• নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড', স্পিনারদের দৌরাত্ম্য: মিরপুরের ঘটনাবহুল প্রথম দিনে হাসল বোলাররাই

    'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড', স্পিনারদের দৌরাত্ম্য: মিরপুরের ঘটনাবহুল প্রথম দিনে হাসল বোলাররাই    

    ২য় টেস্ট, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ - ১৭২ (মুশফিক ৩৫, দীপু ৩১, মিরাজ ২০, ফিলিপস ৩/৩১, স্যান্টনার ৩/৬৫, আজাজ ২/৫৪)  
    নিউজিল্যান্ড - ৫৫/৫ (উইলিয়ামসন ১৩, মিচেল ১২*, মিরাজ ৩/১৭, তাইজুল ২/২৯)
    ১ম দিন, স্টাম্পস
    নিউজিল্যান্ড ১১৭ রানে পিছিয়ে


     

    মিরপুরের টেস্টটা যে ব্যাটারদের জন্য কঠোর এক পরীক্ষা হতে চলেছে সেটা অনুমিতই ছিল; তবে প্রথম দিন থেকেই যে বল সাপের গতিপথের মত আঁকাবাঁকা মোড় নিবে সেটা হয়ত বোঝা যায়নি। সে যাই হোক, মিরপুরে প্রথম দিনটায় হেসেছে শুধু বোলাররা। ঘটনাবহুল এক দিনে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কিউইদের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহেই কাটা পড়েছিল। তবে এরপর পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে সেই বাংলাদেশই হয়ত দিন শেষে কিছুটা এগিয়ে।

    দিনের শুরুতে অবশ্য দুই ওপেনার মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ব্যাটারদের জন্য কঠিন সময়টা দুজন মিলে ভালই পাড়ি দিচ্ছিলেন। তবে এগারতম ওভারে হুট করেই যেন মতিভ্রম হল জাকিরের। স্যান্টনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ৮ রানে তিনি ফিরলে পরের ওভারে জয় ফেরেন ব্যাট-প্যাড হয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারে আজাজের তীক্ষ্ণ ঘূর্ণিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুমিনুল ফিরলে টানা চতুর্থ ওভারে উইকেট দিয়ে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্যান্টনারের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন শান্ত। অবশ্য দীপুকে নিয়ে এরপর মুশফিক দক্ষতার সাথেই পাড়ি দিয়েছিলেন সকালের সেশন।

    চার উইকেট হারালেও ৮০ রান পাওয়া প্রথম সেশনের পর দুজনেই উইকেটে থিতু হয়ে বল বুঝে খেলে যাচ্ছিলেন। স্পিনারদের যেন অনেকটাই পড়ে ফেলেছেন দুজন - এমনটাই ভেবে সাউদি গতির দ্বারস্থ হন। সেটার জন্য না কি কারণে সেটা খোদ মুশফিকই বলতে পারবেন; মিরপুর দেখল এমন এক কাণ্ড যা নিজে চাক্ষুষ দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন। জেমিসনের নিরীহ এক বল মুশফিক ঠেকালেন; বলটা বেরিয়ে যাচ্ছিল অফ স্টাম্পের ওয়াইডের জন্য কাটা দাগের দিকে। সেই বলটাই মুশফিক আবার হাত দিয়ে ঠেলে দিলেন! যা ভাবা সেই কাজ, সাউদি আবেদন করায় অনুমিতভাবেই ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’-এর শিকার হয়ে ফিরলেন মুশফিক; বাংলাদেশের ইতিহাসে যা প্রথম। কিছুক্ষণ পরে মতিভ্রমের পালা দীপুর। ফিলিপসের বিশাল এক ঘূর্ণিতে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে ১০২ বল খেলে ৩১ রানে থামেন দীপু।

    এরপরের অধ্যায়টা খুব একটা বলার মত কিছু নয়। ফিলিপসকে বেরিয়ে এসে খেলতে মিড অনে ক্যাচ তুলে ফেরেন নুরুল। ভালো শুরু করেও স্যান্টনারকে কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। দেড়শোর আগেই বাংলাদেশ গুটিয়ে যাবে মনে হলেও শেষ দুই উইকেটে তাইজুল আর শরিফুলকে নিয়ে লড়েছেন নাঈম। আক্রমণে এসেই সাউদি শেষ উইকেট হিসেবে শরিফুলকে ফেরালে নাঈমের ১৩* রানে বাংলাদেশ পায় ১৭২ রানের সংগ্রহ।

    ব্যাটিংটা আশানুরূপ না হলেও বাংলাদেশের স্পিনাররা যে এই পিচে বল হাতে নিতে মুখিয়ে ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। শরিফুলকে দিয়ে শুরুটা করানো হলেও দ্বিতীয় ওভারেই মিরাজকে এনে  শান্ত পরিকল্পনাটা পরিস্কার বুঝিয়ে দিলেন। সেই মিরাজই এনে দিলেন প্রথম উইকেট। মিরাজের স্লাইডার ছেড়ে দিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফিরলেন কনওয়ে। মিরাজের দারুণ এক আর্ম বলে এরপরেই ফিরতে পারতেন উইলিয়ামন। দাঁত কামড়ে ওই সময়টুকু তিনি পড়ে থাকলেও অন্য প্রান্তে তাইজুলের বলে ব্যাটের নিচের কানায় লাগিয়ে সোহানের দারুণ ক্ষিপ্র এক ক্যাচে থামেন ল্যাথাম। নিকোলস এরপর তাইজুলকে উইকেটটা উপহার দিয়ে ফিরলে দিনের শেষদিকে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের দিকে মিরাজ ঘুরিয়ে নেন এক ওভারেই। ওই ওভারের প্রথম শিকার উইলিয়ামসন; মিরাজ তো নায়ক বটেই, তবে শর্ট লেগে দীপুও যেই ক্যাচ ধরলে তাতে নায়কের চেয়ে ছোট কোনও তকমা তার সাথে মানায় না। এক বল পরেই ব্লান্ডেলকে এলবিডউব্লিউর ফাঁদে ফেললেন মিরাজ। উইকেটের ঘ্রাণ পেয়ে বসা শিকারি বাঘের মত যখন মাঠের এদিক সেদিক ছুটছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা তখনই আলো উৎসবে বাগড়া দিয়ে বসে। অবশ্য কাল সকালেও উইকেটের মিছিল জারি রাখতেই উন্মুখ হয়ে থাকবে বাংলাদেশের বোলাররা।