• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    কার্ডিফ থেকে চট্টগ্রাম:সাকিব-মাহমুদউল্লাহ যেভাবে ব্যাটন দিলেন আফিফ-মিরাজকে

    কার্ডিফ থেকে চট্টগ্রাম:সাকিব-মাহমুদউল্লাহ যেভাবে ব্যাটন দিলেন আফিফ-মিরাজকে    

    কার্ডিফ, ২০১৭। 

    চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ২৬৭ রান করল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর অনেকেই অফ করে দিয়েছিলেন টিভি পর্দা। মাহমুদউল্লাহ-সাকিব আল হাসানের জন্য লক্ষ্যটা অনেক দূরের পথ। এরপর যা হলো, সেটা মোটামুটি থ্রিলার সিনেমাতে হয়। সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ ঠিক করলেন, তারা অবিশ্বাস্য কিছু করবেন। দুজনের ২০০ ছাড়ানো জুটিতে লেখা হলো ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি মহাকাব্য। 

    পাঁচ বছর পর। ২০২২, চট্টগ্রাম। জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম।

    এবার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। খেলা অবশ্য নিজেদের মাঠে। আফগানিস্তান শুরুতে ব্যাট করে শেষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করল ২১৫। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে নেমেই বিপদে বাংলাদেশ। শুরুতেই লিটন নেই, এরপর একে একে তামিম, মুশফিক, সাকিব, ইয়াসির, মাহমুদউল্লাহ সবাই তাদের পথ ধরলেন। কার্ডিফের মতো এবারও অনেকে টিভি সেট অফ করে দিয়েছিলেন। সেদিন যারা আফসোস করেছেন, আজ বোধ হয় তারাও ভাবেননি তাদের আফসোস করতে হবে। ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ২১৬ রান ফুটো অক্সিজেন ট্যাংক নিয়ে এভারেস্টে ওঠার মতোই তো কঠিন। 

    সেই কঠিন কাজটা করলেন আফিফ-মিরাজ, সেদিন যেভাবে করেছিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। সেদিন ক্রিজে এসে সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ নিজেদের মধ্যে সেভাবে নাকি কথাই বলেননি। এই দুজন বাংলাদেশের বহু লড়াইয়ের সাক্ষী। একসঙ্গে না হলেও বাংলাদেশের অনেক জয়ের গল্প লিখেছিলেন আগে। দুজনের তাই কথা হয়েছিল ইথারে ইথারে। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ এসে বলেছিলেন, ‘আসলে আমরা কেউ কারও সঙ্গে কথাই বলিনি। আমরা আসলে যখন একসঙ্গে ব্যাট করি, তখন একসঙ্গে খুব একটা কথাই বলি না। এটাই আমাদের ধরন। আমি শুধু ওকে বলেছিলাম, ব্যাট করে যাই।’ সাকিবের একই সুর ছিল, ‘আমাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে। ব্যাট করার সময় কথা না বললেও চলে।' 

    আফিফ-মিরাজের পরিস্থিতি ছিল একটু অন্যরকম। দুজনেই বেশ কিছুদিন জাতীয় দলে খেলেছেন, মিরাজের তো অভিষেকের পর পাঁচ বছরের বেশি পার হয়ে গেছে। আফিফ সেই তুলনায় নবীন। তবে দুজনের গায়েই এখনো তরুণের তকমা আছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্মের বড় বিজ্ঞাপনও হয়ে আছেন দুজন। 

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএলে গত কিছুদিনে দুজনকে কয়েকবারই জুটি বাঁধতে হয়েছে। তবে আজকের পরিস্থিতি ছিল একটু অন্যরকম। রশিদ খান, মুজিব উর রেহমান, মোহাম্মদ নবীদের নিয়েই কথা হচ্ছিল। তবে সিলেবাসের বাইরের মতো আজ হন্তারক হয়ে দাঁড়ালেন ফাজালহক ফারুকী নামের একজন। মিরাজ ও আফিফ শুরুতে বেশ সাবলীল ছিলেন, আফিফ তো পুল করে একটি ছয়ও মেরেছিলেন। প্রথম ৫০ রান এসেছিল বেশ মসৃণভাবে, তবে তখনো অনেক পথ বাকি। 

    মজার ব্যাপার, মিরাজ পরে এসে জানাচ্ছেন, শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলেন। আফিফ এসে তাকে বলেছেন, 'মিরাজ ভাই, আমরা বল বাই বল চিন্তা করি। এরপর কী হয় দেখা যাবে।' মিরাজ বলছেন, আফিফের শুরুর ওই আত্মবিশ্বাস তার ব্যাটেও সঞ্চারিত হয়েছে। ভয়ের মতো সাহসও মাঝে মাঝে সংক্রামক হয়!

    তবে দলীয় রান ১০০-র কাছাকছি এসে দুজন আরও সতর্ক হয়ে খেলতে শুরু করেন। রশিদ ছিলেন বড় হুমকি, কিন্তু তার বলে কোনো ঝুঁকিই নেননি দুজন। আহমেদজাইয়ের ওপর বেশি চড়াও হয়েছিলেন, কিন্তু বাকিদের দেখেশুনে খেলতে হচ্ছিল। এভাবেই ১০০ পার হয়ে গেল জুটি, তখনই বোধ হয় স্বপ্নের আকাশে কিছুটা লালিমা। 

    আস্কিং রেট কখনোই অবশ্য ব্যাপার ছিল না। তবে দুজনের হিসেব ছিল একদম নির্ভুল। রশিদের ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়েছেন, এমনকি তার শেষ ওভারেও কোনো ঝুঁকি নেননি। মুজিবকেও একই রকম দেখেশুনে খেলেছেন। অপেক্ষা করেছেন, কবে আফগানদের তুরুপের তাস ফুরিয়ে যাবে। জানতেন, নতুন বলের জাদুটা ফারুকীর শেষে করা অত সহজ হবে না। শেষ পর্যন্ত সেই ফারুকীর ওভারেই তারা জয়টা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন, তার শেষ দুই ওভার থেকে ২৪ রান নিয়ে। ম্যাচ নিয়ে সকল অনিশ্চয়তা আসলে শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। ঠিক যেমন সাকিব আর মাহমুদউল্লাহও বাংলাদেশকে শুরুতে কাঁপিয়ে দেওয়া বোল্টের হুমকি পরে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

    সাকিব-মাহমুদউল্লাহ সেবার কাজটা শেষ করে আসতে পারেনি, যেটা পেরেছেন আফিফ-মিরাজ। তবে সাকিবরা অদৃশ্য একটা ব্যাটন রেখে এসেছেন আজ, যেটা হয়তো আফিফরা রেখে দিয়েছেন সামনে নতুন কারও জন্য।