• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    কুলদীপের স্পিন-বিষে নীল পাকিস্তান

    কুলদীপের স্পিন-বিষে নীল পাকিস্তান    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, সুপার ফোর, কলম্বো (টস-পাকিস্তান/ফিল্ডিং)
    ভারত - ৩৫৬/২, ৫০ ওভার (কোহলি ১২২*, রাহুল ১১১*, গিল ৫৮, শাদাব ১/৭১, আফ্রিদি ১/৭৯)
    পাকিস্তান - ১২৮, ৩২ ওভার (ফাখার ২৭, সালমান ২৩, ইফতিখার ২৩, কুলদীপ ৫/২৫, শার্দুল ১/১৬, হার্দিক ১/১৭)
    ফলাফল: ভারত  ২২৮ রানে জয়ী


     


    বৃষ্টির বাগড়াতে খেলা দুই দিন গড়াল ঠিকই, সেই সাথে উত্তেজনাটাও যেন মিইয়ে গেল অনেকটাই। ম্যাচটাকে ম্যাড়ম্যাড়ে বানিয়ে ভারত পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েই সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল। রোহিত শর্মা-শুবমান গিলের সেঞ্চুরি ওপেনিং জুটির পর ভিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভারত গড়েছিল রানের পাহাড়ে। সেই পাহাড়ে পাকিস্তানকে পিষ্ট করে কুলদীপ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহদের দাপটে ভারত যেন একটা বার্তাই দিয়ে রাখল।

    ৩৫৭ রানের লক্ষ্যে পঞ্চম ওভারেই বুমরাহর দারুণ এক আউট সুইঙ্গারে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ইমাম-উল-হক। উইকেটে এসে এরপর বাবর আজমও একেবারেই স্বস্তিতে না থাকলে আক্রমণে এসেই দুর্দান্ত এক ভেতরে ঢোকা বলে ২৪ বলে ১০ রান করা পাকিস্তান অধিনায়কের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর বৃষ্টি বাগড়া দিলেও লক্ষ্য তাড়া পঞ্চাশ ওভারেই থেকে যায়। বৃষ্টির পরপর খেলা শুরুর প্রথম ওভারেই শার্দুল ঠাকুরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রানেই ফিরে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।

    সেখান থেকে ইনিংস মেরামত করতে সময় নিতে থাকেন ফাখার জামান ও আঘা সালমান। তবে আক্রমণে কুলদীপ আসতেই যেন সেই প্রতিরোধটাও ধোপে টেকেনি। সালমানের মুখে বল লেগে রক্ত ঝরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। এই চায়নাম্যানের ভাসিয়ে দেওয়া বলে স্টাম্প খুইয়ে ৫০ বলে ২৭ রানে ফাখার ফেরার কিচ্ছুক্ষণ পরেই তার পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৩২ বলে ২৩ রানে ফেরেন সালমান। ২৪-তম ওভারে সেই যে সালমান ফিরলেন এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডার লুটিয়ে পড়ল তাসের ঘরের মত। কুলদীপের তৃতীয় শিকার হয়ে শাদাব খান ফেরায় নিজের পরের ওভারে লড়তে থাকা ইফতিখার আহমেদকে ফেরান ফিরতি ক্যাচে। নিজের পরের ওভারে ফাহিম আশরাফের স্টাম্প উপড়ে ফেললে সেখানেই শেষ হয় পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণের অধ্যায়।  

    দুই দিনব্যাপী এই ম্যাচের আগের দিনে পাকিস্তানের ওপেনিং স্পেল সামাল দিতে যেন বদ্ধপরিকর ছিলেন রোহিত শর্মা-শুবমান গিল জুটি। দ্বিতীয় ওভারেই নাসিম শাহর কিছুটা খাটো লেংথের বল থার্ড ম্যানের উদ্দেশ্যে উড়িয়ে মেরেও শাহীন শাহ আফ্রিদির কিছুটা শ্লথ নড়াচড়ায় বেঁচে যান গিল। ওই নাসিমের দারুণ এক বলে অষ্টম ওভারে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলে ইফতিখার আহমেদ চেষ্টাই করেননি। দুবার বেঁচে গিয়ে পেসারদের গিল আক্রমণ করা শুরু করলে তাতে যোগ দেন এতক্ষণ রয়েসয়ে খেলা রোহিত। পেসারদের অধ্যায় পার হয়ে গেলে শাদাব আক্রমণে এলে গিয়ার পাল্টান দুজনেই। শাদাবের করা ১৩-তম ওভারে ৩৭ বলে গিল ফিফটি পূর্ণ করলে ওই ওভারে টানা দুই ছয়, এক চারে রোহিত ইঙ্গিত দেন জ্বলে ওঠার। শাদাবের পরের ওভারে তাকে ছয় মেরে ৪২ বলে ফিফটি পেয়ে যান ভারত অধিনায়ক। তবে প্রতিশোধটা শাদাব ঠিকই নেন নিজের পরের ওভারে; তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দিয়ে রোহিত থামেন ৪৯ বলে ৫৬ রানে। ওই উইকেটের পরিক্রমায় পরের ওভারে আফ্রিদিকে ফেরানো হলে ঠিকই আস্থার প্রতিদান দিয়ে গিলকে থামান এক স্লোয়ারে; কাভারে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে গিল থামেন ৫২ বলে ৫৮ রানে। এর কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি হানা দিলে রাহুল-কোহলি মাঠ ছাড়েন ২৪.১ ওভারে।

    আজ সেখান থেকেই খেলা শুরু হলে নাসিম আরও একবার আগুন ঝরিয়েছিলেন। তবে শুরুর অধ্যায়টা একবার পারে করে ফেলার পর রাহুল-কোহলি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ১৪৭ রানে দিন শুরু করা ভারত ৩৫ ওভারের মধ্যেই তুলে ফেলে ২২৫ রান; সেই সাথে একাদশে ফিরেই রাহুল পেয়ে যান ফিফটি। অন্য প্রান্তে নিয়মিত প্রান্ত বদল করতে থাকা কোহলিও এরপর ৫৫ বলে পেয়ে যান তার ৬৬-তম ওয়ানডে ফিফটি। কোহলি ফিফটি পেয়ে গেলে দুজনেই গিয়ার পাল্টান একসাথে।

    আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে আধা সুযোগ দিয়ে দুজনেই রেহাই পেলেও হিসেব করে ঠিকই রানের চাকা সচল রাখেন। বিশেষ করে ইফতিখার আহমেদকে দুজনেই আক্রমণ করতে থাকার পর এক নাসিমকে ছেড়ে এরপর আর কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি দুজন। তবে সেই নাসিমের নবম ওভারেই দুর্দান্ত এক ছয়ে ৯৬ রানে গিয়ে কোহলি যেন মনে করিয়ে দিলেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রউফকে মারা সেই ছয়ের কথা। তাকে থামানো যে দুষ্কর কাজ হবে এদিন সেটা বুঝেই ওই ওভারের শেষ বলে সেঞ্চুরি পেয়ে যান রাহুল। বল প্রতি ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটা দলে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্নগুলো যেন তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিল। অন্যদিকে ১৩,০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক স্পর্শ করার পরের বলেই কোহলি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, ৮৪ বলে। ইনিংস ও ম্যাচের হিসেবে সবচেয়ে কম সময়ে এই অসামান্য মাইলফলক স্পর্শ করার পর দুজনে মিলে শেষ তিন ওভারে ৩৭ রান। ৯৪ বলে কোহলি ১২২* রান ও ১০৬ বলে কোহলি ১১১* রানে অপরাজিত থাকলে ভারত পায় ৩৫৬ রানের সুবিশাল সংগ্রহ।