শানাকা, সামারাবিক্রমাদের গর্জনে সুপার ফোরেও লেজ গুটাতে হল বাংলাদেশকে
এশিয়া কাপ ২০২৩, সুপার ফোর, কলম্বো (টস-বাংলাদেশ/ফিল্ডিং)
শ্রীলঙ্কা - ২৫৭/৯, ৫০ ওভার (সামারাবিক্রমা ৯৩, মেন্ডিস ৫০, নিসাঙ্কা ৪০, হাসান ৩/৫৭, তাসকিন ৩/৬২, শরিফুল ২/৪৮)
বাংলাদেশ - ২৩৬, ৪৮.১ ওভার (হৃদয় ৮২, মুশফিক ২৯, মিরাজ ২৮, শানাকা ৩/২৮, পাথিরানা ৩/৫৮, থিকশানা ৩/৬৯)
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২১ রানে জয়ী
এশিয়া কাপের এবারের আসরে দ্বিতীয়বারের দেখায় আবারও শ্রীলঙ্কার কাছে নতি স্বীকার করল বাংলাদেশ। সাদিরা সামারাবিক্রমার দারুণ ইনিংসের সাথে কুশল মেন্ডিসের ফিফটিতে শ্রীলঙ্কার লড়াকু সংগ্রহই শেষমেশ যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াল বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে। তাওহিদ হৃদয় এক প্রান্ত আঁকড়ে ধরে নিঃসঙ্গ লড়াই করলেও তা ভেস্তে দিয়ে নায়ক শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা, মাথিশা পাথিরানা, মাহিশ থিকশানারা।
২৫৮ রানের লক্ষ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ এক প্রান্তে নিজের স্বভাবজাত খেলাটা দেওয়ার চেষ্টা করলেও অন্য প্রান্তে নাঈম শেখ আরও একবার ছিলেন খোলসবন্দি। প্রথম পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই শানাকার খাটো লেংথের বল পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফেরেন ২৯ বলে ২৮ রান করা মিরাজ। নিজের তৈরি করা ক্রমবর্ধমান চাপের শিকার হয়ে এক ওভার পরে নিজেই থামেন নাঈম, শানাকার দ্বিতীয় শিকার হয়ে, ৪৬ বলে ২১ রান শেষে। এক ওভার পরেই দারুণ এক রিভিউয়ের সুবাদে সাকিব আল হাসানকে মাত্র ৩ রানেই থামান পাথিরানা। এর দুই ওভার পরে আরও একবার ভাল শুরু করে উইকেট দিয়ে আসেন লিটন দাস; উইকেটের পেছনে মেন্ডিস ক্যাচ ফেলে দিতে দিতেও লুফে নিলে আর পেছন ফিরে অপেক্ষা করেননি ২৪ বলে ১৫ রান করা লিটন।
৮৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর বিপদ থেকে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন মুশফিক-হৃদয় জুটি। তবে ৩০ ওভারে দুজনে মিলে দলকে ১২৪ রানে নিতে পারায় চাপ বাড়তেই থাকে। সেই চাপের বশেই গিয়ার পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেন দুজন ৩৮ ওভারের দিকে এসে। শানাকা তখন আবার আক্রমণে এলে তাকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড অফে রাজিথার ক্যাচে থামেন ৪৮ বলে ২৯ রানে থাকা মুশফিক। উইকেটে এসে সুবিধা করতে না পারা শামীম হোসেন মাত্র ৫ রানে থিকশানার পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিলে কার্যত আশা শেষে হয়ে যায়। তবে ৭৩ বলে নিজের ৪র্থ ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করা হৃদয় তবুও চেষ্টা করেছিলেন আপন আঙ্গিকে। থিকশানার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে তিনি ৯৭ বলে ৮২ রানে থামলে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটাও ঠোকা হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এরপর তাসকিন ও শরিফুল ফিরলে শেষ জুটিতে চেষ্টা করেছিলেন নাসুম-হাসান। তবে ২০ রানের ওই জুটি কেবলই ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছে।
এর আগে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে শুরু থেকেই চেপে ধরার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের করা ৬ষ্ঠ ওভারে দিমুথ করুনারত্নে টানা দুই চারে হাত খুলতে গেলে দারুণভাবে ফিরে জবাব দেন হাসান। উইকেটের পেছনে ১৭ বলে ১৮ রান করা করুনারত্নেকে তালুবন্দি করিয়ে নিজের স্বভাববিরুদ্ধ উদযাপনে মাতেন হাসান। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৫১ রান তুলে তবুও বাংলাদেশকে চেপে ধরার সুযোগ দেননি পাথুম নিসাঙ্কা।
তবে সাকিব-নাসুমের আঁটসাঁট লাইনের বোলিংকে যোগ্য সম্মান দিয়ে খেলতে গিয়ে কিছুটা খোলসবন্দি হয়ে যান নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস দুজনেই। পরের দশ ওভারে তাই শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে মোটে ৩৪ রান। দুজনের জুটি পঞ্চাশ পার করার পর শিকল ছিঁড়ে বেরুতে গিয়ে শরিফুল ইসলামের পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে থামেন ৬০ বলে ৪০ রান করা নিসাঙ্কা। রয়েসয়ে খেলে ৬৯ বলে মেন্ডিস এরপর ফিফটি তুলে নিলেও শরিফুলের ওই ওভারেই ফেরেন মেন্ডিস। শরিফুলের বাউন্সারে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ৭৩ বলে ৫০ রানে থামেন মেন্ডিস। পরের ৫ ওভারে ১৯ রান এলে সেই চাপে তাসকিনের শিকার হয়ে থামেন ২৩ বলে ১০ রান করা চারিথ আসালাঙ্কা। সাকিব-তাসকিনের আঁটসাঁট স্পেলের সুবাদে এর পরপরই মাত্র ৬ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে হাসানের শিকার হয়ে থামেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
তবে সেখান থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরতে থাকে শ্রীলঙ্কার দিকে। গিয়ার পালটে ৪৬ বলে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন সামারাবিক্রমা, সাথে যোগ্য সঙ্গ দেন শানাকা। তবে সাকিবের ৪৫-তম ওভারে ৫ রান এলে সেই চাপে পরের ওভারে হাসানকে আক্রমণ করতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে থামেন ৩২ বলে ২৪ রান করা শানাকা। সামারাবিক্রমা অবশ্য ছুটে চলেন দুর্বার গতিতে। শেষ ৩ ওভারে তাই শ্রীলঙ্কা তোলে ৩১ রান। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৭২ বলে ৯৩ রানের ইনিংসে ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছেন এই ব্যাটার, যার কারণে হয়েছেন ম্যাচ সেরাও।