বাংলাদেশকে বাস্তবতা বুঝিয়ে সামারাবিক্রমা-আসালাঙ্কার ফিফটিতে শ্রীলঙ্কার উড়ন্ত সূচনা
এশিয়া কাপ ২০২৩, গ্রুপ পর্ব, পাল্লেকেল (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ - ১৬৪, ৪২.৪ ওভার (শান্ত ৮৯, হৃদয় ২০, নাঈম ১৬, পাথিরানা ৪/৩২, থিকশানা ২/১৯, শানাকা ১/১৬ )
শ্রীলঙ্কা - ১৬৫/৫, ৩৯ ওভার (আসালাঙ্কা ৬২*, সামারাবিক্রমা ৫৪, নিসাঙ্কা ১৪, সাকিব ২/২৯, তাসকিন ১/৩৪, মাহেদী ১/৩৫)
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশকে বাস্তবতা বুঝিয়ে ঘরের মাঠে জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল শ্রীলঙ্কা। নাজমুল হোসেন শান্তর একক লড়াইকে ম্লান করে মাথিশা পাথিরানা-মাহিশ থিকশানাদের দাপটে ধোপে টেকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। মামুলি সেই লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে হোঁচট খেলেও সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালাঙ্কার ফিফটিতে পরে ৬৬ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
উইকেট কিছুটা কঠিন ছিল বলা চলে; বাংলাদেশ ইনিংসের শেষের দিকেই উইকেটে স্পিন ধরছিল বেশ। তবে ১৬৫ রানের লক্ষ্যে পেস দিয়েই আঘাত হানে বাংলাদেশ। তাসকিনের দারুণ এক বলের কোনও জবাব জানা ছিল না দিমুথ করুনারত্নের। স্টাম্প উপড়ে ফেলা সেই ওভারটা মেইডেন হলে তার পরিক্রমায় পরের ওভারে শরিফুল ইসলামের বেশ বাইরের এক বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাথুম নিসাঙ্কাও। উইকেটে এসেই সাদিরা প্রতি-আক্রমণে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার চেষ্টা করলেও অন্য প্রান্তে কুশল মেন্ডিস একেবারেই খোলসবন্দি ছিলেন। ১৭-তম বলে প্রথম রান পাওয়া মেন্ডিস ১০ম ওভারে সাকিবের আর্ম বল পড়তে না পেরে স্টাম্প খুইয়ে ফিরলে বিশ্বাস করতে শুরু করে বাংলাদেশ।
সেই বিশ্বাস চূর্ণ করতেও সময় নেয়নি সাদিরা-আসালাঙ্কা জুটি। আসালাঙ্কা এক দিকে বিপদ সাম্লালে সাদিরা নিজের খেলাটাই খেলেন। স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই দুজনের মনোযোগ ছিন্ন করতে উঠেপড়ে লাগার চেষ্টা করতে গিয়ে বাংলাদেশের পেসাররাও সেই অর্থে পরে লাইন-লেংথ ধরে রাখতে পারেননি। সাকিব-মাহেদী আঁটসাঁট স্পেল করলেও অন্য দিকে প্রায়শই সেই চাপতা লাঘব হয়েছে অন্যদের ব্যর্থতায়। দারুণ খেলতে থাকা সাদিরা ফিফটি পাওয়ার পর অনেকটা দ্রুত ম্যাচ শেষ করতে গিয়ে মাহেদীকে বেরিয়ে এসে খেলতে যান। তবে বল তার লাইন ধরে রাখায় সেটা মিস করে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ৭৭ বলে ৫৪ রান শেষে ফেরেন সাদিরা। উইকেটে এসেই ধনঞ্জয়া একই কাজ করতে গেলে সাকিবের প্রায় এক ইয়র্কারেই স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ধনঞ্জয়া। ক্ষীণ আশা জাগলেও সেই আশা মাথাচাড়া দিতে দেয়নি আসালাঙ্কা-শানাকা। ফিফটি পাওয়ার পর ৯২ বলে ৬২* রানে থেকে ঠিকই জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন আসালাঙ্কা।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই মাহিশ থিকশানা এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রানের খাতা খোলার অপেক্ষায় থাকা তানজিদ হাসান তামিমকে। শান্তকে নিয়ে থিকশানার স্পেল পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকা নাঈম শেখ এরপর মনোযোগ হারিয়ে বসেন আরেক স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভার প্রথম বলেই। ২২ বলে ১৬ রানে থাকার সময় বলে লাইনের বিপরীতে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফেরেন তিনি। উইকেটে এসে সাকিব আল হাসানও এরপর পারেননি থিতু হতে। মাথিশা পাথিরানার হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে দেরিতে ব্যাট চালালে উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন কুশল মেন্ডিস।
বিপদের মধ্যেই এক প্রান্ত আগলে লড়াই চালিয়ে যান শান্ত, মাঝের ওভারগুলোয় তাকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। ভাল শুরু করলেও ওয়েলালাগে-ধনঞ্জয়ার আঁটসাঁট বোলিংয়ে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া হৃদয় শিকল ভেঙে বের হওয়ার জন্য দাসুন শানাকাকে বেঁছে নিতে গেলেই ঘটে বিপদ। শানাকার হালকা ভেতরে ঢোকা বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বল মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ২০ রানে থাকা হৃদয়। উইকেটে এসে আক্রমণের ইঙ্গিত দেওয়া মুশফিক তার খেলার ধরন বজায় রাখতে গিয়ে পাথিরানার নিরীহ বাউন্সারে আপার কাট করে সরাসরি থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন; অথচ এই পাথিরানার আগের ওভারেই ব্যাটে বল লাগানোর পর উইকেটকিপার ক্যাচ নিলেও কোনও আবেদন না করাতে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।
উইকেট আসা যাওয়ার মিছিলে অন্য প্রান্তে নিজের ৪র্থ ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন শান্ত। তবে সঙ্গীর অভাবে ক্রমশই তার কাজটা কঠিন হয়ে আসে; ৩৬-তম ওভারে তো তার হাত ধরে বাংলাদেশ বাউন্ডারি পেয়েছিল ৫২ বল পর! এর পর আবার মিরাজের সাথে চরম ভুল বোঝাবুঝি! দুজনেই একই প্রান্তে আটকে গেলে পরে রান আউট হয়ে ফিরতে হয়েছিল মিরাজকে।উইকেটে এসে খাবি খেতে থাকা মাহেদীও এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছিলেন মাত্র ৬ রানেই। সেটারই পরিক্রমায় এক প্রান্তে শান্তকে বেঁধে ফেলার পর উইকেটের শিকারের জন্য থিকশানাকে আনা হলে আস্থার প্রতিদানটা ঠিকই দেন তিনি। দুর্দান্ত এক ভেতরে ঢোকা বলে শান্তকে পুরোপুরি বোকা বানিয়ে ১২২ বলে ৮৯ রানে শেষ করেন তার ইনিংস। পাথিরানার একই ওভারে পরে তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান ফিরলে মাত্র ১৬৪ রানেই থামে বাংলদেশের ইনিংস। দিনশেষে সেটা আগেভাগেই তাড়া করে বাংলাদেশের কাছে প্রচুর প্রশ্ন তুলেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।