• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    বিশ্বকাপ টাইব্রেকারে পেনাল্টি শুটআউট কীভাবে এলো?

    বিশ্বকাপ টাইব্রেকারে পেনাল্টি শুটআউট কীভাবে এলো?    

    টাইব্রেকার- কথাটার মানে কোনো ম্যাচ যদি সমতায় থাকে সেই টাই ভঙ্গ করার একটা উপায়। বিশ্ব ফুটবলে পেনাল্টি শুটআউটই এখন টাইব্রেকার- হোক সেটা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ঘরোয়া লিগ বা বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে। নির্ধারিত সময়, অতিরিক্ত সময়ের খেলা ড্র হলেই এই পেনাল্টি শুটআউটেই হয় নিষ্পত্তি। প্রশ্ন হচ্ছে এই পেনাল্টি শুটআউট কীভাবে এলো?

     

    ইউরোপিয়ান ফুটবলে বহু আগে থেকে চল আছে পেনাল্টি শুটআউটের। পঞ্চাশের দশকে কোপা ইতালিয়ায় ব্যবহার করা হতো এই পদ্ধতি। তবে সেটার ফরম্যাট ছিল ভিন্ন, ইউরোপের অন্য জায়গায় তা স্বীকৃতি পায়নি। তবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চালু হতে সময় লেগে যায়। একটা সময় টুর্নামেন্টে দুই দলের খেলা ড্র হলে টসে ঠিক করা হতো। ১৯৬৮ ইউরোতেও সেমিফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ড্র করে কয়েন টসে ফাইনালে উঠেছিল ইতালি। 

    তবে আধুনিক পেনাল্টি শুটআউটের শুরু জোসেফ ডাগান নামে এক ইসরায়েলি ভদ্রলোকের মাধ্যমে। ১৯৬৮ অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালে বুলগেরিয়ার কাছে কয়েন টসে হেরে যায় ইসরায়েল। তখনই ক্রীড়া সাংবাদিক ডাগান পেনাল্টি শুটআউটের ধারণা দেন ইসরায়েলি ফেডারেশনকে। তখনই ফিফার আইন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইএফএবি এই প্রস্তাব তোলে টেকনিক্যাল সমিতিতে। কিছু সংশোধনী দিয়ে সেই প্রস্তাব পাসও হয়। 

    ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো কোনো পেনাল্টি শুটআউটে হাল সিটিকে হারায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ওই বছর থেকে ইউয়েফার ক্লাব টুর্নামেন্টেও চালু হয় এই পদ্ধতি। তবে বিশ্বকাপে টাইব্রেকার নিয়ম শুরু হতে সময় লেগে যায়। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায় এই শুটআউট। তবে ওই বিশ্বকাপে দরকার হয়নি এই ফরম্যাটের। তার আগেই অবশ্য ১৯৭৭ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো এই শুট আউট চালু হয়। যেখানে মরক্কোকে বাছাইপর্বের ম্যাচে হারায় তিউনিসিয়া। 

    ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে শুটআউটে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে জার্মানি, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ টাইব্রেকারে চালু হয় শুটআউট। তখনও অবশ্য নিয়ম ছিল, ফাইনাল ড্র হলে আবারও রিপ্লে হবে। ১৯৮৬ থেকে সেই নিয়মও উঠে যায়, ফাইনালে ড্র হলেও চালু হয় পেনাল্টি শুটআউটের নিয়ম। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে প্রথমবার কোনো ফাইনালে নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারের। যেখানে ইতালির রবার্তো বাজ্জিওর মিসের পর শিরোপা জেতে ব্রাজিল।

    পেনাল্টি শুটআউটের বর্তমান নিয়মে দুই দলের প্রথম পাঁচটি করে পেনাল্টির পর যাবে সাডেন ডেথে। সেখানে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিটা গিয়েছিল সাডেন ডেথেই। ১২টি কিক লেগেছিল ফল হতে, যেটা এখনো বিশ্বকাপের রেকর্ড। আবার ১৯৯৪ বিশ্বকাপে সুইডেন-রোমানিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল নিষ্পত্তি হওয়ার জন্যও লেগেছিল ১২টি কিক। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে জার্মানি মেক্সিকোর সাথে জিতে যায় সাত কিকেই, যেটা হয়েছে এই বিশ্বকাপে স্পেন-মরক্কোর ম্যাচেও। একই ঘটনা ঘটে ২০০৬ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড-ইউক্রেন ম্যাচেও। এটাই বিশ্বকাপে শুটআউটে সর্বনিম্ন কিকের রেকর্ড।

    সবচেয়ে বেশি ছয়বার টাইব্রেকারে গেছে আর্জেন্টিনা, এর মধ্যে একবার ছাড়া বাকি সববারই জিতেছে, পাঁচ জয়টাও রেকর্ড। ক্রোয়েশিয়া আর জার্মানি চার বার খেলে জিতেছে সববারই। স্পেন আবার চারবার হেরেছে টাইব্রেকারে, তাদের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ।আর্জেন্টিনার ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া টাইব্রেকারে গেলে লিভাকোভিচ হতে পারেন প্রথম গোলকিপার হিসেবে তিনবার শুটআউটের মুখোমুখি।