• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    সুপার সাকিবদ্বয়ের সাথে দলীয় নৈপুণ্যে জয়ের তৃপ্তি নিয়েই বাংলাদেশের এশিয়া কাপ যাত্রার সমাপ্তি

    সুপার সাকিবদ্বয়ের সাথে দলীয় নৈপুণ্যে জয়ের তৃপ্তি নিয়েই বাংলাদেশের এশিয়া কাপ যাত্রার সমাপ্তি    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, সুপার ফোর, কলম্বো (টস-ভারত/বোলিং)
    বাংলাদেশ- ২৬৫/৮, ৫০ ওভার (সাকিব ৮০, হৃদয় ৫৪, নাসুম ৪৪, শার্দুল ৩/৬৫, শামি ২/৩২, কৃষ্ণা ১/৪৩)
    ভারত - ২৫৯, ৪৯.৫ ওভার (গিল ১২১, অক্ষর ৪২, সূর্যকুমার ২৬, মোস্তাফিজুর ৩/৫০, সাকিব ২/৩২, মাহেদী ১/৫০)
    ফলাফল: বাংলাদেশের ৬ রানে জয়ী


     


    এশিয়া কাপের শেষটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েই শেষ করল বাংলাদেশ। ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেল ভারতকে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ শেষ করল পাকিস্তানের ওপরে থেকে। সাকিব আল হাসানের অল-রাউন্ড নৈপুণ্য, নাসুম আহমেদের ব্যাটে-বলে কার্যকর অবদান, একাদশে ফিরেই মোস্তাফিজুর রহমানের উইকেটে ফেরা এবং সর্বোপরি অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত স্পেল - বাংলাদেশ আজ জয় পেল দলীয় এক প্রচেষ্টাতেই।

    ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ভারতকে রান তাড়ায় নামিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মত। দ্বিতীয় বলে রোহিত শর্মাকে তানজিম সাকিব ফেরানোর পর আরেক অভিষিক্ত তিলক ভার্মাকেও ফিরিয়েছিলেন সাকিব। তবে লোকেশ রাহুলকে সঙ্গী করে এরপর নিজেদের গুছিয়ে নেন শুবমান গিল। রাহুল এক প্রান্তে রয়েসয়ে খেললেও গিল খেলতে থাকেন আপন ছন্দে; ১৭ ওভারের মধ্যে তারা তুলে ফেলে ৭৪ রান। তবে এক প্রান্তে আটকে যাওয়া ৩৯ বলে ১৯ রানে থাকা রাহুলকে লক্ষ্য বানিয়ে এরপরের ওভারে মাহেদী তাকে ফিরিয়ে করেন উইকেট-মেইডেন। তবে অবিচল গিল ছয় মেরে ৬১ বলে পেয়ে যান তার ফিফটি। বাংলাদেশের স্পিনাররাও নাছোড়বান্দার মত লেগে থেকে অন্য প্রান্তে চাপ তৈরি করে গেলে ঈশান কিষান ৫ রানে ফেরেন মিরাজের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে।

    গিল এরপর লড়াই চালিয়ে যান সূর্যকুমার যাদবের সাথে। তবে ৩২ ওভারে ১৩৭ রান তুলে ভারতের প্রয়োজনীয় রান রেট যখন ৭.১৬ ছুঁয়েছে তখন সেটার সুযোগ নিয়ে সাকিব আল হাসান উপড়ে ফেলে.২৬ রানে থাকা  সূর্যকুমারের স্টাম্প। উইকেটে এসে সুবিধা করতে না পারা জাদেজাও ফিরে যান মাত্র ৭ রানে, মোস্তাফিজুরের কাছে স্টাম্প খুইয়ে। আরও একবার মোস্তাফিজুরের শিকার হয়ে ভারতের আশা ক্ষীণ করে জাদেজা ফিরলেও গিল যেন পণ করেছিলেন একাই কিছু করে দেখানোর। পরের ওভারেই ১১৭ বলে নিজের ৫ম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে গিয়ার পাল্টান তিনি। তবে বাংলাদেশের স্পিনাররা চাপ তৈরির কাজটা করে যেতেই থাকেন; সেই চাপেই মাহেদীকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অফে হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় গিলের ১৩৩ বলের ১২১ রানের দারুণ ইনিংস। ম্যাচে যখন জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ তখনই অক্ষর পাটেল হয়ে দাঁড়ান দেয়াল হয়ে, ১৭ রানে থাকার সময় লিটন তার স্টাম্পিং মিস করে বাংলাদেশের শিবিরে হৃৎকম্পন আরও বাড়িয়ে দেন। ৪৯-তম ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজ দেখান তার পুরনো জাদু। কাটার, স্লোয়ারের পসরা সাজিয়ে ঠাকুরকে প্রথম বলেই ফেরানোর পর বাউন্ডারিতে তামিমের তালুবন্দি করে ৪২ রানে থাকা অক্ষরকেও থামান মোস্তাফিজ। শেষ ওভারে আরও একবার দুর্দান্ত বল করে সাকিব জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেললে পঞ্চম বলে দুই রান নিতে গিয়ে শামি হন রান আউট; সেই সাথে বাংলাদেশ পেয়ে যায় জয়।

    এর আগে বাংলাদেশের ভয়াবহ শুরুটা হয়েছিল ওপেনারদের দিয়েই। লিটন দাসের দুঃস্বপ্নের পরিক্রমায় ২ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পেরে শামির ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। তানজিদ হাসান তামিম তিন চারে দুরন্ত শুরু করেও শার্দুলকে পুল করতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ১২ বলে ১৩ রানে। আনামুল হক বিজয় উইকেটে এসেই ধুঁকতে থাকেন;  পুল করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ৪ রানে। সেটার পর মিরাজ উইকেটে এসে দুবার সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে না পেরে ১৩ রানে ফেরেন অক্ষরের শিকার হয়ে
    সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন সাকিব ও হৃদয়। স্পিনারদের লক্ষ্য বানিয়ে দুজন মিলে শতরানের জুটি পেয়ে যান। চার বছর পর সেঞ্চুরির আভাস দিতে থাকা সাকিব হুট করেই এরপর শার্দুলের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফেরেন ৮৫ বলে ৮০ রানে।

    উইকেটে এসেই ১ রানে এরপর শামীম ফিরলেও হৃদয় পেয়ে যান ফিফটি। ৮১ বলে ৫৪ রানের মন্থর ইনিংস শেষে অবশ্য হৃদয় ৪২-তম ওভারে ফিরলে বাংলাদেশের আশা স্তিমিত হয়ে এলে চমক দেখান শেষের তিন জন। নাসুম আহমেদ আগের দিনের ধারা বজায় রেখে প্রায় ফিফটি পেয়ে যাচ্ছিলেন। ৪৫ বলে ৪৪ রান শেষে কৃষ্ণার বলে স্টাম্প খুইয়ে তিনি ফেরার পর অবশ্য ২৩ বলে ২৯* রান করে মাহেদী ও ৮ বলে ১৪* রান করে সাকিব বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন জয়ের রসদ।