• এফ এ কাপ
  • " />

     

    ডি ব্রুইন-মাহরেজহীন সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপের ফাইনালে লিভারপুল

    ডি ব্রুইন-মাহরেজহীন সিটিকে হারিয়ে এফএ কাপের ফাইনালে লিভারপুল    

    ম্যান সিটি ২:৩ লিভারপুল 


    ম্যানচেস্টার সিটির শুরুর একাদশ দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলেন বোধহয় ইয়ুর্গেন ক্লপ। রদ্রি, রিয়াদ মাহরেজ, কেভিন ডি ব্রুইনা সবাই বেঞ্চে। একাদশে নেই গোলকিপার এডারসনও। এই খর্বশক্তির ম্যান সিটি পূর্ণশক্তির লিভারপুলের কাছে প্রথমার্ধে পাত্তাই পায়নি। তবে দ্বিতীয়ার্ধের বীরত্বে ২-৩ গোলের ‘সম্মানজনক’ পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয় পেপ গার্দিওলার দল। 

    শনিবার ওয়েম্বলিতে সাদিও মানের জোড়া গোলে মৌসুমের দ্বিতীয় কাপ ফাইনালের টিকিট কেটেছে লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা জিইয়ে রেখেছে তাদের কোয়াড্রপল স্বপ্নও। 

    গত রোববারই লিগে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই ক্লাব। কিন্তু ইংল্যান্ডের শীর্ষ দুই দলের মৌসুমের দ্বিতীয় লড়াইটিও ড্র হয়। যে কারণে শুরুর আগেই একটু বাড়তি গুরুত্ব বহন করছিল এফএ কাপের সেমিফাইনালটি। এ বুঝি সিটি-লিভারপুলের সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ! 

    কিন্তু এই ম্যাচে ফাইনালের মানসিকতা নিয়ে নামেনি সিটি। সেটি বুঝা যায় তাদের শুরুর একাদশ দেখেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হওয়া সেই তুলকালাম দ্বিতীয় লেগ যে সিটির প্রাণশক্তি শুষে নিয়েছে, সেই ইঙ্গিত ম্যাচশেষেই দিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। এছাড়া দলে ফিটনেসজনিত সমস্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে এবং সামনের ব্যস্ত ফিক্সচারের কথা মাথায় রেখে এই ম্যাচ বিসর্জন দেওয়াটাকেই হয়তো যুক্তিযুক্ত বলে মেনে নিয়েছিলেন এই কাতালান। 

    এদিকে এই সেমিফাইনালকে সামনে রেখেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেনফিকার বিপক্ষে দলের বড় তারকাদের বসিয়ে রেখেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। কিন্তু সেই সাময়িক বিশ্রামের পরও ঠিক নিজেদের আগ্রাসী রূপটি দেখাতে পারেনি লিভারপুল। তবে গড়পড়তা খেলেই ১৭ মিনিটের মাঝে দুটি গোল দিয়ে ফেলে অলরেডরা। 

    ৯ মিনিটে কর্নার থেকে গোলের খাতা খুলেন ইব্রাহিমা কোনাতে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় ম্যাচে কর্নার থেকে গোল করলেন এই বিশালদেহী সেন্টারব্যাক। এরপর ১৭ মিনিটে সিটি গোলরক্ষক জ্যাক স্টেফানকে একরকম ট্যাকেল করেই গোল দেন সাদিও মানে। বল নিয়ে এডারসনসুলভ পায়ের কাজ দেখানোর চেষ্টা করা এই মার্কিনীকে দৌড়ে এসে স্লাইড দিয়ে পরাস্ত করেন মানে। ১৭ মিনিটেই যেন ম্যাচের শেষ দেখে ফেলে ওয়েম্বলি। 

    প্রথমার্ধের বাকি সময়ে ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা হলেও শেষ মিনিটে এসে দুর্দান্ত একটি গোল করে লিভারপুল। ৪৫ মিনিটে অলরেডদের হয়ে আক্রমণটি শুরু করেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ড। তার দূরপাল্লার ডায়াগোনাল পাস রিসিভ করেন লেফট উইংয়ে থাকা রবার্টসন। এই ফুলব্যাকের নেওয়া শট সিটি ব্লক করলেও তা গিয়ে পড়ে থিয়াগোর পায়ে। বক্সের সামনে সালাহর সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে থিয়াগো নিপুণ এক পাসে খুঁজে নেন বক্সের ডান পাশে একা দাঁড়িয়ে থাকা মানেকে। দেখেশুনে দুর্দান্ত এক ভলিতে আবার স্টেফানকে পরাস্ত করেন মানে। প্রথমার্ধ শেষ হয় ৩-০ ব্যবধানে। 

    সবাই প্রথমার্ধেই ম্যাচের শেষ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি চমক উপহার দেয় সিটি। ৪৭ মিনিটে রবার্টসনের একটি পাস কেটে দিয়ে আক্রমণে উঠেন সিটি অধিনায়ক ফার্নানদিনহো। তিনি রাইট উইংয়ে জেসুসকে খুঁজে নেন। লিভারপুলের রক্ষণকে কিমাকার অবস্থায় পেয়ে যাওয়া জেসুস বক্সে ঢুকে পাস দেন গ্রিলিসকে। আর গ্রিলিস বল জালে জড়িয়ে সিটির দর্শকদের দিনে প্রথমবারের মতো উদযাপন করার সুযোগ দেন। 

    দ্বিতীয়ার্ধে এরপর আরেকবার ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় সিটি। কিন্তু ৭০ মিনিটে অ্যালিসনকে একদম ফাঁকা পেয়েও সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি জেসুস। নিয়তি মেনে নিয়ে ম্যাচের শেষদিকে যখন মাঠ ছাড়া শুরু করে দিয়েছে সিটি দর্শকরা, তখনই এই সেমিফাইনাল আরেকটি বাঁক নেয়। ৯০ মিনিটে রাইট উইং দিয়ে লিভারপুলের বক্সে ঢুকে রবার্টসনকে পরাস্ত করে খুব কাছে থেকে শট নেন মাহরেজ। তার শট অ্যালিসন ফেরাতে সক্ষম হলেও ফিরতি বল গিয়ে পড়ে বার্নার্দো সিলভার পায়ে। আলতো শটে গোল দেন সিলভা। অকস্মাৎ জেগে উঠে পুরো ওয়েম্বলি। 

    যোগ করা সময়ের বাকি ৪ মিনিটে সিটি অল-আউট আক্রমণ করার চেষ্টা করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বরং পাল্টা আক্রমণের শিকার হয়। শেষদিকে প্রতি-আক্রমণে দুটি বড় সুযোগ তৈরি করে অলরেডরা। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি সালাহ ও ফিরমিনো। ৩-২ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ। 

    খর্বশক্তির দল নিয়েও এই ফলাফলে হয়তো সন্তুষ্টই থাকবেন গার্দিওলা। আর জয়ের চেয়ে বেশি কিছু চাননি ক্লপও। কারাবায়ো কাপ জেতার পর আগামী ১৪ই মে ওয়েম্বলিতে মৌসুমের দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে আসবে লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেমিতে উঠে যাওয়া ও লিগে সিটির এক পয়েন্টের ব্যবধানে থাকা ক্লপ বাহিনীর কোয়াড্রপলের স্বপ্ন এখনও বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে।