ইমাম-রিজওয়ানের ফিফটিতে পাকিস্তানের সহজ জয়
এশিয়া কাপ ২০২৩, গ্রুপ পর্ব, লাহোর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ - ১৯৩, ৩৮.৪ ওভার (মুশফিক ৬৪, সাকিব ৫৩, নাঈম, রউফ ৪/১৯, নাসিম ৩/৩৪, ইফতিখার ১/২০)
পাকিস্তান - ১৯৪/৪, ৩৯.৩ ওভার (ইমাম ৭৮, রিজওয়ান ৬৩*, ফাখার ২০, শরিফুল ১/২৪, তাসকিন ১/৩২, মিরাজ ১/৫১)
ফলাফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
পাকিস্তানের কাছে নিদারুন পরাজয় স্বীকার করে সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটেও ব্যাটিং নিয়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া কেউ লড়াই করতে না পারায় মাত্র ১৯৩ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ইমাম-উল-হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ফিফটিতে সেই লক্ষ্য উৎরিয়ে পাকিস্তান ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচটা জয় দিয়েই রাঙিয়েছে।
স্বল্প পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশের পেসাররা লড়েছিল চোখে চোখ রেখে। ফ্লাডলাইট বিভ্রাটের কারণে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। এরপর শুরুটা ভাল করে শরিফুলের বলে স্লিপে নাঈম ক্যাচ ফেললেও হতাশ না হয়ে পরে প্রথম পাওয়ারপ্লের শেষ বলে ফাখার জামানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। উইকেটে এসে বাবর আজমও ছিলেন না স্বস্তিতে। তাসকিন, হাসান, শরিফুলরা আঁটসাঁট লাইনে বল করলে তাদের সম্মান দিয়েই খেলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, তবে দু-দুটো রিভিউ নষ্ট করে পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাসটাও এক অর্থে বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরই মধ্যে মনোযোগ চ্যুতি হওয়ায় তাসকিনের গুড লেংথের এক বল স্টাম্পে ডেকে এনে ১৭ রানে ফেরেন বাবর।
সেই চাপ ধরে রেখে ১৯ ওভার টানা পেসারদের দিয়ে বল করানোর পর প্রথম স্পিনার আক্রমণে আনেন সাকিব। তবে উইকেটে স্পিনারদের জন্য তেমন একটা সহায়তা না থাকায় সেই অধ্যায়টা কাজে লাগিয়ে ম্যাচে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলে পাকিস্তান। উইকেটে আসা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে উইকেটে থিতু হওয়া ইমাম দলের জয়ের ভিত গড়ে ফেলেন সহজেই। ২৮-তম ওয়ানডে ফিফটি পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে ম্যাচ শেষ করতে যাওয়ার তাগিদেই উইকেটটা হারান ইমাম। মিরাজকে টানা দুই বাউন্ডারি মেরে পরের বলেও স্লগ সুইপ করতে গেলে তার আর্ম বলে স্টাম্প খুইয়ে শেষ হয় ৮৪ বলে ইমামের ৭৮ রানের ইনিংস। তবে এরপর বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরার বিন্দুমাত্র সুযোগ দেননি রিজওয়ান। ১১-তম ফিফটি পূর্ণ করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন ৭৯ বলে ৬৩* রানের ইনিংসে।
লাহোরের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে এর আগে পাকিস্তানের পেসের জন্য কোনও উত্তর তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ; সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম চেষ্টা করলেও দুইশো রানও করতে না পারার জন্য বাংলাদেশ তাদের দলগত ব্যর্থতাকেই কাঠগড়ায় তুলবে। হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহীন শাহ আফ্রিদিদের সাথে ফাহিম আশরাফের দোর্দণ্ড প্রতাপে বাংলাদেশেরেই আত্মসমর্পণ এক অর্থে ম্যাচের ফলাফলটাও লিখে ফেলেছিল।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে ফিরেছিলেন আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে উইকেটে এসে দারুণ শুরু করেও নিজের স্বভাবের বশেই শাহীন আফ্রিদির বলে শট খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচ দিয়ে ১৩ বলে ১৬ রানে ফেরেন লিটন। আগের বলে স্লোয়ার দিলে পরের বলটা যে জোরেশোরে হতে পারে সেটার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন না এই ম্যাচ দিয়েই দলে ফেরা লিটন। তার পরিক্রমায় হারিস রউফের খুনে পেসের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির কোনও ছাপ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ তাদের খেলায়। কোনও উত্তর জানা ছিল দুই তরুণ ব্যাটার নাঈম শেখ ও তাওহিদ হৃদয়েরও। ২০ রানে রউফকে মামুলি এক ফিরতি ক্যাচ দিয়ে নাঈম ফেরার পরপর ২ রানে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন হৃদয়, রউফের ১৪৫ কিমি গতির তোপে।
৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর সাকিব-মুশফিক জুটি চেষ্টা করেছিলেন বিপদ সামলানোর। ২০-তম ওভারে নাসিম শাহর বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাকিব বেঁচে গেলে প্রতি-আক্রমণে যেয়ে ৫৩ বলে তুলে নেন নিজের ৫৪-তম ওয়ানডে ফিফটি। অন্যদিকে মুশফিক ফিফটির কাছাকাছি চলে এলে থিতু হয়ে যাওয়া সাকিব ফাহিমের নিরীহ এক শর্ট বলে পুল করে বাউন্ডারিতে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে থামেন ৫৭ বলে ৫৩ রানে। অধিনায়কের বিদায়ের পর মুশফিক পেয়ে যান নিজের ৪৬-তম ওয়ানডে ফিফটি। এরপরই যেন শুরু হয়ে যায় ধ্বস। ১৬ রানে করে উইকেটে আসা শামীম নিজের উইকেটটা এক অর্থে উপহার দিলেন ইফতিখারকে। দুই ওভার পরে হারিসের পেসে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক থামেন ৮৭ বলে ৬৪ রানে। এক ওভারের মধ্যেই রউফ ও নাসিম এরপর বাংলাদেশের লেজ গুটিয়ে ফেললে ১৯৩ রানেই থামে তারা।