• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড: শক্তি, দুর্বলতা, সম্ভাবনা

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড: শক্তি, দুর্বলতা, সম্ভাবনা    

    ৫ বার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পর গত বছর অবশেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই দলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবারও থাকছেন অধিনায়কের ভূমিকায়। ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও দেশের মাটিতে আরও একবার বিশ্বকাপ হাতে তোলার স্বপ্নেই ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়েছেন বিষাদভরা এক বুক নিয়ে। সেই স্বপ্নে ফিঞ্চের সারথী এবার গত বিশ্বকাপ দলের প্রায় সবাই। ১৫ জনের স্কোয়াডে গত বিশ্বকাপের সাথে এবার পার্থক্য একটাই - মিচেল সোয়েপসনের জায়গায় এখনও অভিষেক না হওয়া টিম ডেভিড। অস্ট্রেলিয়া কি পারবে এবারও বিশ্বকাপের সুমধুর স্বাদ নিতে? ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া কেমন করতে পারে তার একটা ধারণা পেতেই চলুন ঘুরে আসা যাক তাদের স্কোয়াড, তাদের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স, স্কোয়াডের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা।


    ব্যাটার: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, টিম ডেভিড

    অল রাউন্ডার: মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোইনিস, অ্যাশটন অ্যাগার

    উইকেটকিপার: ম্যাথিউ ওয়েড, জশ ইংলিস

    বোলার: জশ হেজলউড, অ্যাডাম জাম্পা, প্যাট কামিন্স (সহ অধিনায়ক), মিচেল স্টার্ক, কেন রিচার্ডসন

     

    ব্যাটিং পরিসংখ্যান

    ফর্ম পড়তি হলেও গত ২ বছরে এই ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফিঞ্চ। এই সময়ে সর্বোচ্চ ৫ ফিফটি সহ ৭৪১ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। রান সর্বোচ্চ হলেও ১২৩.৯১ স্ট্রাইক রেটটা ঠিক ফিঞ্চের নামের প্রতি সুবিচার করে না। তবে তার ওপেনিং সঙ্গী ডেভিড ওয়ার্নারকে বেশিরভাগ ম্যাচেই উইকেটের অন্য প্রান্তে পাননি ফিঞ্চ। ফিঞ্চের ২৮ ম্যাচের বিপরীতে ওয়ার্নার খেলেছেন ১০ ম্যাচ; যেখানে ৪ ফিফটিতে ৪১৯ রান করেছেন তিনি। আইপিএলে বাদ পড়া, ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল - এসব পেছনে ফেলে বাঁহাতি এই ওপেনার দেশের জার্সিতে জ্বলে উঠতে ভুল করেননি এই স্বল্প সময়েই। টুর্নামেন্টে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এনে দিতে রেখেছেন অগ্রণী ভুমিকা। তার ৫২.৩৭ গড় ও ১৪৭.৫৩ গড় প্রমাণ করে আগামী বিশ্বকাপেও তার ব্যাটে আগুন ঝরবে। অস্ট্রেলিয়ার স্পেশালিষ্ট ব্যাটারের আরেকটি জায়গা নিয়েই অবশ্য যত চিন্তা। তবে একজন টপ অর্ডার ব্যাটার, আরেকজন ফিনিশার। কথা হচ্ছে স্টিভ স্মিথ আর টিম ডেভিডকে নিয়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ডেভিডের জন্য স্মিথের জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ কি না। গত দুই বছরে ২৪ গড়ে ১৫ ম্যাচে ২১৬ রান করেছেন স্মিথ; তবে চিন্তার জায়গাটা হচ্ছে তার ১১০.৭৬ স্ট্রাইক রেট। সেখানে টিম ডেভিড যেন পুরো অন্য মেরুর। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখনও অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ডেভিড গেল বিগ ব্যাশেও ২১৮ রান করেছেন ১৬৩.৯ স্ট্রাইক রেটে, পিএসএলে ২৭৮ রান করেছেন ১৯৪.৯ স্ট্রাইক রেটে, ২০২১ সিপিএলে ২৮২ রান করেছেন ১৪৬.১১ স্ট্রাইক রেটে, আইপিএলে ২১৬.২৭ স্ট্রাইক রেটে ৮ ম্যাচেই করেছেন ১৮৬ রান। ডেভিডের স্ট্রাইক রেট দেখেই বুঝতে পারছেন তাকে নিয়ে কেন এত কথা; কেন রিকি পন্টিং বলেছেন এবারের দলে ডেভিড ২০০৩ বিশ্বকাপের অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস হয়ে উঠতে পারেন সুযোগ পেলে। এর আগে সিঙ্গাপুরের হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তুলেছেন ঝড়, ৫৫৮ রান করেছেন  ১৫৮.৫২ স্ট্রাইক রেটে। পরিসংখ্যানটা তাই ডেভিডের পক্ষে জোর রব তুলছে।

    অলরাউন্ডার পরিসংখ্যান

    অজিদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা বোধহয় তাদের অলরাউন্ডাররা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শ, মার্কাস স্টোইনিসের মত দুঁদে অলরাউন্ডাররা নিজেদের দিনে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। গত দুই বছরে কমপক্ষে ১০০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে অজিদের হয়ে মার্কাস স্টোইনিসের স্ট্রাইক রেট সর্বোচ্চ (১৫৩.১২)। প্রায়ই ফিনিশারের ভুমিকাইয় থাকা স্টোইনিসের সাথে কিছুটা একই ভুমিকায় থাকা ম্যাক্সওয়েলের স্ট্রাইক রেট গত দুই বছরে তার তুলনায় ছিল কিছুটা কম (১৩৬.৪৫); তবে ৪০৮ রান করে এই সময়ে তিনি দলের ৫ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।  আর গত বিশ্বকাপে তিনে ব্যাট করা মার্শ তো এই সময়ে দলের ২য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৩৫.৪৪ গড়ে ৬৩৮ রান)। সেই সাথে মার্শ ও ম্যাক্সওয়েলের ৭.৬২ ও ৭.৬ ইকোনমি রেটে ৮টি করে উইকেট প্রমাণ করে দলের প্রয়োজনে রান আটকানো বা উইকেট নেওয়া - দুটোতেই তারা সমান পারদর্শী। স্টোইনিসও ৮.১১ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেটও ডেথ ওভারে প্রায়শই নিজেকে মেলে ধরেছেন। আরেক অল রাউন্ডার অ্যাশটন অ্যাগারের  ইকোনমি রেট তো দলের পক্ষে কমপক্ষে ১০ উইকেট নেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বনিম্ন (৫.৯৭)।

    উইকেটকিপার পরিসংখ্যান

    দুই উইকেট কিপারের মধ্যে বিশ্বকাপের পরেই অবসরের ঘোষণা দেওয়া ম্যাথিউ ওয়েডই হয়ত দায়িত্ব নিবেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে তার সেই অবিশ্বাস্য ক্যামিওর কথা তো সহজে ভোলার নেই। সেই সাথে ১৩৮.২২ স্ট্রাইক রেটে ৫৪৬ রান করে তিনি গত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ার ৩য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৭ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ১৪৪.৩৫ স্ট্রাইক রেটে ১৭৯ রান করে যদিও জশ ইংলিসও জানাচ্ছেন দলে থাকার জোর দাবী।

    বোলার পরিসংখ্যান

    গত বিশ্বকাপের মুল পর্বে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন অ্যাডাম জাম্পা। গত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ার ২য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এই লেগ স্পিনার। ২২ ম্যাচে ৭.০৩ ইকোনমি রেটে ৩৫ উইকেট নেওয়া জাম্পার দিকে এই বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে থাকবে উইকেটের জন্য তা তো বোলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে তাদের মুল বোলার হয়ে উঠতে পারেন জশ হেজলউড। গত দুই বছরে অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি; ৬.৪৯ ইকোনমি রেটে ৩৭ উইকেট নেওয়া হেজলউডের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং তাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গাগুলোর একটি। দলে থাকা কেন রিচার্ডসন ও মিচেল স্টার্ক এই সময়ে যথাক্রমে দলের ৩য় ও ৪র্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। তবে সহ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স গত দুই বছরে খেলেছেন মোটে ৯ ম্যাচ, যার বেশিরভাগই আবার গত বিশ্বকাপেই। কামিন্সের ম্যাচের অভাব নিয়ে যদিও অস্ট্রেলিয়া তেমন একটা বিচলিত নয়।

    পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সামর্থ্য

    ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করার দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া গত দুই বছরে ৬ষ্ঠ। এই সময়ে তারা পাওয়ারপ্লেতে রান তুলেছে ৭.৭৮  রান রেটে, ১২২.৪ স্ট্রাইক রেটে। ডেথ ওভারে রান তোলার দিক দিয়ে শীর্ষ স্থানীয় হলেও একেবারেই ফেলনা নয় অস্ট্রেলিয়া। এই সময়ে ডেথ ওভারে ১৪৭.৮১ স্ট্রাইক রেটে ৯.৩৮ রান রেটে রান তুলেছে তারা।

    বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি পাওয়ারপ্লে বোলিং। গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ারপ্লেতে ২য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হেজলউড। পাওয়ারপ্লেতে ২২ ইনিংসে বল করে মাত্র ৫.১ ইকোনমি রেটে তিনি নিয়েছেন ১৯ উইকেট। সেই সাথে এই সময়ে সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতেও পাওয়ারপ্লেতে ২য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। সেই সাথে ডেথ ওভারেও অস্ট্রেলিয়া কম যায় না। গত দুই বছরে ডেথ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ইকোনমি রেট ছিল ৯.৯২; সেই সাথে রান গোনার দিক দিয়ে তারা ছিল ৯ম।

     

    দুর্বলতা

    অস্ট্রেলিয়ার সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে তাদের মিডল অর্ডার ব্যাটিং। টপ অর্ডারে ঝড় না তুললে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার মিডল অর্ডার বড় রান তোলার ক্ষেত্রে খুব একটা পারদর্শী হয়ত নয়। ওয়েড, স্টোইনিস, ম্যাক্সওয়েল তিন জনেরই ওপেন করে সাফল্য রয়েছে। ইনিংস লম্বা করার তরিকাটা তাদের জানা হলেও সেটার জন্য তারা সময়ও নেন। সেক্ষেত্রে সব জায়গায় আক্রমণের মন্ত্র অস্ট্রেলিয়া নিতে পারে। যেই মন্ত্রের সাথে স্মিথের খেলায় রয়েছে অসামঞ্জস্য। চারে ম্যাক্সওয়েলকে খেলিয়ে টিম ডেভিডকে ফিনিশার হিসেবে খেলানোটা হয়ত অজিদের জন্য হতে পারে ধূর্ত কোনও কৌশল।

    বোলিংয়ে পাওয়ারপ্লে, ডেথ ওভার দুই জায়গায়ই জশ হেজলউড অত্যন্ত সফল। সেই সাথে মিডল ওভারগুলোতে জাম্পার জুড়ি মেলা ভার। বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে চিন্তার জায়গা তাদের ডেথ বোলিং। এক সময়ে ডেথ ওভারের খুনে বোলার স্টার্ককয়ে গত দুই বছরে ডেথ ওভারে বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে। এই সময়ে ১৩ ইনিংসে তিনি উইকেট পেয়েছেন ১০টি, তবে রান দিয়েছেন ১০.৬৫ ইকোনমি রেটে। কামিন্স এই সময়ে ৯ ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছেন ৯ ইকোনমি রেটে। তবে দলে যার জায়গা অনেকটাই অনিশ্চিত সেই কেন রিচার্ডসন কিন্তু যথেষ্ট সফল। ১১ ইনিংসে তিনি পেয়েছে ৯ উইকেট, তবে রান গুনেছেন ৮.২৫ ইকোনমি রেটে। ডেথ বোলিংয়ের কথা মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়া তাই ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতেই পারে, যেহেতু তাদের পাওয়ারপ্লে সামলানোর জন্য রয়েছে বিশ্বমানের পেসার।