• বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড
  • " />

     

    মোস্তাফিজ ম্যাজিক, হাসানের শেষের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের সিরিজ জয়

    মোস্তাফিজ ম্যাজিক, হাসানের শেষের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের সিরিজ জয়    

    ৩য় ওয়ানডে, চেমসফোর্ড (টস-আয়ারল্যান্ড/বোলিং)
    বাংলাদেশ- ২৭৪, ৪৮.৫ ওভার (তামিম ৬৯, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ৩৭, অ্যাডেয়ার ৪/৪০, ডকরেল ২/৩১, ম্যাকব্রাইন ২/৩৯)
    আয়ারল্যান্ড- ২৭০/৯, ৫০ ওভার (স্টার্লিং ৬০, বালবির্নি ৫৩, টাকার ৫০, মোস্তাফিজ ৪/৪৪, হাসান ২/৪৪, মিরাজ ১/৩৮ )
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী


     

    আরও একটি স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ; আরও একবার মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ফিফটির সাথে বাকিদের ছোট ছোট সংগ্রহে লড়াইয়ের রসদ পাওয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত স্পেল, মেহেদী হাসান মিরাজের কিপটে বোলিং, নাজমুল হোসেন শান্তর ম্যাচের রঙ বদলে দেওয়া ক্ষুদ্র স্পেল আর হাসান মাহমুদের অসাধারণ শেষ ওভারে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড ছাড়ল ২-০ ব্যবধানের সিরিজ জয় দিয়ে।

    ২৭৫ রানের লক্ষ্যে আয়ারল্যান্ডের শুরুটা ছিল সাবধানী। মোস্তাফিজ, হাসানের আঁটসাঁট স্পেলে দুই ওপেনার খুব একটা সুবিধা না করতে পারলে ৬ষ্ঠ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন ডহেনি। তবে এরপর আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান স্টার্লিং। দুজন মিলে দলীয় শতরান পূর্ণ করেন ২১-তম ওভারেই। ৫৮ বলে এরপর স্টার্লিং ফিফটি পেয়ে গেলে পরের ওভারেই ৭১ বলে ফিফট পূর্ণ করেন আইরিশ অধিনায়ক। দুজনের জুটিও একশো রান পেরুনোতে বাংলাদশ শিবিরে ক্রমেই বেড়ে উঠছিল শঙ্কা। সেই শঙ্কা ছাপিয়ে বাংলাদেশকে আশা জোগান এবাদত, ২৭-তম ওভারে, বালবির্নিকে ৫৩ রানে থামিয়ে। অন্য প্রান্তে এসে মিরাজও তখন চেপে বসেছিলেন স্টার্লিংয়ের ওপর। সেই চাপের ফল মিরাজ পেলেন নিজেই। আগের ওভারে মেইডেন করার পর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর দারুণ ক্যাচে মিরাজ স্টার্লিংকে থামান ৬০ রানে।

    তাতেও অবিচল থেকে আইরিশদের জয়ের কক্ষপথে রেখেছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। মাঝে অবিশ্বাস্য এক ডাকে এলবিডব্লিউ হলে দ্রুতই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান টাকার। ৩৭-তম ওভারে অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয়কে লক্ষ্য বানিয়ে দুজনে মিলে নেন ২১ রান। ৩৯-তম ওভারেই যখন দুজন মিলে দলকে দুইশো রানে নিয়ে গেলেন, ম্যাচ তখন বাংলাদশের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই মনে হল। তবে আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলা শান্ত এদিন ত্রাণকর্তার ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন বল হাতে। সেদিন দুর্দান্ত খেলা টেক্টরকে নিজের প্রথম ওভারেই শান্ত থামালেন ৪৫ রানে; লিটনের দারুণ ক্যাচটাও অবশ্য সেটার জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে। ৪১-তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেওয়া শান্ত এরপর নিজের ৩ ওভারের স্পেলে গুনলেন মোটে ১০ রান। সেই সাথে মোস্তাফিজও যেন ফিরে পেলেন নিজেকে। টানা তিন ওভারে তিনি ফেরালেন ক্যাম্ফার, আগের ম্যাচে ঝড় তোলা ডকরেল ও ৫০ রান করে ভয়ংকর হয়ে ওঠা টাকারকে। ম্যাচটা সেখানেই নিজেদের করে নিয়েছেন বলে ভাবতে থাকা বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের জন্য অবশ্য তখনও বাকি চমক। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ৪৯-তম ওভারে অ্যাডেয়ার মারলেন একটি করে চার ও ছয়, ওভারে এলো ১৪ রান। শেষ ওভারে আইরিশদের প্রয়োজন ১০ রান; আর গুরু দায়িত্ব বর্তাল হাসানের ওপর। দায়িত্বের ভারটাকে যেন পাত্তাই দিলেন না এই তরুণ পেসার। প্রথম বলেই উপড়ে ফেললেন অ্যাডেয়ারের স্টাম্প, উদযাপনেও একেবারেই নিস্পৃহ। এক বল পরে ফেরালেন ম্যাকব্রাইনকেও। জয়টাও হাসান ঠিকই নিশ্চিত করলেন স্নায়ু ধরে রেখে।

    এর আগে এদিন একাদশে সুযোগ পাওয়া রনি তালুকদার ওপেন করতে নেমে মাত্র ৪ রানেই ফিরেছিলেন অ্যাডেয়ারের শিকার হয়ে। তামিমের সাথে জুটি বেঁধে এরপর উইকেটে এসেই সহজাত এক ইনিংস খেলে যাচ্ছিলেন শান্ত। তবে মনোযোগ বিচ্যুতি হলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ইয়াংয়ের শিকার হয়ে ৩২ বলে ৩৫ রান শেষে ফিরে যান শান্ত। এদিন চারে নামা লিটন দাসও পরে ছিলেন ছন্দে। তামিম এক প্রান্ত আগলে রাখলে লিটন তার স্বভাবসুলভ খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেন। তবে ৩৫ রানে থাকার সময় বেরিয়ে এসে ম্যাকব্রাইনকে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে থামেন লিটন। তার কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য ৬১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। ২০২২ সালের আগস্টের পর তামিম প্রথম ফিফটি পাওয়ার পরের ওভারেই উইকেটে নবাগত হৃদয় ফেরেন ডকরেলের ক্রমাগত চাপের শিকার হয়ে। ডকরেল-ইয়াংয়ের চাপে ধুঁকতে থাকা তামিমও তাই থামেন ডকরেলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে, ৮২ বলে ৬৯ রানের ইনিংস শেষে। মুশফিকের সাথে যোগ দিয়ে এরপর মিরাজ ইনিংসের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। দুজনে মিলে শেষ দিকে গিয়ার পাল্টানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ৪৬-তম ওভারে ম্যাকব্রাইনের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৫৪ বলে ৪৫ রান শেষে ফেরেন মুশফিক। এক ওভার পরেই স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে অ্যাডেয়ারের শিকার হয়ে ৩৯ বলে ৩৭ রান শেষে ফেরেন মিরাজ। শেষ ওভারে অ্যাডেয়ার জোড়া আঘাত হানায় বাংলাদেশ গুটিয় যায় ২৭৪ রানে। দিন শেষে সেটাকেই যথেষ্ট প্রমাণ করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা।