• অন্যান্য খবর
  • " />

     

    যে মৃত্যু বদলে দিয়েছিল ফেদেরারকে

    যে মৃত্যু বদলে দিয়েছিল ফেদেরারকে    

    নব্বই দশকের শেষ বছরের কোনো একটা রোদেলা বিকেল। ইউরোপজুড়ে তখন পরিবর্তনের হাওয়া, কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের জীর্ণ প্রাসাদ থেকে একটু একটু করে খসে পড়ছে পলেস্তারা। হুড়মুড় করে গোটা প্রাসাদটা ভেঙে পড়া কেবল সময়ের ব্যাপার। সুইজারল্যন্ডের ছোট্ট মফস্বল মুনশেনস্টেইনে অবশ্য বদলের ঝাপটা লাগেনি খুব একটা। একদম নিরিবিলি এই জনপদে সবাই যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। তবে নয় বছরের ছেলেটা যেন আর সবার চেয়ে একটু বেশিই মন দিয়ে কাজ করছে।

    এই ছেলেটার মধ্যে যে কিছু একটা আছে, সেটা প্রায় বলাবলি করে ওর শিক্ষকেরা। বিশেষ করে ম্যাডেলিন বারলোশার একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত। বারলোশার পেশায় একজন টেনিস কোচ, স্থানীয় ওল্ড বয়জ টেনিস ক্লাবেই কাজ করেন। সেখানেই প্রথম দেখেছিলেন ছোট্ট রজারকে। কোর্টে যখন নিজের শরীরের চেয়ে বড় র‍্যাকেট নিয়ে ছেলেটা খেলত, বারশোলারের মনে হতো এই ছেলেটা অনেক অনেক দূর যাবে। তবে একটা দিক দিয়ে ছেলেটা একটু অন্যরকম ছিল, বাকিদের চেয়ে আলাদা।

    বারলোশারের মনে আছে, ক্লাবের কী যেন একটা টুর্নামেন্টে নাম লিখিয়েছিল রজারও। বয়সে বাকিরা রজারের চেয়ে বড় ছিল, তারপরও সে লড়ছিল বাকিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হলো ফাইনালের আগে। ছোট্ট রজার তো র‍্যাকেট ছুঁড়ে-টুড়ে, কেঁদেকেটে একেবারে একাকার। বারলোশার অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটু শান্ত করতে পারলেন ছেলেটাকে, কিন্তু তারপরও কান্না যেন থামতেই চায় না। হেরে যাবে, এই ব্যাপারটাই সে মেনে নিতে পারছিল না। সেটা ছিল দুঃখের কান্না। তবে কে জানত ১৩ বছর পর উইম্বলডনে ট্রফি নিয়ে ছোট্ট রজার আবার কাঁদবেন? এবার আর দুখের নয়, সেই অশ্রু নির্ভেজাল আনন্দের।

     

    রজার ফেদেরার জন্ম সুইজারল্যান্ডের বাসেলেই। জন্ম থেকে সুইস আর জার্মান ভাষায় একদম সড়গড়, ফ্রেঞ্চে অবশ্য ততটা নয়। বাবা রবার্ট ফেদেরার আর মা লিনেট ফেদেরার দুজনেই খেলাধূলার বেশ ভক্ত। রজারের হাতে ছোট হাতে থাকতেই হয় র‍্যাকেট বা বাস্কেটবল, আর নয়তো পায়ে বল। সকাল থেকে সামনের বারান্দায় একটা না একটা বল নিয়ে রজার খেলছেই। মা মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়ে যেতেন, সামলাতে না পেরে বকেও দিয়েছেন এক দুবার। কিন্তু খেলাধূলা যে ছেলের রক্তে, সেটা বাবা-মা দুজনেই খুব তাড়াতাড়ি বুঝেছিলেন। সেজন্য একটু বড় হতেই রবার্টকে ভর্তি করিয়ে দেন ওল্ড বয়জ ক্লাবে।

    সেখানেই ফেদেরারের টেনিসে প্রথম হাতেখড়ি, কোচ বারলোশার ছিলেন তার প্রথম শিক্ষকদের একজন। মজার ব্যাপার, ছোট্ট ফেদেরার তখন মাটির কোর্টেই খেলত বেশি, ঘাসে সেভাবে খেলার সুযোগ হয়নি। অথচ এই মাটিতেই একটা শিরোপা জেতার জন্য পরে কত দীর্ঘ অপেক্ষা কেটেছে! বারলোশার বাচ্চাদেরই দেখতেন, ফেদেরারের মতো টেনিসে অমন প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা খুব বেশি দেখেননি। বুঝতে পেরেছিলেন, এই ছেলেকে আরেকটু ভালো ঘষামাজা করা দরকার। সেই ওল্ড বয়স ক্লাবেই এরপর ফেদেরারকে সরাসরি নিজের অধীনে নিয়ে আসেন কোচ সেপিল ক্যাকোভস্কি। টেনিস খেলাটা তার কাছেই ভালোমতো শিখেছিলেন ফেদেরার।

     

    এখন বললে অবশ্য বিশ্বাস হতে চাইবে না, ফেদেরার তখন অল্পতেই কেঁদে আকুল হতেন। এখন যেমন একদম শান্ত তখন ঠিক সেরকম ছিলেন না। বাকি শিশুদের মতোই দারুণ চঞ্চল ছিলেন, কিন্তু হেরে গেলেই বাঁধত যত গোল। আম্পায়ারের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে তখন ফেদেরার কাঁদছে তো কাঁদছেই। অবশ্য আবেগটা একটু বেশি হলেও দুষ্টুমিটা কখনো বেশি লাগামছাড়া হয়নি। বারলোশারের মনে আছে, একবার শুধু ফেদেরার একটু মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছিল। ক্লাবের হয়ে একটা টুর্নামেন্টে নাম লিখিয়েছিল ফেদেরার, কিন্তু ম্যাচের দিন সে লাপাত্তা। খোঁজ, খোজ, খোঁজ; শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া গেল কোনো গাছের ডালে উঠে দিব্যি বসে আছে। ফেদেরারের দুষ্টুমির দৌড় আসলে এটুকুই। স্কুলেও বেশি একটা জ্বালাতেন না শিক্ষকদের। বেছে বেছে এমন একটা জায়গায় বসতেন, যেখান থেকে বাইরের প্রকৃতির বেশি কাছাকাছি থাকা যায়। তার স্কুলশিক্ষক থেরেসা ফিশবাশেরের মনে আছে, ফেদেরার প্রায়ই ক্লাস চলার সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতা আনমনা হয়ে যেতেন।

     

    আরও অনেক কিংবদন্তির মতো ফেদেরারের ক্ষেত্রেও একটা কথা খাটে- তিনি জাত স্পোর্টসম্যান। বাস্কেটবল খেলতেন, তবে টেনিসের পাশাপাশি সবচেয়ে ভালো খেলতেন ফুটবল। স্কুলের দলে খেলতেন নিয়মিত। তবে আরও অনেকের যা হয়, একটা সময়ে দুইটি খেলার যে কোনো একট বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চলে এলো সামনে। ফেদেরার টেনিসই বেছে নিয়েছিলেন। বড় হয়ে সেটার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ফুটবল খেলতে গিয়ে আমার মনে হতো আমার তো গোলরক্ষক, ডিফেন্ডার বা স্ট্রাইকারদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমি ভালো খেললেই তো শুধু হবে না। কিন্তু টেনিসে পুরো নিয়ন্ত্রণ আমার, এখানে আমি যা চাইব সেভাবেই হবে।’  অবশ্য ফুটবলের প্রতি টানটা এখনও আছে। এফসি বাসেল ছোটবেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব থাকলেও বড় হয়ে তাদের ভক্ত বনে গেছেন ফেদেরার। সুযোগ পেলে তাদের ম্যাচও মিস করেন না খুব একটা।

     

    তবে এই ১২ বছরের আগেই ফেদেরারের জীবনে আরও দুয়েকটি চমৎকার ঘটনা ঘটে যায়। বাসেলে বড় বেশ কিছু টুর্নামেন্ট হতো, সুইস ইনডোর টেনিসের ফাইনালও ছিল সেখানে। ১৯৯৩ সালের সেই ফাইনালে খেলেছিলেন মাইকেল স্টিচ ও বরিস বেকার। ফেদেরার সেই ম্যাচে বলবয় ছিলেন, মনে মনে বেকারকে সমর্থনও করছিলেন। ছোটবেলা থেকে ফেদেরার যে বেকারের ভক্ত! তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা সেদিন জিততে পারনেনি বেকার। তবে জয় পেয়ে স্টিচ টুর্নামেন্টের রীতি অনুযায়ী পদক দেন বলবয়দেরও। সেই বলবয়দের একজন ছিলেন ফেদেরার। ততদিনে অবশ্য টেনিস মোটামুটি তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে গেছে। কোচ আর শিক্ষকদেরও বলেছেন, একদিন আমি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হব।

     

     

    ১৪ বছর বয়সেই অবশ্য বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন নিজে নিজেই। লুসানের ইকুবলেন্সে সুইস ন্যাশনাল সেন্টারে ভর্তি হওয়ার একটা সুযোগ ছিল ফেদেরারের সামনে। বাবা-মাকে না জানিয়েই সেটা লুফে নেন। বাবা-মামা দুজনেই তাকে স্বাধীনভাবে বড় হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন, জানার পরও কেউ তাই বেশি আপত্তি করেননি। তারপরও ছেলে দূরে চলে যাবে, সেটা মেনে নিতে পারছিলেন না মা লিনেট। ফেদেরার অবশ্য সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। নিজের ওপর ভরসা করার শুরুটা তখন থেকেই, পরে কোর্টে এই আত্মবিশ্বাসেই একে একে টপকে গেছেন অনেক অনেক সিঁড়ি।

    তবে ইকুবলেন্সে গিয়ে খুব যে ভালো সময় ফেদেরারের গেছে তা নয়। সেখানে ফ্রেঞ্চভাষীদের আধিক্য ছিল, ফেদেরার আবার তখন ফ্রেঞ্চে খুব ভালো ছিলেন না। তার ভাঙা ভাঙা ফ্রেঞ্চ নিয়ে একটু হাসাহাসি হতো, আবার সবার সঙ্গে সেরকম বন্ধুতাও হয়নি। মেজাজও হারিয়ে ফেলার ঘটনা হয়েছিল। একবার তো র‍্যাকেট ছুঁড়ে কোর্টের পেছনে পর্দায় ফুটো করে ফেলেছিলেন। সেটার জন্য ভোর সাতটায় উঠে কোর্ট পরিষ্কার করার শাস্তি পেতে হয়েছিল ফেদেরারকে।

     এসব পরিস্থিতিতে অনেক সময় যা হয়, র‍্যাকেটই হয়ে ওঠে ফেদেরারের পরম বন্ধু। ফেদেরার টেনিসেই খুঁজেছিলেন আশ্রয়, সেখানে উন্নতি করছিলেন প্রতিদিন। মা লিনেট পরে বলেছেন, ওই সময়েই একা বড় হওয়া মানসিকভাবে ফেদেরারকে অনেক বেশি শক্ত করেছিল। সেখানেই কোচ পিটার কার্টারের সান্নিধ্যে আসেন ফেদেরার। এই কার্টারই ফেদেরারকে শিখিয়েছিলেন, কোর্টে ভালো করতে হলে নিজের আবেগকে নিয়ন্রণ করাও শিখতে হবে। দুই বছর ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টারে ছিলেন ফেদেরার, সেখান থেকে বের হয়েছেন জুনিয়র টেনিসে বিশ্বসেরা হয়ে।

     

    কার্টারকে দুই বছরের জন্য কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন ফেদেরার। তবে তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল অস্ট্রেলিয়ান এই কোচের, সেটা বলেছেন অনেকবার। কার্টারই ফেদেরারকে শিখিয়েছিলেন টেনিসের বেশ কিছু টেকনিল্যাল খুঁটিনাটি। আজ ফেদেরারের এক হাতের যে সম্মোহনী ব্যাকহ্যান্ড বা প্রায় গজফিতে দিয়ে মাপা যে দুর্দান্ত ফোরহ্যান্ড, তাতে কার্টারের অবদান ফেদেরার অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আলাদা করে। তবে ফেদেরারকে এই অস্ট্রেলিয়ান বদলে দিয়েছিলেন অন্যভাবে, যেটা আসলে ফেদেরার জানিয়েছেন মাত্র এই বছর এসে।

    টেকনিক্যালি তো বটেই, ফেদেরারকে মানসিকভাবেও সব সময় চাঙা রাখতেন কার্টার। এই অস্ট্রেলিয়ান টেনিস খেলার জন্যই এসেছিলেন সুইজারল্যান্ডে, সেখান থেকে পাকেচক্রে জড়িয়ে পরেন কোচিংয়ে। বয়সের খুব বেশি ছিল না ফেদেরারের সঙ্গে, গুরু-শিষ্য থেকে একরকম বন্ধুও হয়ে যেতে তাই দেরি হয়নি। কার্টারের খুব কাছের এক বন্ধু ড্যারেন কাহিল। সেই কাহিল কোচিং করাতেন সিডনিতে। একদিন কার্টার বলছিলেন, ‘শোন, আমি কিন্তু দারুণ একটা রত্ন পেয়ে গেছি। ছেলেটার নাম রজার ফেদেরার। একদিন অনেক বড় খেলোয়াড় হবে ও।’ কাহিলও অন্য পাশ থেকে ফোনে বললেন, ‘আমিও কিন্তু বন্ধু একটা হীরের খোঁজ পেয়েছি। এই ছেলেটাও একদিন বড় কিছু হবে।’ কাহিল যার কথা বলছিলেন, সেই লেইটন হেউইটকে ধরা হয় টেনিসের সবচেয়ে প্রতিভাবানদের একজন। তবে যতটা সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন, ততটা সৌরভ ছড়াতে পারেননি।

    যাকগে, সে অন্য গল্প। ন্যাশনাল একাডেমি থেকে চলে এলেও কার্টারের সঙ্গে যোগাযোগটা বরাবরই ছিল। ফোনে প্রায়ই গুরুর কাছ থেকে ছোটোখাটো টোটকা নিতেন, কোথাও সমস্যা হলে নিতেন পরামর্শ। এর মধ্যে ফেদেরার জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, ১৯৯৯ সালে শীর্ষ ১০০র মধ্যেও ঢুকে গেছেন। খুব বড় কিছু অবশ্য করতে পারছিলেন না, সে বছরই ফ্রেঞ্চ আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলে বিদায় নিতে হয় প্রথম রাউন্ড থেকে। মেজাজটা তখনও ঠিক পুরোপুরি বশে আনতে পারেননি, সেটা নিয়ে কার্টার তাকে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। ২০০০ সালে মার্শেই ওপেনের ফাইনালে ওঠেন, জিততে পারেননি। ২০০১ সালে মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে সুইজারল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন হফম্যান কাপ। হিঙ্গিস থেকে সেবার অনেক কিছু শিখেছিলেন। তবে বিশ্বকে প্রথম চমকে দেওয়ার শুরু সেবার উইম্বলডন থেকে।

    পিটার সাম্প্রাস তখন ঘাসের অবিসংবাদিত রাজা। ২০০১ সালের আগের পাঁচ বছর কখনো উইম্বলডনে হারেননি পিস্তল পিট। সেবার চতুর্থ রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সের লম্বাচুলো একটা ছেলের। কোয়ার্টার ফাইনালে কে যাবে, সেটা নিয়ে খুব বেশি সংশয়ের কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু ১৯ বছর বয়সী ফেদেরার চমকে দিয়েছিলেন সাম্প্রাসকে, পাঁচ সেটের শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে জিতে শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। যদিও সেখানে টিম হেনমেনের কাছে হেরে স্বপ্নযাত্রাটা ভেস্তে যেতে বেশি সময় লাগেনি। তবে ফেদেরার নামের যে একজন এসে গেছেন, সেটা জেনেছে টেনিসবিশ্ব। আর টিভিসেটের সামনে বসে সেটা দেখেছেন কোচ কার্টার, তৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল তার বুক।

    পরের বছর ২০০২ সালে ফেদেরার একটা টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলেন টরন্টোতে। কার্টার তখন সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুন করতে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে হলো ঘটনাটা, ভয়ংকর এক দুর্ঘটনায় মারা যান কার্টার। ফেদেরারের কাছে মাঝরাতে ফোন আসে, কার্টার আর নেই। প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেয়েছিলেন, টরন্টোর রাস্তায় নেমে এরপর উদভ্রান্তের মতো হেঁটেছেন অনেক সময়। একটু সম্বিত ফিরে পেলে ঠিক করেছেন, কার্টারের আশা তাকে পূরণ করতেই হবে। এই ঘটনা চেপে রেখেছিলেন অনেক দিন। এই বছর ইএসপিএনে একটা সাক্ষাৎকারে কার্টারকে নিয়ে কথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফেদেরার। তার জীবনে এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের প্রভাব কতখানি, সেটা বলতে গিয়ে ধরে রাখতে পারেননি আবেগ। কোচ মারা যাওয়ার পরেই ঠিক করেছিলেন, নিজের যেটুকু প্রতিভা আছে সেটা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। এরপর থেকেই আসলে বদলে যায় তার জীবন। ২০০৩ সালে ফেদেরার প্রথমবারের মতো জেতেন উইম্বলডন, কিন্তু কার্টার সেটা দেখে যেতে পারেননি। প্রয়াত কোচের পরিবারের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগটা আছে ফেদেরারের, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এলেই কার্টারের বাবা-মার জন্য নিয়ম করে পাঠিয়ে দেন টিকিট। এই কার্টারের জন্যই আজকের ফেদেরার হয়েছেন, সেটা বলেছেন অনেকবারই। কৈশোরের সেই আবেগী, মেজাজি ছেলেটা থেকে আজকের ধীরস্থির, শান্ত ফেদেরার হয়ে ওঠার পেছনেও কার্টারের কৃতিত্ব তাই অনেক।

    চ্যাম্পিয়নদের হাসিমুখের পেছনে এরকম অনেক গল্প থাকে, যেটা অনেকেরই অজানা। এই গল্গগুলোই তাদের প্রেরণা দেয়, এই শোকই তাদের শক্তি ফিরে আসে বারে বারে।

    [রজার ফেদেরারকে নিয়ে এই লেখাটি প্যাভিলিয়ন সম্পাদক অম্লান মোসতাকিম হোসেনের বই 'নায়কদের নেপথ্যের' অংশবিশেষ। অনলাইনে অর্ডার দেওয়া যাবে এখানে  বা এখানে]