• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    'অলরাউন্ড' মিরাজ, 'ধারাবাহিক' শান্ত, তাসকিন-শরিফুলের আগুনে বোলিংয়ে সুপার ফোরে বাংলাদেশ

    'অলরাউন্ড' মিরাজ, 'ধারাবাহিক' শান্ত, তাসকিন-শরিফুলের আগুনে বোলিংয়ে সুপার ফোরে বাংলাদেশ    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, গ্রুপ পর্ব, লাহোর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ - ৩৩৪/৫, ৫০ ওভার (মিরাজ ১১২, শান্ত  ১০৪, সাকিব ৩২*, নাইব ১/৫৮, মুজিব ১/৬২)
    আফগানিস্তান - ২৪৫, ৪৪.৩ ওভার (ইব্রাহিম ৭৫, শহীদি ৫১, রহমত ৩৩, তাসকিন ৪/৪৪, শরিফুল ৩/৩৬, মিরাজ ১/৪১)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৮৯ রানে জয়ী


     

    শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেই বাংলাদেশের দেখা মিলেছিল লাহোরে পা রাখা বাংলাদেশ যেন পুরো ভিন্ন রুপেই আবর্তিত হল। আফগানিস্তানের ওপর ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে সুপার ফোরে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। লাহোরের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও ‘মেকশিফট ওপেনার’ মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়ার পর তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামদের দুর্দান্ত স্পেলে বড় জয় দিয়ে বাংলাদেশ পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করেছে রান রেটের ব্যবধান।

    রান রেটের চিন্তার চেয়ে বড় চিন্তা ছিল জয় নিয়ে। লাহোরের উইকেটে ৩৩৪ রানের সংগ্রহ যথেষ্ট নাও হতে পারত একটু এদিক সেদিক হলেই। কিন্তু শুরু থেকেই তাসকিন, শরিফুলরা চেপে বসেন আফগানদের ওপর। দ্বিতীয় ওভারেই মেইডেন দেওয়ার পাশাপাশি শরিফুল ফেরান আফগানদের ভরসা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। আরেক ভরসা ইব্রাহিম জাদরান অবশ্য ঠিকই নিজের জাত চিনিয়ে চলেছিলেন। রহমত শাহর সাথে জুটি গড়ে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। তবে ৩৩ রানে থাকা রহমত আড়াআড়ি ব্যাটে তাসকিনের ভেতরে ঢোকা বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফিরলে শিকারের ঘ্রাণ পায় বাংলাদেশ।

    তবুও বাঁধা হয়ে থাকা ইব্রাহিম ঠিকই ফিফটি পূর্ণ করে আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলেছিলেন। হুট করেই অনেকটা স্রোতের বিপরীতে ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়ে যায় সুযোগ। হাসান মাহমুদের গুড লেংথের বল ইব্রাহিমের ব্যাটের কানা চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলে অবিশ্বাস্য এক লাফে বল লুফে নেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের দুর্দান্ত সেই ক্যাচে ৭৪ বলে ৭৫ রান করে ইব্রাহিম থামলে চেপে বসার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তবে আফগান অধিনায়ক দারুণ প্রতি আক্রমণ করে মাত্র ৮ ওভারে মধ্যেই নাজিবউল্লাহকে নিয়ে তুলে ফেলেন ৬২ রান; সেই সাথে নিজেও পেয়ে যান ফিফটি। তবে ইনজুরি শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে ফেরা মিরাজ ১৭ রানে নাজিবউল্লাহর স্টাম্প উপড়ে ফেললে পরের ওভারেই আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে বোলিংয়ে ফেরা শরিফুলের শিকার হয়ে থামেন ৬০ বলে ৫১ রান করে ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা শহীদি। সেখান থেকেই তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ে আফগানরা। শেষদিকে ১৫ বলে ২৪ রান করে রশিদ খান চেষ্টা করলেও সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। ১৯৩/৩ থেকে আট ওভারের মাঝেই ২৪৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। তাসকিনের শেষের জাদুর যেন কোনও জবাব ছিল না তাদের।

    এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নাঈম শেখের সাথে এদিন নামে নতুন ওপেনার মিরাজ, আর সুযোগটা মিরাজ নিয়েছিলেন দুহাত ভরেই। প্রথম পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মুজিব-উর-রহমানের দারুণ এক বলে স্টাম্প খুইয়ে ২৮ রানে নাঈম ফেরার তিন বলের মধ্যেই এদিন শূন্য রানে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। তবে সেই ধাক্কা সামলে মিরাজ-শান্ত দারুণভাবে দলের হাল ধরেন। এই এশিয়া কাপেই ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ওপেন করেছিলেন মিরাজ প্রথমবারে মত। আর এবার তো নিজেকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়। ৬৫ বলে মিরাজ ফিফটি পূর্ণ করার পর অন্য প্রান্তে শান্ত দেখিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাটিং।

    ৩০ ওভারের মাথায় জুটি শতরান ছুঁলে পরের ওভারে দারুণ এক ছয় মেরে ৫৭ বলে ফিফটি পেয়ে যান শান্ত। তবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় রান নিতে গিয়ে শান্তর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। অবশ্য সেই চোটের শঙ্কা কাটিয়ে শান্ত গিয়ার বদলান দ্রুতই, যেটার সুযোগ নিয়ে মিরাজও প্রাণবন্ত ব্যাটিং করতে থাকেন, ফারুকীর এক ওভারে তো নেন ১৭ রান দুজন মিলে।

    তবে মাইলফলকের কাছাকাছি এসে দুজনের ব্যাটিংয়ের গতি কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়। ৪১-তম ওভারে ১১৫ বলে মিরাজ ঠিকই পেয়ে যান দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এক ওভার পরে মুজিবকে দারুণ এক ছয় মারতে গিয়ে চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ১১৯ বলে ১১২ রান করা মিরাজ। তার দুই বল পরেই শান্ত পেয়ে যান দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি, ১০১ বলে। তবে সেঞ্চুরির পর শান্তও বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে রান আউট হয়ে থামেন ১০৫ বলে ১০৪ রান শেষে; উইকেটের মাঝে পিছলিয়ে গিয়ে রান আউট হওয়ার জন্য নিজের ভাগ্যকে অবশ্য দষতেই পারেন শান্তও।  উইকেটে এসেই মারমুখী ব্যাটিং করা মুশফিককেও অবশ্য এরপর রান আউটের শিকার হয়ে ফিরতে হয় ১৫ বলে ২৫ রানে। কিন্তু রানের চাকা ততক্ষণে সচল হয়ে যাওয়ায় উইকেটে এসে সাকিব সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ব্যাট চালাতে থাকেন। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশ তাই তোলে ৩২ রান; আর সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ৩২* রানে। তাতেই পাওয়া বড় সংগ্রহের জন্য শেষমেশ রানরেটের ব্যবধানে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের সুপার ফোরের জায়গা।