• আইপিএল ২০২৩
  • " />

     

    সুদর্শনের সুধাময় ইনিংস ম্লান করে জাদেজার জাদুতে বৃষ্টি-বাধা উৎরিয়ে চেন্নাইয়ের 'পঞ্চম'

    সুদর্শনের সুধাময় ইনিংস ম্লান করে জাদেজার জাদুতে বৃষ্টি-বাধা উৎরিয়ে চেন্নাইয়ের 'পঞ্চম'    

    ফাইনাল, আহমেদাবাদ (টস-চেন্নাই/বোলিং)
    গুজরাট টাইটানস- ২১৪/৪, ২০ ওভার (সুদর্শন ৯৬, ঋদ্ধিমান ৫৪, গিল ৩৯, পাথিরানা ২/৪৪, জাদেজা ১/৩৮, চাহার ১/৩৮)
    চেন্নাই সুপার কিংস- ১৭১/৫, ১৫(১৫) ওভার (কনওয়ে ৪৭, দুবে ৩২*, রাহানে ২৭, মোহিত ৩/৩৬, নূর ২/১৭)
    ফলাফল: চেন্নাই ৫ উইকেটে জয়ী


     

    আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আম্বাতি রায়ুডু, সেই সাথে হয়ত মহেন্দ্র সিং ধোনিও। রূপকথার মত এক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে রায়ুডু ভাগ বসালেন রোহিত শর্মার গড়া খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ আইপিএল শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়ে। সেই সাথে ধ্বনি ভাগ বসালেন অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের সর্বোচ্চ আইপিএল জয়ের রেকর্ডে।

    বৃষ্টির কারণে খেলা ১৫ ওভারে নেমে এলে চার ওভারের পাওয়ারপ্লেতে শুরুটা দারুণ হয়েছিল চেন্নাইয়ের; রুতুরাজ গায়কোয়াড-ডেভন কনওয়ে মিলে তুলে ফেলেছিলেন ৫২ রান। ১৭১ রানের লক্ষ্যে এমনকি রশিদ খানের করা শেষ ওভারে দুজনে মিলে তুলেছিলেন ১৭ রান! তবে নিজের দ্বিতীয় ওভারে নূর আহমেদ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মুহূর্তেই। ২৬ রানে থাকা রুতুরাজকে ফেরানোর পর ম্যাচ সেরা কনওয়েকেও থামালেন ২৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংস শেষ, ওভারে দিলেন মাত্র ৬ রান। তবে উইকেটে এসেই প্রতি-আক্রমণ শুরু করে আবারও ম্যাচের রঙ বদলান আজিঙ্কা রাহানে। জশুয়া লিটলের পর রশিদ খানের ওপর চড়াও হয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন এবার নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা রাহানে। তবে ১১-তম ওভারে প্রথম বল করতে এসেই ১৩ বলে ২৭ রান শেষে তাকে থামান মোহিত শর্মা।

    ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোর ম্যাচে তখনও বাকি নাটক। এতক্ষণে একেবারেই ব্যাটে-বলে সুবিধা করতে না পারা শিভাম দুবে মেরে বসলেন টানা দুই ছয়, সেটাও রশিদ খানের স্পেলের শেষ দুই বলে। সেখান থেকেই বিশ্বাস পেয়ে নিজের শেষ ম্যাচে বিশেষ কিছু করতে চাইলেন রায়ুডুও। মোহিতের পরের ওভারে মেরে বসলেন ছয়, চার, ছয়। ম্যাচের পাল্লা তখন নিশ্চিতভাবেই ঝুঁকে গিয়েছে চেন্নাইয়ের দিকে। তবে অসাধারণ এক মৌসুমের শেষটাও হওয়া চাই যথার্থ। পরের বলেই ৮ বলে ১৯ রান শেষে রায়ুডুকে থামিয়ে ঠিক পরের বলে গোল্ডেন ডাকের গ্লানিতে ডোবালেন ধোনিকেও। ১৪-তম ওভারে এরপর শামি মাত্র ৮ রান দিলে শেষ বলে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন হয় ১৪ রান।

    নাটকীয় শেষ ওভারের প্রথম ৪ বলে দারুণভাবে নিজের কাজ সেরে মোহিত গোনেন মোটে ৪ রান। তবে উইকেটে যে তখনও আছেন জাদেজা। শেষ দুই বলে ১০ রান প্রয়োজন হলে ঠিক সেটাই করে দেখান তিনি! সামান্য কয়েক ইঞ্চি ব্যবধানে ইয়র্কার মিস হলে সেটার পূর্ণ ফায়দা লুটে মোহিতকে লং অনের ওপর দিয়ে মাঠছাড়া করেন জাদেজা। শেষ বলটায় লেগ স্টাম্পের ওপর ইয়র্কার করতে গিয়ে ফুল টস হয়ে গেলে সেটাও ঠান্ডা মাথায় ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠীয়েই দিলেন ভো দৌড়! বিজয়ের উল্লাসে মাতিয়ে হলুদ শিবিরে আনন্দ ছড়িয়ে দিলেন গুজরাটের ‘সুপারস্টার’!

    এর আগে ম্যাচটা শুরুতেই নিজেদের বাগে নিতে পারত চেন্নাই। দ্বিতীয় ওভারেই দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো শুবমান গিলকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন শুবমান গিল। তুষার দেশপান্ডের করা পায়ের ওপরের বলটা ফ্লিক করে ডিপ স্কয়্যার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন গিল। বল অবশ্য স্কয়্যার লেগে থাকা দীপক চাহারের হাতে চলে গেলেও মামুলি সেই সুযোগ তিনি ফেলে দেন; গিল তখন মাত্র ৩ রানে। সেই যে ম্যাচে আত্মবিশ্বাস পেল গুজরাট সেখান থেকে চাহারের করা পরের ওভারেই দুজন মিলে নিলেন ১৬ রান। ওই দেশপান্ডের পরের ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা রান আউটের সহজ সুযোগ মিস করলে ওভারে আসে ১৪ রান। তবে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে গুজরাট ওঠে পরের ওভারে আবারও চাহার নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হলে; সুযোগ সেবার পেলেব ২১ রানে থাকা ঋদ্ধিমান। দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতে তাই তুলে ফেলেন ৬২ রান।

    পাওয়ারপ্লের পর মাহিশ থিকশানার স্পিন পেয়ে লাগামছাড়া হয়ে উঠতে শুরু করেন গিল, টানা তিন চারে। তবে সেই স্পিনই পরের ওভারে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। জাদেজার দারুণ অফ ব্রেকে ক্ষণিকের জন্য পা বের করেছিলেন গিল; মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য সেটুকু সময়ই ছিল যথেষ্ট। বিদ্যুৎগতিতে স্টাম্প উপড়ে ধোনি যেন বার্তা দিলেন বয়স হলেও মর্চে পড়েনি ওই গ্লাভস জোড়ায়। ২০ বলে ৩৯ রানে গিল ফিরলেও মঞ্চ লুফে নেওয়ার জন্য এদিন প্রস্তুত নতুন নায়ক, যিনি কিনা আবার চেন্নাইয়ের ছেলেই। ঋদ্ধিমানের সাথে যোগ দিয়ে সুদর্শন যেন আগের দিনের ক্ষোভটাই ঝাড়লেন।

    দুজনে মিলে দলীয় শতরান ১২ রানে পূর্ণ করার পরের ওভারে ৩৬ বলে ঋদ্ধিমান ফিফটি পেয়ে যান। ১৯ বলে ২৩ রানে থাকা সুদর্শন ওই ওভারে ছয় মেরে যে হাত খুললেন এরপর যেন আগের দিনের ‘রিটায়ার্ড আউট’-এর ঘটনাটা মাঠেই সুরাহা করতে চাইলেন। চাহারের স্পেলের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ঋদ্ধিমানের ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস শেষ হলে সুদর্শন ফিফটি তুলে নেন ৩৩ বলে। ফিফটির পরের ওভারেই দেশপান্ডেকে টানা ১ ছয় ও ৩ চার মেরে নিলেন ২০ রান। সাথে যোগ দিয়ে গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াও তাকে দিয়েছেন জজ্ঞ সঙ্গ। ১৯-তম ওভারে দেশপান্ডের দুর্বিষহ এক দিনের ধকল আরও বাড়িয়ে দুজনে মিলে ১৮ রান নিলে শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই ছয় মেরে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সুদর্শন। তবে পরের বলেই পাথিরানার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে তাকে থামতে হয়ে ৪৭ বলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস শেষে। আইপিএলের ফাইনালের ইতিহাসে অবশ্য এটা ৩য় সর্বোচ্চ ইনিংস। ওই ওভারে পাথিরানা রশিদকেও রানের খাতা খোলার আগে ফেরালেও হার্দিক ১২ বলে ২১* রানে থেকে শেষ করায় গুজরাট পেয়ে যায় আইপিএল ফাইনাল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। বৃষ্টির কারণে সংশোধিত সংগ্রহ পরে শেষ বলে গড়ানো উত্তেজনাময় ফাইনালে ঠিকই টপকে চেন্নাই গড়েছে রেকর্ড।