• লা লিগা
  • " />

     

    রেফারিকে 'ঘুষ', 'ভুয়া ব্যবসায়িক দলিল': কেন বার্সার বিপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে?

    রেফারিকে 'ঘুষ', 'ভুয়া ব্যবসায়িক দলিল': কেন বার্সার বিপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে?    

    আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ বার্সেলোনার বিপক্ষে নতুন নয়। দলবদলে একাধিক আর্থিক কেলেংকারির জন্য বার বার কাঠগড়ায় দাঁর করানো হয়েছে বার্সেলোনাকে, সেজন্য ক্লাবের সাবেক সভাপতি সরেও দাঁড়িয়েছেন। তবে এবার যে অভিযোগ উঠল, সেটা সম্ভবত আরও বেশি ভয়াবহ। লা লিগার রেফারি কমিটির সাবেক সভাপতি হোসে মারিয়া এনরিকেজের কোম্পানির সাথে বার্সেলোনার বড় অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে, এমন অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে আদালত। সেজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে বার্সার বিরুদ্ধে। কিন্তু এই অভিযোগ আসলে কী? এর পরিণাম কেমন হতে পারে?

    অভিযোগটা আসলে কী? 

    প্রথম এই বোমাটা ফাটিয়েছিল গত মাসে স্প্যানিশ দৈনিক কাডেনা সার। অভিযোগটা হচ্ছে, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ৮.৪ মিলিয়ন ইউরোর আর্থিক লেনদেন হয়েছে বার্সেলোনা এবং তৎকালীন রেফারি কমিটির সহ সভাপতি এনরিকেজের কোম্পানি ডাসনিল ও নিলসাটের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে অনেকবার আর্থিক লেনদেন হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। আদালতে বলা হয়েছে, এই গোপন লেনদেনের ফলে লা লিগায় বার্সার ম্যাচে তারা রেফারিদের কাছ থেকে বিশেষ পক্ষপাত পেয়েছে কি না সেটা আসলে খতিয়ে দেখা হবে। বার্সেলোনা এই আর্থিক লেনদেনের বিষয়টা অস্বীকার করেনি। তারা বলছে, এই লেনদেন হয়েছে ওই দুইটি কোম্পানির কাছ থেকে লা লিগায় রেফারিং নিয়ে 'পরামর্শের' জন্য। বার্সার সাবেক সভাপতি বার্তোমেউর দাবি, ওই দুই কোম্পানি এই সংক্রান্ত কনসাল্টেন্সির কাজ করেছে। যেটার উদ্দেশ্য ছিল, ভিন্ন ভিন্ন রেফারিদের কীভাবে খেলোয়াড়েরা সামলাবে এনিয়ে পরামর্শ নেওয়া। এও বলেছে, তাদের লেনদেন হয়েছে মূলত এনরিকেজের ছেলের সাথে, যিনি কাগজে কলমে এই কোম্পানির মালিক। এতে যে এনরিকেজের স্বত্ব আছে, সেটা তাদের জানা ছিল না। সরাসরি এনরিকেজের সাথে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি বলেও তাদের দাবি। ২০১৮ সালের পর ক্লাবের খরচ কমাতে এই চুক্তিটা আর এগোয়নি বলে দাবি করেছেন বার্তোমেউ।

    কাডেনা সার বলছে, এই পুরো লেনদেনের কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। কারণ পুরোটাই করা হয়েছে মৌখিকভাবে, কোনো সাক্ষ্য ছাড়া। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বার্সার কোচ আরনেস্তো ভালভের্দে এ নিয়ে কিছু জানতেন না বলে জানা গেছে। এমনকি ২০০৮ থেকে ২০১২ পরযন্ত বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলাও নাকি এ কিছু জানতেন না এ নিয়ে, দাবি করেছে গার্দিওলার ঘনিষ্ঠ একট সূত্র। এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেফারিরা বলছেন, তারা এ নিয়ে কিছুই জানতেন না। এনরিকেজ মূলত লা লিগায় রেফারিদের মাঠের বাইরের দাপ্তরিক কাজগুলো দেখতেন বলে জানিয়েছেন লা লিগায় রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের আরেক সাবেক রেফারি এদুয়ার্দো গঞ্জালেজ।। তারা বলছেন, মাঠের কোনো বিষয়ে জড়াতেন না এনরিকেজ, রেফারিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কোনো প্রভাব নেই।

    এমন কিছু কি আগে হয়েছে লা লিগায়? 

    লা লিগায় ক্লাবের সাথে রেফারিদের লেনদেন নতুন কিছু নয়। তবে রেফারিরা সেসব করেছেন নিয়ম মেনে, আ লিগার সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার পর। লা লিগায় ২১৯ ম্যাচ রেফারিং করা কার্লোস দাভিয়া রেফারিং থেকে অবসর নেওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন। আরেক সাবেক রেফারি ম্যানুয়েল গঞ্জালেঞ্জও অবসর নিয়ে এখন কাজ করছেন গেটাফেতে। তবে বার্সেলোনার মতো এই অভিযোগ এটাই প্রথম।

    বার্সা, লা লিগা, উয়েফা কী বলছে? 

    বার্সার বর্তমান সভাপতি হুয়ান লাপোর্তে বলেছেন, তারা প্ররথক একটি তদন্তের মাধ্যমে ব্যাপারটি খতিয়ে দিয়েছেন। খুব শিগগিরই পুরো ব্যাপারটা খোলাসা করার জন্য একটা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবেন। 

    লা লিগা ও স্প্যানিশ স্পোর্টস কাউন্সিল এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি। লা লিগা বলছে, যেহেতু অভিযোগ তিন বছরের পুরনো ও এনরিকেজ এখন আর লা লিগায় নেই, আপাতত ব্যাপারটি আদালতের ওপরেই তারা ছেড়ে দিয়েছে। উয়েফাও বলেছে, এ নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। 

    ফলাফল কী হতে পারে?

    মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্প্যানিশ আইনেই এই সংক্রান্ত কিছু স্পষ্ট করে ছিল না। ২০১৫ সালে এই ধারাটি আইনে চালু করে। এর তিন বছর পর এনরিকেজ অবসর নেন। ঝামেলাটা হচ্ছে, এমন লেনদেনের একাধিক রেকর্ড আছে। যার মানে এটি এককালীন কিছু নয়। সেজন্য শাস্তিটা হতে পারে বড়, এমনকি সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য জেল হতে পারে দায়ী ব্যক্তিদের। এর মধ্যেই লা লিগা সভাপতি তেবাস বলেছেন, অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেলেও বার্সা সভাপতি লাপোর্তের উচিত পদত্যাগ করা। তবে যেহেতু তার সময়ে হয়নি, সেজন্য মূলত কাঠগড়ায় দাঁড় হচ্ছেন আগের সভাপতি বার্তোমেউ ও সান্দ্রো রোজেল।