• বিপিএল
  • " />

     

    আরও একবার ফাইনালে কুমিল্লা, ফাইনালের টিকিটের জন্য লড়বেন সাকিব-তামিম

    আরও একবার ফাইনালে কুমিল্লা, ফাইনালের টিকিটের জন্য লড়বেন সাকিব-তামিম    

    বিপিএল ২০২৪
    এলিমিনেটর (টস - বরিশাল/বোলিং)
    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স - ১৩৫/৯, ২০ ওভার (ব্রাউন ৩৪, শুভাগত ২৪, ব্রুস ১৭, মায়ার্স ২/২৮, সাইফউদ্দিন ২/২৮, ম্যাকয় ২/২৯)
    ফরচুন বরিশাল - ১৩৬/৩, ১৪.৫ ওভার (তামিম ৫২*, মায়ার্স ৫০, মিলার ১৭, শেফার্ড ১/১৭, বিলাল ১/৩০, শুভাগত ১/৪৫)
    ফলাফল - বরিশাল ৭ উইকেটে জয়ী

    কোয়ালিফায়ার ১ (টস - কুমিল্লা/বোলিং)
    রংপুর রাইডার্স - ১৮৫/৬, ২০ ওভার (নিশাম ৯৭*, সোহান ৩০, মাহেদী ২২, রাসেল ২/৩৭, নারাইন ১/১১, বর্ষণ ১/২১)
    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস - ১৮৬/৪, ১৮.৩ ওভার (লিটন ৮৩*, হৃদয় ৬৪, মঈন ৩৯, ফারুকী ২/২৭, )  
    ফলাফল - কুমিল্লা ৬ উইকেটে জয়ী


    বরিশালের মাইর শেষ রাতে

    যেই বরিশাল প্লে-অফের জায়গা নিয়ে এক সময় চরম শঙ্কায় ভুগেছে, এমনকি প্লে-অফ নিশ্চিতও করেছে গ্রুপ পর্বের শেষ দিনে, সেই বরিশালকেই যেন অন্যরকম দেখাচ্ছে। প্লে-অফ নিশ্চিত করার ম্যাচে কুমিল্লাকে পাত্তাই দেয়নি তামিম ইকবালের দল; আজ চট্টগ্রামকেও গোণায় ধরল না তারা। সাইফউদ্দিনের সাথে জুটি বেঁধে দুই ক্যারিবিয়ান পেসার ওবেড ম্যাকয় ও কাইল মায়ার্স চট্টগ্রামকে ম্যাচের কোনও অবস্থায়ই লাগামছাড়া হতে দেননি।

    প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের যাত্রাটাও অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আসার গল্প। সেই গল্পের শেষদিকের নায়ক আরেক তামিম। তবে তানজিদ হাসান তামিম আজ ফিরেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের প্রথম বলেই। ৬ রানে ফিরে তামিমও যেন চট্টগ্রামের পরিণতি তখনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তামিম ফিরলেও আরেক ওপেনার জশ ব্রাউন ভালো শুরু এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ২২ বলে ৩৪ রান করে দলকে ৫২ রানে রেখে যে ফিরলেন এরপর আর সেই অর্থে কেউ সুবিধা করতে পারেনি।

    ১৩৬ রানের মামুলি লক্ষ্যে তামিম ইকবাল তাই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যাননি। এদিন ওপেন করতে নামা সৌম্য সরকার নিজের দ্বিতীয় বলেই ফিরলে এরপর মায়ার্স ব্যাট হাতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তামিম তাই এক প্রান্ত আগলে রেখে প্রান্ত বদলের কাজ করেই নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৬ বলে মায়ার্সের ৫০ রানের ইনিংসের পর বরিশালের চিন্তার কোনও জায়গাও ছিল না। তামিমের ৪২ বলে ৫৩* রানে এরপর বরিশাল ৩৩ বল হাতে রেখেই তাই ফাইনালের জন্য নিজেদের আরও একটি সুযোগ তৈরি করে নিয়েছে।

    প্লে-অফ মানেই কুমিল্লার জয়জয়কার

    বিপিএলের প্লে-অফে কুমিল্লা খেললেই যেন অপ্রতিরোধ্য! গত কয়েক মৌসুমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারও তাই করে দেখাল কুমিল্লা। অথচ এবারের প্রতিপক্ষ রংপুর কিন্তু খেলেছে দুর্দান্ত। আজ শুরুতে বিপদে পড়লেও ফিরে এসেছিল নিজেদের মত করেই। ৬৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে রংপুর ছিল কঠিন বিপদে, তবে এরপরেই ম্যাচের মোড় হুট করেই বদলে দিলেন জিমি নিশাম। দুই অফ স্পিনার সুনীল নারাইন, মঈন আলীর অধ্যায়টা দেখে শুনেই পড়লেন। নারাইন তো নিজের চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে রান গুনেছিলেন মোটে ১১! তবে নিশামের মাথায় ফন্দিও ছিল সেটাই - পেসারদের এক হাত নেওয়া, করলেনও তাই। নিশামের সেই পরিকল্পনায় বলির পাঁঠা হলেন তরুণ পেসার মুশফিক হাসান। বিপিএলের ইতিহাসেরই সবচেয়ে খরুচে স্পেলের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়ে রান গুনেছেন ৭২! মাঝে যে নিকোলাস পুরানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছিলেন, সেটা মনে রাখার আর সুযোগ দিতে পারেননি। নিজের শেষ ওভারে যে নিশামের কাছে ২৮ রান দিলেন, সেটাই যেন তার অসহায়ত্বকে ফুটিয়ে তুলেছিল নিদারুণভাবে। তবে নিশাম যেভাবে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট চালাচ্ছিলেন তাতে এদিন যেকোনো বোলারের এই দশাই হয়ত হত। ৪৯ বলে ৯৭* রানের অসামান্য ইনিংসে শেষ ওভারে নবীকে সিঙ্গেলের জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তবে শেষ বলটা ব্যাটে-বলে করতে না পারায় সেঞ্চুরিটা আর পাননি এই কিউই।

    ১৮৬ রানের লক্ষ্যে নিশামের উল্টো পথেই অবশ্য হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কুমিল্লা অধিনায়ক লিটন। দিনের প্রথম ম্যাচে তামিম যা করেছিলেন, তিনিও সেই কৌশল বেঁছে নিয়েছিলেন। আর আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন তিনে নামা তাওহিদ হৃদয়। রান তাড়ায় এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন, আজও হৃদয়ের ব্যাটে তার ব্যত্যয় ঘটেনি। নিজের ইনিংসের শেষদিকে এসে সেই অর্থে হাত খুলে খেলতে না পারলেও ৩১ বলে ফিফটি পূর্ণ করে ৪৩ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন তিনিই। হৃদয়ের রেখে যাওয়া ব্যাটন তুলে নিয়ে এরপর টানা দুই চারে ফিফটি পূর্ণ করা লিটন ছুটতে থাকেন। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নিশামকেও জবাব দেন তার মত করেই। ৫৭ বলে ৮৩ রানের দারুণ ইনিংসে দলকে জয়ের পথে রেখে ফিরলেও কুমিল্লার ফাইনাল নিশ্চিত করতে আর খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।

    ফাইনালের দৌড়ে আবারও মুখোমুখি সাকিব-তামিম

    মৌসুমে তৃতীয়বারের মত দেখা মিলবে সাকিব-তামিম দ্বৈরথের। আগের দুইবারের দেখায় হতাশ করেনি দুই দল। ফাইনালের মহড়াই যেন দিয়েছিল এই দুই দল, নিজেদের শেষ দেখায়। দুজনের বৈরী সম্পর্কের প্রমাণ আরও একবার পাওয়া গিয়েছিল সেই ম্যাচে সাকিব ফেরার পর তামিমের উদযাপনে। এবার তো ফাইনালের টিকিটের জন্য সরাসরি লড়াই! ম্যাচটা এবারও জমবে আশা করাই যায়।

    বরিশাল শেষদিকে এসে নিজেদের খুঁজে পেয়েছে, তামিম নিয়মিত রান পাচ্ছেন, আর মায়ার্স তো একের পর এক দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অন্যদিকে নিশাম আজ দেখালেন ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ। শুরুর দিকে নিজের ব্যাটিং নিয়ে অসম্ভব ভুগলেও নিজেকে খুঁজে পেয়ে সাকিব তো এখন ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টের দৌড়েও আছেন ভালভাবে। আজ ব্যাট হাতে রান না পেলেও প্রয়োজনের সময় সাকিবের ওপর ভরসা করবে যেকোনো দল। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারটা জমজমাট এক লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।