্যাচের ১১তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান রান। এসেই করলেন বাজিমাত। ৬২ রান করে জমে যাওয়া ওপেনিং জুটি ভাঙলেন জয়কে ফিরিয়ে। তবে বরিশালকে ম্যাচ জেতাতে নিজেকে আরও এক ধাপ ওপরে নিয়ে যেয়ে দেখালেন ডেথ ওভারে সক্ষমতার প্রমাণ। ১৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান তোলা কুমিল্লা তখনও ম্যাচে আছে ভালোভাবেই; উইকেটে তখন থিতু ফাফ ডু প্লেসি ও অন্য প্রান্তে সুনীল নারাইন। আগের ওভারেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা মঈন আলি ফিরেছেন ব্রাভোর আঘাতে। তারই পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ওয়াইড ইয়র্কার আর দারুণ সব স্লোয়ারের পসরা সাজিয়ে ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দেন রানা। শেষ বলে নারাইনের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদন করলেও ভাগ্য সহায় হয়নি সেবার। ১৯তম ওভারে এসে এরপর কার্যত কুমিল্লার কফিনে শেষ পেরেকটাই ঠুকে দেন। দ্বিতীয় বলেই আবারও বোকা বানিয়েছিলেন নারাইনকে; কিন্তু ব্রাভো সেবার ফেলে দেন সহজ ক্যাচ। তবে নিরাশ না হয়ে পরের বলেই ডু প্লেসিকে মিড উইকেটে তৌহিদ হৃদয়ের তালুবন্দি করেন। পুরো ওভারে দেন মোটে ৪ রান যাতে শেষ ওভারের সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮ রান। মুজিবের দুই উইকেটে মোটে ৭ রানই তুলতে পারে কুমিল্লা। রানার ম্যাচসেরা হওয়ার পারফর্ম্যান্সে তাই শেষ হাসি হাসে বরিশাল।