• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    যেভাবে রাশফোর্ডের উদযাপন ফুটবল বিশ্ব ছেয়ে গেছে

    যেভাবে রাশফোর্ডের উদযাপন ফুটবল বিশ্ব ছেয়ে গেছে    

    বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে ছন্দে থাকা খেলোয়াড়টির নাম মার্কাস রাশফোর্ড। বিশ্বকাপের পর ১১ ম্যাচে ১০ গোল করা এই ইংলিশ স্ট্রাইকার এক কথায় ক্যারিয়ার-সেরা ফর্মে রয়েছেন এখন। তার খেলার মতো দ্যুতি ছড়িয়েছেন তার উদযাপনও। 

    গোল করার পর দৌড়ে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে এসে এক আঙুলের স্যালুট। অন্যভাবে দেখলে, তর্জনী দিয়ে নিজের মস্তিষ্ককে নির্দেশ করছেন রাশফোর্ড। সম্প্রতি তার প্রতিটি গোলের পরই দেখা গেছে এই উদযাপন। 

    এই উদযাপনের শুরুটা হয়েছে নববর্ষের কয়েক ঘণ্টা আগে। সেদিনই দেরিতে ঘুম থেকে উঠার জন্য সময়মতো ট্রেনিংয়ে যেতে পারেননি রাশফোর্ড। যার শাস্তি হিসেবে উলভসের বিপক্ষে ম্যাচে তাকে শুরুর একাদশে রাখেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ। তবে বদলি নেমে ৭৬ মিনিটে দলকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন এই ২৫ বছর বয়সীই। এই গোলের পরই উদযাপনটি প্রথম করেছিলেন রাশফোর্ড, যা পরবর্তীতে তার সকল গোলের পরই দেখা গেছে। এবং গত এক মাসে এটি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ফুটবল বিশ্বে। এমনকি ফুটবলের বাইরেও। নোভাক জোকোভিচ তার রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান গ্ল্যান্ডস্ল্যামজয়ের উদযাপন করেছেন এই ধরনে।

    অ্যালান শিয়ারারের এক হাত তুলে উদযাপন, লিওনেল মেসির দুই হাত তুলে; গ্যারেথ বেলের ‘হার্ট’ সাইন, কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ‘সিউ’-এর মতো আরেকটি ট্রেডমার্ক উদযাপন হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাশফোর্ডের এই উদযাপনের অর্থ কী? 

    রাশফোর্ড নিজে থেকে কখনো এর অর্থ ব্যাখ্যা করেননি। শিল্পের মতো এর ব্যাখ্যা মানুষের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। 

    দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, এই উদযাপনের সূত্রপাত হয় রাশফোর্ড ও তার বন্ধুদের মাঝে। এর মাধ্যমে বাইরের সব কোলাহলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নতুন ফোকাস বা মনোযোগের দিকে নির্দেশ করছেন তিনি। ক্যারিয়ারজুড়েই খেলা-বহির্ভূত কিছু তর্ক-বিতর্ক তাড়া করেছে রাশফোর্ডকে । এবং এসব বিতর্ক প্রভাব ফেলেছে তার মানসিক স্বাস্থ্যে, প্রভাব ফেলেছে তার মাঠের খেলায়। 

    গত মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক ও সমালোচনার শিকার হয়েছেন রাশফোর্ড। এর প্রভাব তার খেলায় এতটাই পড়েছে যে পুরো মৌসুমে তিনি গোল পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি। এই উদযাপন শুরু হওয়ার পর এক মাসেই তার দ্বিগুণ গোল করেছেন তিনি। 

    নতুন মনোযোগ বা নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহারকে নির্দেশ করা এই উদযাপন শুধু ফুটবল না, ছড়িয়ে গেছে অন্যান্য খেলাতেও। 

    সম্প্রতি এই উদযাপন করেছেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটার জফ্রা আর্চার। আর্চারও তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়টা পার করে এসেছেন মাত্র। ইনজুরির জন্য ১৮ মাস বাইরে থাকার পর মাঠে ফিরে পাওয়া প্রথম উইকেটের পরই এই উদযাপন করেন এই ফাস্ট বোলার। 

    ফুটবলে এই উদযাপন অনুকরণ করা ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। এভারটনের বিপক্ষে গোল করে রাশফোর্ডের করা এই উদযাপনের ছবির নিচে ইন্সটাগ্রামে কমেন্ট করেছিলেন ট্যামি আব্রাহাম। এর দুদিন পর এসি মিলানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোলে করে রোমাকে ড্র এনে দেওয়া আব্রাহাম নিজেও করেন এই উদযাপন। 

    প্রিমিয়ার লিগে প্রথম এই উদযাপন অনুকরণ করেন ড্যানি ওয়েলব্যাক। বদলি নেমে লিভারপুলের বিপক্ষে ব্রাইটনের তৃতীয় গোলটি করে নিজের মস্তিষ্ককে ইশারা করেন তিনি। রাশফোর্ডের সঙ্গে কথা বলেই এই উদযাপন করেছিলেন ওয়েলব্যাক। তার এই উদযাপন ছিল একই একাডেমি থেকে উঠে আসা এক ‘ছোটভাই’-এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার মতোই।  

    প্রথম নন-ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে এই উদযাপন করেন জশুয়া কিমিখ। গত সপ্তাহে কোলনের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখের ১-১ গোলের ড্রয়ে দেখা যায় এই উদযাপন। একই রাতে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে কারাবাও কাপে গোল করে এই উদযাপন করেন নিউক্যাসলের জোয়েলিংটন। 

    প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উদযাপনটি অনুকরণ করেছিলেন অবশ্য একজন অখ্যাত ফুটবলার। নাম আর্মান্দো দোবরা। চেস্টারফিল্ডের হয়ে খেলা এই উইঙ্গার এফএ কাপে ওয়েস্ট ব্রমের বিপক্ষে বল জালে জড়িয়ে করেছিলেন এই উদযাপন, জানুয়ারির ৬ তারিখে। 

    এ উদযাপন অনুকরণের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অবশ্য বুকায়ো সাকা, রাশফোর্ডের ইংল্যান্ড সতীর্থ ও মাঠের বাইরের বন্ধু। ইউনাইটেডের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে দূরপাল্লার এক শটে গোল করে এই উদযাপন করেন সাকা। প্রথমার্ধে মাঠের একই অংশে একটি দূরপাল্লার শটে গোল করে উদযাপন করেছিলেন রাশফোর্ড নিজেই। 

    প্রায় ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া এই গোল উদযাপন রাশফোর্ডের জন্য কঠিন এক সময় উতরানোর প্রতীক। ইতোমধ্যে সেই কঠিন সময় নিয়ে খোলামেলাভাবে আলোচনাও করেছেন এই ইংল্যান্ড তারকা।  

    অক্টোবরে ইউনাইটেডের হয়ে শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করার পর এক সাক্ষাৎকারে রাশফোর্ড বলেন, “আমি মানসিকভাবে ভুগছিলাম। নিজের পারফরম্যান্সের জন্য না, মাঠের বাইরের বিষয়াদিই মানসিকভাবে ভোগাচ্ছিল বেশি। গত মৌসুম থেকে এই মৌসুমের তফাৎ এটাই। গত মৌসুমের একটা বড় সময় খেলার মতো মানসিক অবস্থাতেই ছিলাম না আমি।” 

    রাশফোর্ড অবশ্য ইউনাইটেডের একমাত্র খেলোয়াড় না যিনি মানসিকভাবে ট্র্যাকে ফিরে এসেছেন। গত শনিবার কোচ এরিক টেন হাগ নিজেও স্বীকার করেছেন তার আক্রমণভাগ এই মৌসুমে নতুন আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। তবে এরজন্য অবশ্য নিজে ক্রেডিট নেননি টেন হাগ। 

    “আমি হ্যারি পটার না। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজেকে নিয়ে কাজ করতে হবে, নিজের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে। রাশফোর্ড তাই করেছে,” বলেন টেন হাগ।