• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    পটার-যুগে চেলসি: কী হয়েছে, কী হওয়ার কথা ছিল

    পটার-যুগে চেলসি: কী হয়েছে, কী হওয়ার কথা ছিল    

    টড বোয়েহলি ও ক্লিয়ারলেক ক্যাপিটাল চেলসির মালিকানা নেওয়ার পর একটি বিষয় বেশ ভালোভাবেই জানিয়ে দিয়েছিল। রোমান আব্রামোভিচের রীতি থেকে বেড়িয়ে এসে ক্লাবকে পুনর্নির্মাণ করবেন তারা। কিন্তু তাদের প্রথম ১০ মাসের মালিকানা যুগ শেষে চেলসির অবস্থা এই- এপ্রিল মাসে এসে লিগে ১১তম স্থানে অবস্থান করছে ক্লাব। তাদের ঠিক নিচে আছে ক্রিস্টাল প্যালেস, যারা রেলিগেশন লড়াইয়ে ব্যস্ত। টমাস তুখেলের পর সাত মাস দায়িত্ব পালন করে বরখাস্ত হয়েছেন গ্রাহাম পটারও। এক মৌসুমে দুই ম্যানেজারকে বরখাস্ত করার নজির আব্রাহিমোভিচেরও নেই।  

    এতদিন ধরে যারা বলে আসছে, চেলসির ‘আমেরিকান’ বোর্ডের কোনো ধারণা নেই তারা কী করছে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের গলা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়- আসলে কী করতে চাইছে/চেয়েছিল চেলসি বোর্ড, এবং কোথায় গলদ হয়েছে?   


     

    তুখেল থেকে পটার 

    টমাস তুখেলকে বরখাস্ত করার পর ব্রাইটনকে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে পটার ও তার কোচিং স্টাফদের ভাগিয়ে এনেছিল চেলসি। ইংল্যান্ডের নবম ডিভিশনে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করা পটার ফুটবল পিরামিড বেয়ে বেয়েই এতদূর এসেছেন। ইংলিশ ফুটবলে তার অভিজ্ঞতা, যেকোনো সেট-আপ নিয়ে কাজ করার সামর্থ্য ও সময়মত ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা দেখেই তাকে বেছে নিয়েছিল বোয়েহলিরা। 

    মালিকপক্ষের পরিকল্পনা ছিল পূর্বের ক্লাবগুলোর মতো চেলসিতেও স্থিতিশীল একটি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করবে তারা। তাদের আরেক ক্লাব, মার্কিন বেজবল দল এলএ ডজার্সে ২০১৫ সাল থেকে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন ডেভ রবার্টস। সেখানকার স্পোর্টিং ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু ফ্রিডম্যানও ক্লাবের সাথে আছেন ২০১৫ সাল থেকে। একসাথে তাদের ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিততে সময় লেগেছিল পাঁচ বছর, যাকে ক্লাবের স্থিতিশীলতার ফসল হিসেবেই দেখা হয়। 

    চেলসিতেও একই মডেল প্রয়োগ করতে চেয়েছেন বোয়েহলিরা। পটারকে দেখা হচ্ছিল ডেভ রবার্টসের সমতুল্য হিসেবে। 

    শুধু ম্যানেজার না, ডিরেক্টর, টেকনিকাল এডভাইজারসহ ক্লাবের সব গুরুত্বপূর্ণ পদেই পরিবর্তন এনেছে তারা। পরিবর্তন এসেছে স্কাউটিং ও খেলোয়াড় কেনার পলিসিতেও। এই পুনর্নির্মাণে নগর-প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনাল থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছে চেলসি। মিকেল আরতেতা যোগ দেওয়ার পর আর্সেনালও পরিবর্তন এনেছে উপরের সবগুলো দিকে। এবং তারা প্রমাণ করেছে, দীর্ঘদিন প্রসেসের উপর ধৈর্য রাখলে, তা ফল দেওয়া শুরু করবেই। 

    এই ধৈর্য রাখার সংস্কৃতিটাই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিলেন বোয়েহলিরা। পটারের ক্ষেত্রে সেই ধৈর্য স্থায়ী হয়েছে সাত মাস। তবে এখানে অবশ্য একরকম অপারগ হয়েই পটারকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে তারা। 

     

    পটার যুগ 

    চেলসি বোর্ডের পরিকল্পনা ছিল এমন- ইউরোপের সব প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলারদের দীর্ঘদিনের চুক্তি দিয়ে দলে ভিড়িয়ে সময় নিয়ে একটা দল গড়ে তুলবে তারা, যারা একসাথে খেলবে বহুদিন। সেই মর্মে ছয় মাসেই ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি খরচ করেছেন বোয়েহলিরা। 

    এই পরিকল্পনায় সমস্যা হচ্ছে- পটারের প্রতিভাবান তরুণদের নিয়ে কাজ করা অভ্যাস থাকলেও তিনি আজীবন কাজ করে এসেছেন সীমিত রশদ নিয়ে। সেসব প্রজেক্টেও নিজের দর্শনকে বাস্তবায়িত করতে মৌসুমের পর মৌসুম সময় পেয়েছেন তিনি। আর ভালো কোচ হিসেবে পটারের সুনাম থাকলেও জেতার মানসিকতার জন্য তিনি বিখ্যাত না। ক্যারিয়ারে একটি সুইডিশ কাপ ব্যতীত কোনো শিরোপা জেতেননি এই ৪৭ বছর বয়সী। 

    যে কারণে চেলসির চাকরি দ্রুতই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিল পটারের জন্য। ট্রেনিংয়ে ৩০-৪০ জন ফুটবলারকে যাচাই করে ১১ জনের দল ঘোষণা করা যেকোনো ম্যানেজারের জন্য কঠিন এক কাজ। বিশেষ করে যখন আপনি আমলে আনেন, এই খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনো প্রাক-মৌসুমও পার করেননি পটার। 

    পটার অবশ্য কখনোই তার অস্বস্তি লুকানোর চেষ্টা করেননি। জানুয়ারি মাসেই বলেছিলেন, চেলসিকে ম্যানেজ করা এখন ‘পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন চাকরি’। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তার মুখস্থ বুলিই হয়ে দাঁড়িয়েছিল- “খেলোয়াড়রা তাদের সেরাটা দিয়েছে। আমি নিজের কাজ ঠিকমতো করতে পারছি না।” 

     

    পটার তার কাজে কতটা আনাড়ি ছিলেন, সেদিকে যদি আমরা তাকাই-   

    তার অধীনে গত সাত মাসে লিগে ২২ ম্যাচ খেলেছে চেলসি। ২১ গোল করেছে, ২১ গোল খেয়েছে। এই ম্যাচগুলোতে তাদের মোট এক্সপেক্টেড গোল ছিল ২৮.৩, আর প্রতিপক্ষের এক্সপেক্টেড গোল ছিল ২৭.২। পটারের সময়ে চেলসি খেলা কতটা নিষ্ক্রিয় ছিল, তা এই দুই পরিসংখ্যানেই উঠে আসে। 

    এই শতাব্দীতে চেলসির জন্য সবচেয়ে দুর্ভোগের মৌসুম ছিল ২০১৫-১৬। সেবার টেবিলের দশে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল তারা। পুরো মৌসুমে হেরেছিল মোট ১২বার। এই মৌসুমে ইতোমধ্যে ১০ ম্যাচ হেরে বসে আছে তারা। এক ও দুইয়ে থাকা সিটি এবং আর্সেনালের মাঠে এখনো খেলা বাকি আছে তাদের। 

     

    এরপর কী? 

    চেলসি ভক্তদের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই পটার-বিরোধী স্লোগান দিয়ে আসছে। সর্বশেষ অ্যাস্টন ভিলার কাছে হারার পরও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ভক্তরা পটারকে উদ্দেশ্য করে গাইছিল, “তুমি জানো না তুমি কী করছ”, “কালকে সকালেই তোমার চাকরি যাবে”। 

    পটারের বরখাস্ত হওয়ার খবরে এই ভক্তরা যে উদযাপন করছে সেটা বলাই বাহুল্য। এখন নতুন ম্যানেজার হিসেবে শোনা যাচ্ছে জুলিয়ান নাগেলসম্যান, লুইস এনরিকে ও মাউরিসিও পচেত্তিনোর নাম। 

    বোয়েহলিদের প্রাথমিক প্রায় সকল পরিকল্পনাই হোঁচট খেয়েছে। এক অর্থে এখন আবার শূন্য থেকে রেস শুরু করতে হবে তাদের। তবে যেই পরিমাণ বিনিয়োগ এরই মধ্যে করেছে তারা, পর্যাপ্ত সময় পেলে পরিবর্তী ম্যানেজার চেলসিতে এসে সোনা ফলাতেও পারেন।