• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    সমীকরণের মারপ্যাঁচে বেঁধে নবী, শহীদি, রশিদদের আশা ভেস্তে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা

    সমীকরণের মারপ্যাঁচে বেঁধে নবী, শহীদি, রশিদদের আশা ভেস্তে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, গ্রুপ পর্ব, লাহোর (টস-শ্রীলঙ্কা/ব্যাটিং)
    শ্রীলঙ্কা - ২৯১/৮, ৫০ ওভার (মেন্ডিস ৯২, নিসাঙ্কা ৪১, আসালাঙ্কা ৩৬, নাইব ৪/৬০, রশিদ ২/৬৩, মুজিব ১/৬০)
    আফগানিস্তান - ২৮৯, ৩৭.৪ ওভার (নবী ৬৫, শহীদি ৫৯, রহমত ৪৫, রাজিথা ৪/৭৯, ধনঞ্জয়া ২/১২, ওয়েলালাগে ২/৩৬)
    ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২ রানে জয়ী


     

    সুপার ফোরে যেতে আফগানিস্তানকে লক্ষ্য তাড়া করতে হত ৩৭.১ ওভারে। তবে ছিল আরও শর্ত - ২৯২ রানের লক্ষ্যে ২৯১ রানে থাকার সময় যদি ছয় মেরে শেষ করতে পারে তাহলে ৩৭.২ ওভারের মধ্যে জয় পেলেও চলবে। শেষ বলে চার মেরে জয় ছিনিয়ে নিলে ৩৭.৪ ওভারে জয় পেলেও চলবে। অথচ আফগানিস্তানের পুরো স্কোয়াড যেন এই তথ্য জানতই না! ৩৭.১ ওভারে যখন অন্য প্রান্তে মুজিব-উর-রহমান ফিরে গেলেন তখন রশিদ খান হতাশায় মাঠে গা এলিয়ে দেওয়াটাই বাদ রেখেছিল। উইকেটে আসা ফজলহক ফারুকীও নিজের দ্বিতীয় বলে পেলেন নিরীহ এক ফুল টস, যেটা তিনি টেস্টের ধরনে ঠেকালেন! ওই বলটাতেও সিঙ্গেল নিয়ে রশিদ খানকে স্ট্রাইকে আনতে পারলে আফগানদের ভাগ্য খুলতে পারত। অনেক যদি-কিন্তুর সমীকরণ থাকলেও সব বাঞ্চাল করে শেষমেশ ওই ওভারের চতুর্থ বলেই আফগানদের গুটিয়ে জয় তুলে নিয়ে সুপার ফোরে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

    ২৯২ রানের লক্ষ্যে রাজিথা-পাথিরানার বদৌলতে এক অঙ্কের ঘরে ফিরেছিলেন দুই ওপেনারই। হাত খুলে খেলতে থাকা নাইবও ১৬ বলে ২২ রানে ফিরলে আফগানদের আশা সেখানেই ক্ষীণ হয়ে যায়। কিন্তু হুট করেই ঘুরে দাঁড়িয়ে আফগানদের আশা দেখাতে শুরু করেন রহমত-শহীদি জুটি। ইনিংসের গতি বাড়িয়ে আফগান স্কোয়াডে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করা এই জুটি ভাঙে ১৮.৪ ওভারে, ৪০ বলে ৪৫ রান করা রহমতের বিদায়ে। ততক্ষণে ১২১ রান উঠে যাওয়াইয় এরপর উইকেটে এসেই তান্ডব চালান নবী। কোনও বোলারকেই ছেড়ে কথা না বলে ২৪ বলে ফিফটি করে হয়ে যান আফগানিস্তানের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডের অধিকারী। তবে আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে থিকশানার শিকার হয়ে তিনি ৩২ বলে ৬৫ রানের অসামান্য ইনিংস শেষে থামলেও আফগানরা ম্যাচে ছিল। শহীদি ফিফটি তুলে নিলে উইকেটে এসেই আক্রমণ চালান জানাত।

    তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৩২-তম ওভারে ওয়েলালাগের জোড়া শিকারে। প্রথম বলেই ১৩ বলে ২২ রান পাওয়া জানাতকে ফিরিয়ে চতুর্থ বলে থামান ৬৬ বলে ৫৯ রান করা আফগান অধিনায়ককে। ম্যাচ থেকে যখন তারা কার্যত ছিটকে গিয়েছে মনে হচ্ছিল তখন নাজিবউল্লাহকে নিয়ে আবারও ম্যাচের ভোল পালটে দেন রশিদ। রাজিথার শেষ ওভারে ১৫ বলে ২৩ রান শেষে বদলি ফিল্ডার হেমন্তর দারুণ ক্যাচে নাজিবউল্লাহ থামলেও এর পরের ওভারে ১২ রান নিয়েছিলেন রশিদ। তবে ৩৭-তম ওভারের ওই সমীকরণের মারপ্যাঁচ বুঝতে না পেরেই আফগানদের বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই।

    টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয়েছিল দারুণ। দিমুথ করুনারত্নে-পাথুম নিসাঙ্কার জুটি আফগানিস্তানের ওপেনিং বোলিংকে অনেকটাই অকার্যকর করে এগিয়ে চলেছিলেন দুরন্ত গতিতে। প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ৬২ রান তুলে ফেলার পর অবশ্য পরের ওভারেই থামতে হয় করুনারত্নেকে। এর আগে তাকে ফেরানোর সুযোগ দুই বার তৈরি করেছিলেন গুলবদিন নাইব। শেষমেশ তার আঘাতেই ৩৫ বলে ৩২ রান করে থামেন করুনারত্নে। অন্য প্রান্তে ছুটে চলা নিসাঙ্কাও এরপর অনেকটা উইকেটটা বিলিয়েই দেন তাকে, ৪০ বলে ৪১ রান করার। নিজের পরের ওভারেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি পাওয়া সাদিরা সামারাবিক্রমার উইকেটটাও পেয়ে যান নাইব। ভাল শুরু করেও হুট করেই খেই হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা।

    ২০ ওভারেই অবশ্য দলীয় শতরান পূর্ণ করে শ্রীলঙ্কা রান রেটে ব্যাঘাত ঘটতে দেয়নি। আসালাঙ্কার সাথে জুটি গড়ে সেটা হতে দেননি কুশল মেন্ডিস। বিশেষ করে রশিদ খানের ওপর চড়াও হওয়ার পর ৫৫ বলে ফিফটি পেয়ে যান তিনি। মাঝে কিছু সময় মিইয়ে যাওয়ার পর সেই চাপ থেকেই হাত খুলতে গিয়ে আক্রমণে ফেরা রশিদের শিকার হয়ে থামতে হয় আসালাঙ্কাকে। ১০২ রানের জুটি ভাঙে আসালাঙ্কার ৪৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংস শেষে। শিকারের ঘ্রাণ পেয়ে আফগানরা এরপর চেপে বসে শ্রীলঙ্কার ওপর। ক্রমবর্ধমান চাপের ফলশ্রুতিতে মুজিবের ভাসিয়ে দেওয়া বলে স্টাম্প খুইয়ে উইকেটে আসা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বিদায় ঘটে ১৪ রান করে। পরের ওভারে স্রিলাঙ্কার ভিতে লাগে সবচেয়ে বড় আঘাত। শানাকার দেওয়া ফিরতি ক্যাচ রশিদ ফেলে দিলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রান আউটের শিকার হয়ে ফিরে যান ৮৪ বলে ৯২ রান করা মেন্ডিস।

    ওই ওভারেই শানাকা স্টাম্প খুইয়ে ফিরলে মহাবিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। তবে সেই বিপদ থেকে উত্তরণের উপায় বাতলে দেন দুনিথ ওয়েলালাগে ও মাহিশ থিকশানা। শেষ ৩ ওভারে ৩২ রান তোলেন এই দুজন মিলে। শেষ ওভারে নাইবের চতুর্থ শিকার হয়ে ২৪ রানে থিকশানা থামলেও ওয়েলালাগে অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৩৩ রানে, যার বদৌলতে শ্রীলঙ্কা পায় ২৯১ রানের শক্ত সংগ্রহ। আফগানরা দুর্দান্ত লড়াই করলেও সমীকরণ জানা ও মাথা ঠাণ্ডা রাখার কৌশল কাজে লাগিয়ে সেই সংগ্রহ নিয়েই পরে সুপার ফোরে যায় শ্রীলঙ্কা।