প্যাভিলিয়নের চোখে বিপিএলের সেরা একাদশ
শেষ হয়েছে বিপিএলের অষ্টম আসর। ফাইনালে ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এর আগে পুরো টুর্নামেন্টেই দেখা গেছে ব্যাট-বলের দুর্দান্ত কিছু লড়াই। সেখান থেকেই বিপিএলের সেরা একাদশ বাছাই করেছে প্যাভিলিয়ন।
উল্লেখ্য, এবারের বিপিএলে একাদশে তিন বিদেশি ক্রিকেটার রাখার বাধ্যবাধকতায় প্যাভিলিয়নের সেরা একাদশে জায়গা হয়নি অনেক বিদেশি তারকার।
ওপেনার
এই পজিশনের জন্য পছন্দের তালিকায় ছিলেন অনেকেই। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ তিন রান সংগ্রাহক উইল জ্যাকস, আন্দ্রে ফ্লেচার ও তামিম ইকবাল। তাদের সাথে ব্যাট হাতে নজর কেড়েছেন মুনিম শাহরিয়ারও। রানের দিক থেকে শীর্ষ তিনজনের চেয়ে ঢের পিছিয়ে থাকলেও ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে ম্যাচের ফলে তার প্রভাব ছিল নজরকাড়া।
উইল জ্যাকস টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১১ ম্যাচে করেছেন ৪১৪ রান। চট্টগ্রামের প্লে অফে ওঠার পেছনে এই ইংলিশ ওপেনারের অবদান বেশ বড়। সিলেটের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে খেলেছিলেন ৯২* রানের ম্যাচ জেতানো এক ইনিংস। সিংগেল ডিজিটে আউট হয়েছেন কেবল এক ম্যাচে। এর আগেও ধারাবাহিকতা ছিল তার ব্যাটে। আছে ৪টি ফিফটি।
জ্যাকসের সঙ্গী হিসেবে তামিমকেই বেছে নিয়েছে প্যাভিলিয়ন। ৯ ম্যাচে ৪ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে ৪০৭ রান করেছেন মিনিস্টার ঢাকার এই ওপেনার। বলা চলে ঢাকার ব্যাটিংকে একাই নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। ঢাকার স্কোরবোর্ডেও তামিমের প্রভাব ছিল স্পষ্ট।
টপ ও মিডল অর্ডার
ফাফ ডু প্লেসি, সাকিব আল হাসান, মঈন আলী; তিনজনই এবার বিপিএলে ছিলেন দুরন্ত ফর্মে। কুমিল্লার হয়ে ডু প্লেসি ১১ ম্যাচে করেছেন ২৯৫ রান। আছে এক সেঞ্চুরিও। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রামের বিপক্ষেও আছে দারুণ এক ক্যামিও। ফাইনালে রান না পেলেও কুমিল্লার হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকানই। তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে প্যাভিলিয়নের ভরসা ডু প্লেসিই।
সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছেন এবার। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংটা ছন্দ ফিরে পেয়েছে তার। শটের রেঞ্জও বেড়েছে বেশ। ১৪৪ স্ট্রাইকরেটটাও এর প্রমাণ। ১১ ম্যাচে করেছেন ২৫৪ রান। আছে তিন ফিফটি। বরিশালকে ফাইনালে তুলতে তার চওড়া ব্যাটের ভূমিকা অনেকখানি। প্যাভিলিয়ন চারে রাখছে সাকিবকে।
পাঁচ নম্বরে মঈন আলী। লেট অর্ডারে স্লগারের ভূমিকাও পালন করতে পারেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। তার দুর্দান্ত এক ক্যামিওতে চট্টগ্রামকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল কুমিল্লা। ৮ ম্যাচে তার সংগ্রহ ২২৫। তবে রানের চেয়ে ম্যাচের ফলাফলে মঈনের ‘ইমপ্যাক্ট’ ই এখানে বড় প্রভাবক।
সাকিব-মঈনদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কলিন ইনগ্রাম। মিডল অর্ডারে আসতে পারতো তার নামও। শেষদিকে বড় কিছু ইনিংস খেললেও ম্যাচের ভাগ্য সিলেটের দিকে ফেরাতে পারেননি তিনি।
উইকেটকিপার ও অলরাউন্ডার
দেশি-বিদেশি মিলিয়ে উইকেটকিপারদের মধ্যে রানের ছোঁয়া ছিল কেবল আনামুল হক বিজয়ের ব্যাটেই। ৯ ম্যাচে ২৮০ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। মুশফিক, লিটন, সোহান তার চেয়ে ঢের পিছিয়ে। সিলেটের হয়ে ওপেন করলেও, প্যাভিলিয়ন তাকে বিবেচনা করছে চার নম্বরের জন্য। সেইক্ষেত্রে সাকিব এবং মঈনের ব্যাটিং পজিশন একধাপ করে নিচে নামবে।
অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব-মঈন তো আছেনই, তাদের সাথে আসতে পারতেন সুনিল নারাইনও। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পাশাপাশি দারুণ কিছু স্পেলও করেছেন। যোগ্য দাবিদার ছিলেন ডোয়াইন ব্রাভোও। বল হাতে দারুণ কার্যকরী ছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ব্রাভোর চেয়ে মঈন অনেকখানি এগিয়ে।
ব্যাটে-বলে অনবদ্য এক বিপিএল কেটেছে সাকিবের। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তার হাতেই। মঈনও দারুণ অলরাউন্ডিং নৈপূণ্য দেখিয়েছেন। ম্যাচ জেতানো দুটো ইনিংসের পাশাপাশি আছে দারুণ কিছু স্পেলও।
বোলিং অলরাউন্ডার হলেও হাত খুলে খেলতে পারেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তারই খানিকটা ঝলক দেখা গেছে। যদিও এর আগে তেমন সুযোগ পাননি ব্যাট করার। তবে চার ওভারের নিশ্চয়তার সাথে তার এমন ব্যাটিং আসবে বোনাস হয়েই। এবারের আসরের একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও মৃত্যুঞ্জয়ের। বিশেষ করে ডেথ ওভারে স্নায়ু চাপ সামলে যেভাবে কয়েকটা ম্যাচে বল করেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
চার বোলার
সেরা একাদশে আছেন তিন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান রানা ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। মোস্তাফিজ খেলেছেন কুমিল্লার হয়ে। টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট নিয়ে। পাওয়ার প্লে আর ডেথ ওভারে দেখিয়েছেন নৈপুণ্য। বরিশালের রানা নজর কেড়েছেন ডেথ ওভারে। তার দুর্দান্ত স্পেলে ডেথ ওভারে দুটো ম্যাচ জিতেছিল বরিশাল। আসরে তার মোট উইকেট ১৫টি।
ডানহাতি পেসার শহীদুলও আছেন সেরা একাদশে। ৮ ম্যাচে খেলে ১৪ উইকেট তার। স্পিন বিভাগে সাকিব-মঈনের সঙ্গী কুমিল্লার তানভীর ইসলাম। তরুণ এই স্পিনার ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। টানা একই লেংথে বল করে আটকে রাখতে পারেন রানের চাকাও।