"এটাই হয়তো এই চক্রের শেষ"
"আমি অ্যাটলেটিকোর সাথে থেকে যেতে পারি। আবার এটাই হয়তো এই চক্রের শেষ, আমি এখনো জানি না। আমার ভেবে দেখতে হবে।" নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের এমনটাই জবাব দিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ম্যানেজার ডিয়েগো সিমিওনে।
"অ্যাটলেটিক মাদ্রিদের সাথে আমার এই যে চক্রটা, তিন বছরে দুইটি ফাইনাল... এটা আসলেই একটা অভুতপূর্ব ব্যাপার। কিন্তু আমি আমার নিজের অর্জনে সন্তুষ্ট নই" এভাবেই নিজের হতাশা প্রকাশ করলেন 'এল চোলো'।
তিন বছরের মাঝে দ্বিতীয়বার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ স্পর্শের দূরত্বে এসেও ধরতে পারলো না চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে অ্যাটলেটির ম্যানেজার ডিয়েগো সিমিওনে আরো একবার খুব কাছে এসেও ডুবলেন হতাশায়। এই পরাজয় কি ৪৬ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইনের মনোজগতে নাড়া দিয়েছে ব্যাপকভাবে? নয়তো তিনি এমনটা বলবেন কেন?
"এ ধরনের হার যে কারো ওপরেই অনেক বড় বোঝা হয়ে থাকে, বহু সময় ধরে। রিয়াল মাদ্রিদকে অভিনন্দন, তারা আরো একবার প্রমাণ করল যে তারা আমাদের থেকে ভাল দল। অবশ্য শুধুমাত্র পেনাল্টিতে। " হতাশার মাঝেও ঠাট্টা করতে ছাড়েননি সিমিওনে।
"বিজয়ী দলই সবসময় ঠিক, সবক্ষেত্রেই" ম্যাচ সম্পর্কে সিমিওনে বলেন, "পেনাল্টিতে জেতার মতো যথেষ্ট ভাল দল আমরা ছিলাম না। সুবিচার হয়েছে কিনা? ফুটবলের ক্ষেত্রে আমি সুবিচার-অবিচারে বিশ্বাস করি না। ফুটবলে জয় এবং পরাজয় ছাড়া আর কিছুই নেই। আজকের সেরা দলটিই জিতেছে, সেরা দলই সবসময় ম্যাচ জেতে। "
"আমরা খেলাটা খুবই বাজেভাবে শুরু করেছিলাম। তবে কুড়ি মিনিটের পর থেকে বাকিটা সময়ে আমরা আমাদের খেলাটা বেশ ভালভাবেই গুছিয়ে ফেলতে পেরেছি। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের আরো আগেই সমতায় ফেরা উচিৎ ছিল। আমাদের লক্ষ্যও অমনই ছিল। " সিমিওনে সাংবাদিকদের জানান।
"যারা পয়সা খরচ করে খেলা দেখতে এসে এই বেদনা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তাঁদের জন্যই আমার সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে। ভক্তরা যা চেয়েছিল সেটা তারা দেখতে পায় নি, এর জন্য আমি নিজেকেই দায়ী মনে করছি। "
"আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। বার্সেলোনা আর বায়ার্নকে পরাজিত করবার জন্য তারা তাঁদের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছে। এর কোন তুলনাই হয় না। " শেষে নিজের শিষ্যদের প্রশংসা করতে ভুলে যান নি গুরু সিমিওনে।
এই নিয়ে তৃতীয়বার ইউরোপিয়ান কাপে রানার্স আপ হল অ্যাটলেটিকো। '৭৪ সালে বায়ার্ন মিউনিখের সাথে প্রথম ফাইনালে শেষ মূহূর্তের গোলে ১-১এ ড্র করে পরে রিপ্লে ম্যাচে ৪-০ তে হেরে রানার্স আপ হয় অ্যাটলেটি। ২০১৪ ফাইনালেও শেষ মুহূর্তে রামোসের গোলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে এবং ৪-১ গোলে পরাজিত হয় অ্যাটলেটি। আর গতকাল আবারো মাদ্রিদের মুখোমুখি হয়ে মূল এবং অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ এ শেষ হলে টাইব্রেকারে ৫-৩ এ হেরে রানার্স আপ হয় সিমিওনের দল।
যদি আসলেই তিনি যেতে চান তবে সিমিওনেকে হারানোটা বিশাল এক ধাক্কা হবে অ্যাটলেটিকোর জন্য। ২০১১ তে গ্রেগরি মানজানোর জায়গায় অ্যাটলেটিকোর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পান ডিয়েগো 'এল চোলো' সিমিওনে। প্রথম বছরই অ্যাটলেটিদের নিয়ে ইউরোপা লিগের শিরোপা জেতেন সিমিওনে। ২০১৪ তে বার্সা রিয়ালকে টপকে জেতেন লা লিগার শিরোপা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে নিয়ে যান তাঁর দলকে। কিন্তু চক্রের শেষ বলে কি নিজের বিদায়ের ইঙ্গিত দিলেন? কারণ সিমিওনে যদি নতুন ক্লাব খুঁজতে চান, তবে আগ্রহী ক্লাব মালিকদের অভাব হবে না। এর আগেও সিমিওনে ইন্টার মিলানের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ইন্টার মিলানে খেলোয়াড় হিসেবে সিমিওনে ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ছিলেন; ইন্টারও হয়তো আগ্রহী হতে পারে এ বিষয়ে। যদিও ইন্টার মিলানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের জানেত্তি জানিয়েছেন, "আমি জানি ইন্টারের প্রতি ডিয়েগোর (সিমিওনে) একটা অন্যরকম ভালবাসা আর অনেক সুখস্মৃতি আছে। ভবিষ্যতে কি হবে বলা যাচ্ছে না তবে এখনো আমরা (রবার্তো) মানচিনির প্রতি আস্থা রাখছি।"