কিক অফের আগেঃ দুই ম্যাজিশিয়ানের লড়াই!
“সৈন্য সংখ্যা দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না, যে সৈন্য কাজে লাগাতে পারে জয়টা তাদের”- বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচটার সাথে যুদ্ধেরই তুলনা করলেন অ্যাটলেটিকো ম্যানেজার; সে যুদ্ধের দুই সেনাপতি দুই ডাগআউটের প্রতিনিধি। ডিয়েগো সিমিওনে ও পেপ গার্দিওলা ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে একে অপরের স্তুতিই গাইলেন। তাতে অবশ্য থাকল কথার ঝাঁঝও।
সিমিওনে অবশ্য ক’দিন আগেই বলেছিলেন লা লিগা নয়, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। অন্যদিকে বায়ার্ন কোচ পেপ গার্দিওলা পরের মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেয়ার আগে বায়ার্নে নিজের শেষ মৌসুমেও চাইছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে বিদায় নিতে। বুন্দেসলিগা জিততে দরকার আর একটি মাত্র জয়। গত ৩ মৌসুমে গার্দিওলার অধীনে বায়ার্নের সাফল্য ব্যর্থতাও নির্ভর করছে আসলে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের ওপরই। গার্দিওলাও বললেন তেমনটাই। “গত ৩ বছরে আমরা সেমিফাইনাল খেলেছি। সংবাদমাধ্যম বলছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারলে বায়ার্নে আমার সময়টাকে সাফল্যের বলা যাবে না। আমিও তাঁদের সাথে একমত”।
২০১১ সালে শেষবার গার্দিওলা মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। এরপর অবশ্য সিমিওনে বদলে দিয়েছেন অ্যাটলেটিকোকে। নতুন এই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এখন ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব। “অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, এখন তাঁদেরকে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার সাথে তুলনা করা হয়। আর এর পুরো কৃতিত্বটাই সিমওনের”- সংবাদ সম্মেলনে গার্দিওলা।
অন্যদিকে বার্সেলোনাকে বিদায় করে দিয়ে সেমিফাইনালে ওঠা অ্যাটলেটিকো ম্যানেজারও বায়ার্নের প্রশংসা করলেন ম্যাচের আগে।“ওদের দলে বেশ কিছু ভালো ফরোয়ার্ড রয়েছে। তাছাড়াও যে দল প্রতি ম্যাচেই নিজেদের কৌশল বদলায় তাঁদের বিপক্ষে জয়টা সবসময়ই কঠিন”- বলছিলেন সিমিওনে। এমন কঠিন ম্যাচেই তিনি দলে পাচ্ছেন ডিফেন্ডার ডিয়েগো গডিনকে। তবে এ মৌসুমে অসাধারণ ফর্মে থাকা গ্রিজম্যান ও গত ৬ ম্যাচে ৫ গোল করা ফার্নান্দো তোরেসকে নিয়ে বায়ার্নকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার আশা দেখতেই পারেন সিমিওনে।
এই প্রতিযোগিতায় ১৯৭৪ সালে সবশেষ এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, ফাইনালে। অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে সেবার শিরোপা জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। এই ম্যাচের আগেও ফিরে আসল সেই পুরনো ঘটনাই। তবে এই ম্যাচকে কোনভাবেই প্রতিশোধের সুযোগ হিসেবে দেখছেন না সিমিওনে। বরং প্রতিশোধের ব্যাপারে দর্শনটাই আলাদা এই আর্জেন্টাইনের। “জীবনে বা ফুটবলে- প্রতিশোধ বলে আসলে কিছুই নেই। যা আছে তা হল সুযোগ"- বায়ার্নের বিপক্ষে প্রতিশোধের কথাটা মানলেন না সিমিওনে।
এবারের চ্যাম্পিয়ন" লিগে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ গোল হজম করেছে সিমিওনের দল। ডিফেন্সও যে একটা শিল্প তা তো সিমিওনেই দেখিয়েছেন। অন্যদিকে গার্দিওলার বিখ্যাত সেই বল পায়ে রেখে আক্রমণ করার কৌশল। চ্যাম্পিয়নস লিগের এই আজকের সেমিফাইনাল তাই আসলে কোন খেলোয়াড়ের ওপর নয়, নির্ভর করছে এই দুই ম্যানেজারের ওপরই। কৌশলে যে যাকে টেক্কা দিতে পারবেন জয়টা আসবে তারই। গতরাতের মতো ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র অন্তত দেখতে চাইবে না কেউই।