• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    শামীম পাটোয়ারী: স্রোতের তালে জাতীয় দলে, প্রশ্ন নির্বাচন নিয়ে

    শামীম পাটোয়ারী: স্রোতের তালে জাতীয় দলে, প্রশ্ন নির্বাচন নিয়ে    

    বাংলাদেশ জাতীয় দলে আপনি খেলতে চান, তাহলে কোন পথ ধরতে হবে আপনাকে, জানতে চান?

    আচ্ছা একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। প্রশ্ন: নাঈম শেখ কেন জাতীয় দলে? উত্তর: ঘরোয়া ক্রিকেটে সে পারফর্ম করে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট যেটি, সেই ডিপিএলের সবশেষ আসরে সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন ৯৩২ রান করা নাঈম শেখ। তাহলে ধরতে পারি, ডিপিএলের পারফর্ম্যান্সের গুরুত্ব আছে জাতীয় দলের নির্বাচন বিবেচনায়। কিন্ত আদৌও কী আছে? এই প্রশ্নটা তুলতে বাধ্য করছে ওই আসরেই শামীম পাটোয়ারীর পারফর্ম্যান্স। 

    ৯ ম্যাচ খেলে শামীম রান করেছেন মাত্র ১৭১। মাত্র ১৭১। শামীম শেষের দিকে খেলেন, লেট-মিডল অর্ডারে ছয়-সাত নাম্বার পজিশনে খেলেন। বড় রান করার সুযোগ নেই যদি বলেন, তার স্ট্রাইক রেট কত জানেন, ৮৫ এর কম ছিল ওই টুর্নামেন্টে! সেটা নিশ্চয়ই ছয়-সাতের দাবি মেটানোর মত স্ট্রাইক রেট না। শুধু কী ঝড়ো রান করবেন, শামীমের সুযোগ ছিল বড় ইনিংস খেলার, যথেষ্ট রান করার। ৩২ ওভারের আগেই শামীম ক্রিজে হাজির হয়েছেন, এমনটা তো হয়েছে ৯ ম্যাচের ৬ ইনিংসেই। ১৭২ বল খেলে তিনি তাতে করেছেন মোটে ১৩৯ রান।

    ৪০ ওভারের পরে ক্রিজে এসে দ্রুত রান তোলাটাই কাজ। সেখানে তিন ম্যাচে শেষ দশ ওভারে ব্যাটিংয়ে এসে শামীম রানও করতে পারেননি ৩৩ এর বেশি, আবার স্ট্রাইক রেটও তার যায়নি ১০০ এর উপরে!

    টার্গেটে ব্যাটিং করেছেন বলে পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে ওমন ব্যাটিং? ৯ ম্যাচের মাত্র একটি ম্যাচেই শামীমকে ব্যাট করতে হয়েছিল সামনে লক্ষ্য থাকা অবস্থায়। বাকি ৮ বারই আগে ব্যাটিং করেছে শামীমের দল রুপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব।  

    ৯ ম্যাচে ৫ বার দশের ঘর পাড়ি দিতে পারেননি। ত্রিশোর্ধ্ব তিন ইনিংস খেলেছেন। ২১ বলে ৩৭, ৫৯ বলে ৩৯, ৬০ বলে ৫৩। টপ রান স্কোরার, সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট, ওসবের তালিকায় শামীম পাটোয়ারী খুঁজতে গেলে নিচে নামতে হয়, নামতেই হয়! এরপর যখন পাওয়া যায় তার নাম, দেখা যায় আশেপাশে আবু হায়দার রনি, আলাউদ্দিন বাবু, সোহাগ গাজিদের নাম। যাদের রান তার কাছাকাছিই, তবে শামীমের থেকে বেশি সবারই, আবার তিনজনেরই স্ট্রাইক রেটও তার থেকে বেশি, সেটা এক শর উপরে। সোহাগ গাজির ১০৮, আবু হায়দার রনির ১১৫ ও আলাউদ্দিন বাবুর ১২৮।

    কত বাজে করেছেন শামীম, আর তো ব্যাখা দিতে হবে না নিশ্চয়ই। স্যাম্পল সাইজ ছোট, তবে তাও যথেষ্ট বার্তা দিতে কি সক্ষম নয়? বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে কীভাবে শামীম জাতীয় দলে! এশিয়া কাপে চার ম্যাচ মিলিয়ে ৩৩ রান করতে পেরেছেন, সে কারণেই এই সমালোচনা নয়। বরং ওই ব্যর্থতাই চোখ ফেলতে বাধ্য করেছে পুরনো পারফর্ম্যান্সে, এই যা!

    কীভাবে শামীম জাতীয় দলে, আপনারও ধারণা আছে নিশ্চয়ই, স্রোতের তালে। টি-টোয়েন্টির দিনবদলের লক্ষ্যে দলের চেহারা যখন পাল্টানো শুরু, তখন শামীমের ডাক পড়েছিল আবার। ইংল্যান্ড সিরিজে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি। এরপর আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুই ইনিংসে ত্রিশোর্ধ্ব রান। হারা ম্যাচে দলকে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া একটি ফিফটি। 

    আফগানিস্তান সিরিজে হৃদয়ের ম্যাচজয়ী অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসের সাথে শামীমও অবদান রাখেন ৩৩ রানের ইনিংস খেলে। দুই তরুণে ভর করে বাংলাদেশ যখন টি-টোয়েন্টির 'অদেখা' জয় দেখতে পেল, শামীম উঠলেন স্রোতে। আর, শামীম তো আছে, বিগ হিটার, ফিনিশার! তৈরি হয়ে গেল আবহ। সাতে দুর্ভিক্ষ চলছিল, ব্যাস, শামীম ইন! 

    তাহলে কী বুঝলেন, জাতীয় দলে খেলতে চান, যেখানে পারফরম্যান্সের দরকার সেখানে না করে, অন্য কোথাও হলেও কোনও পারফরম্যান্স দিয়ে আপনাকে স্রোতে উঠতে হবে। মূল কথা, স্রোতে উঠতে হবে। তাহলেই পেয়ে যাবেন জাতীয় দলের বাঁধ ভাঙ্গার সুযোগ। স্রোতের তাল ধরতে পারলে সব হবে সুধা।