সোধির স্পিনের মায়াজালে আটকে বাংলাদেশের আত্মসমর্পণ
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, ২য় ওয়ানডে, মিরপুর(টস-নিউজিল্যান্ড/ব্যাটিং)
নিউজিল্যান্ড - ২৫৪, ৪৯.২ ওভার (ব্লান্ডেল ৬৮, নিকোলস ৪৯, সোধি ৩৫, মাহেদী ৩/৪৫, খালেদ ৩/৬০, মোস্তাফিজ ২/৫৩)
বাংলাদেশ - ১৬৮, ৪১.১ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৪৯, তামিম ৪৪, নাসুম ২১, সোধি ৬/৩৯, জেমিসন ২/৩২, ম্যাককঙ্কি ১/৩)
ফলাফল নিউজিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী
মাঝারিমানের এক দল নিয়েই বাংলাদেশকে তাদের মাঠেই নাকানিচুবানি খাওয়াল নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার হিসেবে সেরা ওয়ানডে বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশকে প্রায় একাই হারিয়ে দিল ইশ সোধি।
২৫৫ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ। কাইল জেমিসনের বাউন্সারে আপারকাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে ৬ রানে ফিরে যান লিটন দাস। উইকেটে এসে ভাল শুরু করেও সোধিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ১২ বলে ১৬ রান করে ফেরেও তানজিদ হাসান তামিম। উইকেটে এসে দ্বিতীয় বলেই রানের খাতা খোলার আগে সোধিকে মামুলি ফিরতি ক্যাচ দিয়ে এরপর ফেরেন সৌম্য সরকার। কিছুক্ষণ পরে তাওহিদ হৃদয়ও ফেরেন সোধির শিকার হয়ে, ৪ রানে স্টাম্প খুইয়ে।
তবে এরপর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন তামিম ইকবাল। দৃষ্টিনন্দন কিছু শট খেলে শুরু করা তামিম এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির পথেই। তবে লেগ স্পিনের জুজু পেয়ে বসে তাকেও। সোধির লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৫৮ বলে ৪৪ রান করে থামেন তামিম। লড়াইটা অনেকটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। শেখ মাহেদীকে নিয়ে এরপর ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৭ রানে সোধির বলে স্টাম্প খুইয়ে মাহেদী ফেরার পর ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে হুট করেই মন্থর হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। সেই চাপেই কোল ম্যাককঙ্কির লেগ সাইডের নিরীহ এক বলে সুইপ করতে গিয়ে ৭৬ বলে ৪৯ রানে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। সেখান থেকে নাসুম আহমেদই শেষদিকে যা একটু চেষ্টা করেছিলেন। ৩০ বলে ২১ রান করে জেমিসনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে তিনিও থামলে বাংলাদেশকে বড় পরাজয়ের লজ্জাতেই ডুবতে হয়।
এর আগে ব্যাটিং নিয়ে শুরুটা একেবারেই মনঃপুত হয়নি কিউইদের। আগের দিন ফিফটি পাওয়া উইল ইয়াং রানের খাতা খোলার আগেই মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বাউন্সারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। কিছুক্ষণ পরে মোস্তাফিজের কাটারে তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিন অ্যালেন। উইকেটে এসে ভাল শুরু করেও ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে খালেদ আহমেদের প্রথম ওয়ানডে শিকার হয়ে ফেরেন চ্যাড বাওয়েস।
তবে সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ব্লান্ডেল-নিকোলস জুটি। দলীয় শতরান পূর্ণ করে ফেলেন ২১-তম ওভারেই। স্পিনারদের দক্ষতার সাথে সামলে শুরুর ধাক্কা পুরোপুরি সামাল দিয়ে ফেলেন দুজনেই; ৫৪ বলে ব্লান্ডেল পেয়ে যান ফিফটিও। তবে সেই ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসেই খালেদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৪৯ রানে থামেন নিকোলস।
সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ছোটখাটো একটা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যায়। উইকেটে এসে সুবিধা করতে না পেরে মাহেদীর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রচীন রবীন্দ্র ফেরেন মাত্র ১০ রানে। সেখান থেকে গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে হাসানের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে স্টাম্প খুইয়ে ৬৬ বলে ৬৮ রানে থামেন ব্লান্ডেল। নাসুম, মোস্তাফিজের আঁটসাঁট স্পেলের মাঝেই হাত খুলতে গিয়ে কোল ম্যাককঙ্কিও ফেরেন ২০ রানে নাসুমের পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা ফেলে। তবে ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্তটা ঠিক ব্যাটে-বলে আসেনি। শেষদিকে ইশ সোধি রান যোগ করেই চলেছিলেন। এমন সময় নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে সোধিকে একটু বেরিয়ে যেতে দেখে ‘মানকাড’ করে বসেন হাসান। তবে উদারতা দেখিয়ে তাকে ঠিকই ফিরিয়ে আনেন লিটন। সেই সোধিই অবশ্য খালেদের তৃতীয় শিকার হয়ে শেষ উইকেট হিসেবে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৩৫ রান করে নিউজিল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার রসদ।