• বিপিএল
  • " />

     

    কুমিল্লাই কি বিপিএলের রিয়াল মাদ্রিদ?

    কুমিল্লাই কি বিপিএলের রিয়াল মাদ্রিদ?    

    ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা দল কোনটি? নিঃসন্দেহে বলা যায় রিয়াল মাদ্রিদ। সব মিলিয়ে জিতেছে ১৪টি শিরোপা। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ মৌসুম থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুম; টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ নিজেদের করে নিয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি। ইউরোপের সফলতম এই ক্লাবের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনেও সুযোগ এসেছে টানা তৃতীয়বার শিরোপা জেতার।  

    ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা যেকোনো ধরনের খেলা নির্বিশেষে একটা চ্যাম্পিয়ন দলের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটা কোর গ্রুপ থাকা। নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় থাকেন যারা দলকে বড় মঞ্চে সফলতা এনে দেন। রিয়াল মাদ্রিদের সেই কোর গ্রুপ ছিল, আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেও। চ্যাম্পিয়নস লিগের সাথে বিপিএলের তুলনা চলে না। বরং কুমিল্লার সাথে রিয়াল মাদ্রিদের যে সাদৃশ্য আছে সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। 


    ১। কোর গ্রুপ অফ প্লেয়ার্স

    রিয়ালের থ্রিপিট জয়ী দলের অন্যতম সেনানী ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, টনি ক্রুস, মার্সেলো, লুকা মদ্রিচের মতো অভিজ্ঞ কিছু ফুটবলার। যারা দীর্ঘদিন একসাথে খেলেছেন। মাঠে ফল এনে দিয়েছেন। ঠিক তেমনি কুমিল্লার হয়েও অনেকদিন ধরে একসাথে খেলছেন ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান ও তানভীর ইসলাম। 

    প্রথম দুজন; লিটন-কায়েসের কুমিল্লার সাথেপথচলা শুরু ২০১৫ বিপিএলে। সেবার প্রথম বিপিএলে এসেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা সেবার শিরোপাজয়ী দলে ছিলেন লিটন দাস, ইমরুল কায়েস। এরপর কায়েস খেললেও লিটন দল বদলে খেলেছেন সিলেট ও রাজশাহীতে। মাঝে এক আসর কায়েস খেলেছেন চট্টগ্রামে। 

    তবে ২০২২ সাল থেকে আবারও কুমিল্লায় ফিরেছেন তারা, সাথে মোস্তাফিজুর রহমান ও তানভীর ইসলাম। দীর্ঘদিন একসাথে খেলার সুবাদে তাদের মধ্যকার বোঝাপড়াটাও দারুণ। এবং মাঠের পারফর্ম্যান্সেও সেটার ছাপ পড়েছে। এই কোর গ্রুপ অফ প্লেয়ারদের নিয়েই শেষ দুইবার টানা বিপিএল জিতেছে কুমিল্লা। আর কুমিল্লার বিপিএলের সাফল্যের অন্যতম সাক্ষী কায়েস। চারবারই কুমিল্লার শিরোপা জেতা দলে ছিলেন তিনি। তিনবার ছিলেন অধিনায়ক। 

    তাদের মাঠের পারফরম্যান্সই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। ম্যাচের ফল এনেছে কুমিল্লার পক্ষে।   ২০২২ বিপিএলে ১৯ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ হয়েছিল সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। তানভীর ইসলাম ১৬ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন চতুর্থ স্থানে। এর পরের মৌসুমে অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাঁহাতি এই স্পিনার আসর শেষ করেছিলেন ১৭ উইকেট নিয়ে; হাসান মাহমুদের সাথে জয়েন্ট হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হয়ে। সেবারের পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন। 

    ২০২৩ সালে লিটন ছিলেন কুমিল্লার সর্বোচ্চ রান স্কোরার। ১৩ ইনিংসে ৩৭৯ রান। এবারের বিপিএলে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলছেন ৮৩ রানের ইনিংস। হৃদয়ের সাথে জুটি বেধে দলকে তুলেছেন ফাইনালে। এবার টপ রান স্কোরারের তালিকায়ো আছেন লিটন। ১৩ ইনিংসে ৩৭৫ রান। স্ট্রাইকরেট ১৩০, ফিফটি আছে তিনটা। 

    তানভীর এবারও দলের হাইয়েস্ট উইকেট টেকার। ১২ ম্যাচে ১৩ উইকেট। মোস্তাফিজ চোটে পড়ে কয়েক ম্যাচ খেলতে পারেননি। ৯ ম্যাচে তার ১১ উইকেট।

     

    ২। প্লেয়ার ট্রান্সফার

    আগের সিজনের স্টার পারফর্মার  তাওহিদ হৃদয়। সিলেটের হয়ে থার্ড হাইয়েস্ট রান গেটার। সেই পারফরম্যান্স দিয়েই হোয়াইট বল ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছেন। সরাসরি চুক্তিতে তাকে দলে নিয়েছে এবার কুমিল্লা। 

    তার ওপর কেন এত ভরসা দলটার; কেন তাকে দলে নেয়া হয়েছে হৃদয় সেটা প্রমাণ করেছন। এবারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৩ ইনিংসে ৪৪৭ রান করেছেন ১৪৯.৪৯ স্ট্রাইকরেটে, সেঞ্চুরি আছে একটা, দুটি ফিফটির সাথে। সবচেয়ে বেশি ছক্কাও তার। আলাদা করে বলতে হবে ঢাকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি, খুলনার বিপক্ষে ৪৭ বলে ৯১*, এবং রংপুরের বিপক্ষে ৬৪ রানের ইনিংসের কথা। 

     

     ৩। এদিকে সালাউদ্দিন, ওদিকে আনচেলত্তি

    কুমিল্লার মাঠের ক্রিকেটে ভালো করার অন্যতম কারণ কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সাথে তার শিষ্যদের ভালো বোঝাপড়াটা। বিশেষ করে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস। এছাড়া সবাইকে যেভাবে যার যার কাজটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, মাঠের ক্রিকেটেও তার পরিকল্পনার যথেষ্ট ছাপ দেখা গেছে। 

    এবার মুশফিক হাসানকে খেলিয়েছেন প্রথম ম্যাচেই। এক ওভার করে ১৯ রান দিলেও পরের ম্যাচগুলোতে  তাকে সুযোগ দিয়েছেন।  জাকের আলী অনিক, মাহিদুল ইসলাম অংকনদের খেলাচ্ছেন নিয়মিতই। তবে সবচেয়ে ভালো প্রতিদান  দিচ্ছেন অনিক। ডেথ ওভারে, সাতে-আটে নেমে ক্যামিও খেলছেন। যেটা কাজে লাগছে দলের। সর্বশেষ বলা যায় রোহানাত দৌলা বর্ষনের কথা। তাকে বোলিংয়ে পাঠিয়ে ইনিংস শুরু করিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী উইকেটও পেয়েছেন এই তরুণ পেসার। 


    ৪। ট্যাকটিকস ও স্ট্র‍্যাটেজি

    কুমিল্লার ট্রফি জেতার অন্যতম আরেক টনিক তাদের টপ অর্ডার। টপ অর্ডারের কেউ না কেউ পারফর্ম করেই আসছেন। ২০১৯ বিপিএলের ফাইনালের কথা মনে করতে পারি আমরা। ঢাকার বিপক্ষে ১৪১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে একা হাতে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন সেবার। 

    ২০২২-এর ফাইনালে সুনিল নারাইনের দুর্দান্ত ইনিংস। সেই ম্যাচটা এক রানে জিতেছিল কুমিল্লা।২০২৩ বিপিএলের ফাইনালটাও কুমিল্লা জিতেছিল টপ অর্ডারের ব্যাটেই।  ১৭৫ রানের সংগ্রহের পরেও সিলেট জিততে পারেনি। লিটনের ফিফটির পর জনসন চার্লসের ৭৯ রানের ইনিংসেই আসলে সিলেট হেরে যায়। অধিনায়ক লিটনের সাথে নারাইন, চার্লসরা এবারও আছেন কুমিল্লায়। 

    টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে পঞ্চম বিপিএল শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশাল।