'লিটন শো'য়ের পর সোহান-তাসকিনের প্রাণপন চেষ্টাতেও হৃদয়ভাঙা হার
সুপার ১২, অ্যাডিলেড (টস- বাংলাদেশ/ বোলিং)
ভারত- ১৮৪/৬, ২০ ওভার (কোহলি ৬৪*, রাহুল ৫০, হাসান ৩/৪৭, তাসকিন ০/১৫)
বাংলাদেশ- ১৪৫/৬, ১৬ ওভার (লিটন ৬০, নুরুল ২৫, আর্শদীপ ২/৩৮)
ফলঃ ভারত ৫ রানে জয়ী (ডি/এল মেথডে)
অধিনায়ক সাকিবের চোখে বাংলাদেশের ‘ভারত জয়’ আপসেট, কিন্ত বাংলাদেশি সমর্থকেরা তা ভিন্নভাবেই দেখে। হোক না তা আবেগের জোরেই! লিটন দাসকেও যেন আজ পেয়ে বসেছিল সেই আবেগে। ভয়ডরহীন ‘অবিশ্বাস্য’ ব্যাটিংয়ে ভারতকে আতঙ্কেই ফেলে দেন। কিন্ত শেষটা শুরুর মতো হয়নি বলে আরেকবার আফসোসের আগুনেই পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। ব্যাটিংয়ে যেমন দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ, বোলিংয়েও তেমন। কিন্ত বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েরও শেষটা হয়েছে করুণ। বৃষ্টিতে ছোট হয়ে যাওয়া ম্যাচের মাঝের সময়টায় ৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। সোহান-তাসকিনের ব্যাটে শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচে টিকে থাকলেও বাংলাদেশ হেরে গেছে ৫ রানে।
বাংলাদেশের একজন ব্যাটার ব্যাট করছেন, ভারত তাকে থামানোর পথ খুঁজতেই হয়রান- ম্যাচের আগে এমন কথা কেউ বললে তাকে ‘আবেগী’ বিশেষণই পেতে হতো। কিন্ত কে জানত, বাংলাদেশের সবচেয়ে ভোগান্তির জায়গা যে ওপেনিং, সেটিই ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর্শদীপ-ভুবনেশ্বর-শামি, কেউ বাকি থাকেননি। সবার ওপর দিয়েই স্রেফ ঝড় বইয়ে দিয়েছেন লিটন। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে মাত্র ২১ বলেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন। যার ফলে অন্যপ্রান্তে ১২ বলে ৪ রানে শান্ত ধুঁকলেও বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে ৬০ রান তুলে ফেলে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশ তখন ঝলমলে হলেও অ্যাডিলেডে বৃষ্টি নেমে আসে সাত ওভার শেষে। বাংলাদেশের চওড়া হাসি তাতে আরও চওড়া হয়, খেলা ওখানেই থেমে গেলে যে বাংলাদেশেরই হত জয়! সাত ওভার শেষে বাংলাদেশ ডিএল মেথডে এগিয়ে ছিল ১৭ রানে। খেলা আবার শুরু হলে ১৬ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১। বৃষ্টিতে লিটনের ছন্দে কোন ছেদ পড়ে কি না, সে শঙ্কা ছিল। কিন্ত ৯ ওভারে ৮৫ রানের প্রয়োজনে নামার দুই বল হতে না হতেই লিটন আউট! রান আউট! দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় ভারসাম্য হারিয়ে পিছলে পড়তে পড়তেও পতন ঠেকান লিটন। কিন্তু পপিং ক্রিজে পৌঁছার আগেই রাহুলের দারুণ এক থ্রোতে রান আউট হয়ে নিজের উইকেট পতনটা ঠেকাতে পারেননি তিনি।
২৭ বলে ৬০ রানে লিটনের ফেরার পর ছন্দহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ওভারে সাকিব-শান্ত মিলে ১৮ রান আনার পর ১০ম ওভারে শামির তিন রানের ওভারে বিদায় নেন শান্ত। ১২তম ওভারে আফিফের পর সাকিবও ফিরে যান। ১১ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকেই পড়ে বাংলাদেশ। তবে যে জয় কিছুক্ষণ আগেও দেখছিলেন, সেটি সহজে হাতছাড়া করতে আপত্তি ছিল নুরুল-তাসকিনের। খেলাটা তারা শেষ ওভারে নিয়ে যান ২০ রানের সমীকরণে। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মেরে নুরুল আবার জাগিয়ে তুলেন আশা, কিন্ত আর্শদীপের দুর্দান্ত ইয়র্কারে পরের দুই বলে দুই রান এলে হিসেব চলে আসে বাউন্ডারিতে। ২ বলে ১১ রানের প্রয়োজনে নুরুল একটা চারের পর শেষ বলে এক রানই করতে পারেন কেবল।
বাংলাদেশ যেমন শুরুর আশায় ছিল, তাসকিনের হাত ধরে তেমন শুরুই পেয়েছিল। দারুণ সুইংয়ের প্রদর্শনীতে প্রথম ওভারে ১ রান দিয়ে সূচনা করেন তাসকিন। তার পরের ওভারেই ক্যাচ উঠে, কিন্ত হাসানের হাত থেকে ফসকে যায় রোহিতের ক্যাচ! ভাগ্য ভালো, রোহিত বিধ্বংসী হওয়ার আগেই ২ রানে ফিরে যান হাসানের বলেই আউট হয়ে। আঁটসাঁট লাইনে দুর্দান্ত বোলিং করে যাওয়া তাসকিনের স্পেল সাকিব শেষ করে দেন টানা বোলিং করিয়েই। ভারত পাওয়ারপ্লেতে ৩৭ রানের বেশি আনতে পারেনি তাই।
ফর্ম খুঁজে ফেরা রাহুল সাবধানে ব্যাটিং করতে থাকেন, কোহলিও ক্রিজে এসে সময় নেন। ৮ ওভারে শেষে ভারতের স্কোর তাই ৫২ রানই থাকে। কিন্ত এরপরে এক ওভারেই সবকিছু বদলে যায়! শরিফুলের সে ওভারে দুটি করে ছয় ও চারে রাহুল-কোহলি আনেন মোট ২৪ রান। একসময়ে ২৪ বলে ২৬ রানে ছিলেন রাহুল, পরের ৭ বলে ২৬ রান এনে ৩১ বলেই পৌঁছে যান ফিফটিতে। তবে ফিফটি করেই রাহুল আউট হয়ে গেলে সূর্যকুমারের আবির্ভাব ঘটে। এবং বাংলাদেশিদের যে ভয় ছিল, সেটিই ঘটে। সূর্য এসে একের পর এক বাউন্ডারি খুঁজে নিলে ভারতের রানের গাড়ির গতি বেড়েই চলে! যদিও একটা সুযোগ এসেছিল শুরুতেই সূর্যকুমারকে ফিরিয়ে দেওয়ার, ফাইন লেগে থাকা মোস্তাফিজ সুযোগ লুফে নিতে পারেননি।
যদিও ১৫ বলে ৩০ রানেই থেমে যায় সূর্যকুমারের ইনিংস। হার্দিকও ৫ রানেই ফিরে যান প্যাভিলিয়নে, কিন্ত ওদিকে বলপ্রতি রানে খেলতে থাকা কোহলি পরে বিধ্বংসী রুপে চলে যান। ৩৭ বলে পঞ্চাশ পেরিয়ে যান। ১৪ ওভারে ১১৯ রানে থাকা ভারত ১৭ ওভারেই কোহলির ফিফটির সঙ্গে দলীয় দেড়শো ছুঁয়ে ফেলে। মোস্তাফিজ এসে ৭ রানে ১৮তম ওভার শেষ করলেও হাসান ও শরিফুলের পরের দুই ওভার মিলে ২৭ রান এসে যায়, ভারত তাই গড়ে ফেলে ১৮৪ রানের বড় পুঁজি। বড় রানের পুঁজি থাকলেও ভারতকে বড়সড় দুশ্চিন্তার মাঝেই রেখেছিলেন লিটন-নুরুল! আর সেটি বাংলাদেশের আফসোসটাই বাড়িয়েছে কেবল!