• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    ফ্রান্স-মরক্কো প্রিভিউ: দুই দলের শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা

    ফ্রান্স-মরক্কো প্রিভিউ: দুই দলের শক্তি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা    

    আজকের ম্যাচে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে ওঠা মরক্কোর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপার লক্ষ্যে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেওয়া ফ্রান্স। মরক্কোও পিছিয়ে নেই একেবারেই। এখন পর্যন্ত মরক্কোর জালে কোনও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় বল পাঠাতে পারেনি, যেই একটি গোল মরক্কোর নামের বিপরীতে আছে সেটাও এসেছিল নিজেদের পা থেকে। ফ্রান্সের আক্রমণ আর মরক্কোর রক্ষণের মুখরোচক লড়াইয়ের পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে দুই দলের ইতিহাসও। মরক্কোকে একসময় শাসন করা ফ্রেঞ্চদের সাথে সেই অর্থে এখন শিথিল সম্পর্ক না থাকলেও মরক্কোর অনেক অভিবাসীর মনেই ফ্রান্সকে নিয়ে আছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তবে স্বয়ং মরক্কোর কোচ ফ্রান্সে বেড়ে ওঠায় সেসব কথাবার্তা মাথাচাড়া দিতে রাজি না তিনি। সেই সাথে দেশমও বলেছেন খেলা ছাড়া অন্য আর কোনও কিছু নিয়েই তার মাথাব্যথা নেই। দুর্দান্ত এক সেমি-ফাইনালে তাই আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করা যাক।

     

    পূর্বের দেখায়

    বিশ্বকাপে এর আগে কখনই মুখোমুখি হয়নি এই দুই দল। তবে মোট ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে তারা, যার মধ্যে একবার মরক্কোর বিপক্ষে খেলেছিল মূলত ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব-২১ দল। ৭ ম্যাচে জয় পাওয়া ফ্রান্সের বিপরীতে মরক্কো জয় পেয়েছে মাত্র ১ বার। সর্বশেষ ২০০৭ সালে দুই দল এক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হলে নিজেদের মধ্যে ৩টি ড্রয়ের একটি এসেছিল সেই ম্যাচে।
     
    কী বলছে দুই দল

    ফ্রান্স শিবিরে স্টেডিয়ামে মরক্কোর পক্ষে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে জেগেছে শঙ্কা। ফ্রেঞ্চ কোচ দিদিয়ের দেশম তো সোজাসাপ্টাই জানালেন সেটা, “হ্যাঁ, আমিও দেখেছি, আমার সহযোগীরাও আমাকে জানাল যে প্রতি ম্যাচেই ওরা কতটা সমর্থন পাচ্ছে। আমরা জানি যে স্টেডিয়ামে তারা যথেষ্ট শোরগোল করব। কিন্তু সেটা খেলারই অংশ, সেটার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে।” কোচের সাথে গলা মিলিয়ে অধিনায়ক হুগো ইয়রিস জানিয়েছেন সেটা মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত। সেই সাথে মরক্কোর প্রশংসা করতেও ভোলেননি তিনি, “এই অব্দি টুর্নামেন্টে তারা যা করে এসেছে তার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। তাদের এতদূরে আসার সাথে কিন্তু ভাগ্যের কিছু নেই। গ্রুপে শীর্ষে থেকেই তারা এসেছে।”

    সেই সম্মানের জায়গায় ফ্রান্সকেও রাখছে মরক্কো। আর সেই সম্মানের জায়গা থেকেই শুধু এমবাপেকে নিয়ে ভাবতে নারাজ মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই, “কিলিয়ানকে থামাতে আমি কোনও ভিন্ন পরিকল্পনা সাজাবো না। ও ছাড়াও ওদের দলে গ্রিজমানের মত খেলোয়াড় আছে যে মিডফিল্ডের রেখা ভেঙে আমাদের বিপদে ফেলতে পারতে। সেই সাথে এমবাপের যোগ্য সহযোগী হিসেবে অন্য উইংয়ে ডেম্বেলে তো আছেই। আমরা যদি তাই শুধু এমবাপের ওপর মনোযোগ দেই তাহলে বড় ভুল করে ফেলব।”

    সেই সাথে হাকিমি-এমবাপে দ্বৈরথের দিকেও তাকিয়ে আছেন তিনি, “কিলিয়ানের সাথে আশরাফ নিয়মিত অনুশীলন করে। কিলিয়ানকে ও তাই আমার চেয়ে ভালমত জানে। আর ওর জায়গায় হাকিমি তো বিশ্বের সেরাদেরই একজন। এই দুজনের লড়াইটা তাই দেখার মতই হবে।”

    যেখানে এগিয়ে ফ্রান্স

    ফ্রান্সের মুল শক্তি তাদের আক্রমণভাগ। এমবাপে আর ডেম্বেলেকে সামলাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে দলগুলো তার মাঝেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন গ্রিজমান ও জিরু। জিরু সাধারণত ফ্রান্স দলে সহযোগী স্ট্রাইকার যেভাবে খেলে সেভাবেই খেলে থাকেন। বয়স হওয়ার কারণে রক্ষণ রেখার পেছন দিয়ে ক্ষিপ্র দৌড় দিয়ে ডিফেন্ডারদের টেনে নিয়ে যাওয়া বা মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রক্ষণের রেখাটা এলোমেলো করে দেওয়ার তেমন চেষ্টা করেন না। তবে কোন ডিফেন্ডারের গায়ে গা লাগিয়ে বলকে আগলে রাখতে এখনও পটু তিনি। শক্তি কাজে লাগিয়ে বল আগলে দুই উইং দিয়ে আগুয়ান এমবাপে বা ডেম্বেলেকে বল ছাড়ার জন্য জিরু এবারও ভয়ঙ্কর। সেই সাথে গত ম্যাচে চোট পাওয়া রোমান সাইস যদি ফিরতে না পারেন তাহলে হয়ত কাজটা আরও সহজ হয়ে যাবে জিরুর জন্য, আর এমবাপে ও ডেম্বলে তখন কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন সেটা বলাই বাহুল্য।

    যেখানে এগিয়ে মরক্কো

    মরক্কোর মূল শক্তি তাদের রক্ষণের বোঝাপাড়া, সর্বোপরি তাদের পরিকল্পনা মাঠে কাজে লাগানোর জন্য মানসিক সচ্ছলতা। রক্ষণের চেয়ে অবশ্য ফ্রান্সের মিডফিল্ড নিষ্ক্রিয় করে রাখতে সোফিয়ান আমরাবাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে মরক্কো। মুলত গ্রিজমানকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে আরও একদিন আমরাবাতের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। সেই সাথে গোলকিপার ইয়াসিন বোনোর দুর্দান্ত ফর্মটাও তাদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। মরক্কোর গোলবারের অতন্দ্র প্রহরীকে ফাঁকি দিতে ফ্রান্সকে হয়তো বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে।

    যেখানে বিপদে পড়তে পারে ফ্রান্স

    ফ্রান্সের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন হাকিম জিয়েশ ও আশরাফ হাকিমি। দুজনই ডান প্রান্ত দিয়ে হুট করে আক্রমণে যেতে দারুণ পারদর্শী। আগের ম্যাচেই সাকাকে আটাকাতে হিমশিম খাওয়া থিও হার্নান্দেজ পরে মেসন মাউন্টকে কোনও চাপ ছাড়াই বক্সে ফেলে দিয়ে গুনেছিলেন পেনাল্টি। থিওর সামনে তাই অপেক্ষা করছে বড় পরীক্ষা। আমরাবাত যদি গ্রিজমানকে বেঁধে রাখতে পারেন তাহলে রক্ষণেও তেমন একটা সহায় হবেন না গ্রিজমান। থিও বনাম জিয়েশ-হাকিমি দ্বৈরথটা তাই হবে দেখার মত।
     
    যেখানে বিপদে পড়তে পারে মরক্কো

    মরক্কোর জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে সাইসের ইনজুরি। তিনি ফিরতে না পারলে জিরুকে ম্যাচে নিষ্প্রভ করে রাখার সুযোগ তেমন একটা থাকবে না। দুই উইংয়ে হাকিমি ও ইনজুরি থেকে ফেরা নুসাইর মাজরাউই হয়ত এমবাপে-ডেম্বেলেকে গতির খেলায় সামলাতে পারবেন। তবে জিরু যদি দুজনের একজনকেও ম্যাচে বেশ কয়েকটা ফাঁকায় পাস ছাড়তে পারেন তাহলেই মরক্কোর রক্ষণে দেখা দিবে বিপদের ঘনঘটা।