• " />

     

    টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪: যেমন হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড

    টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪: যেমন হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড    

    বর্তমান ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দল তাঁরা, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপটাও গেছে তাঁদের ঘরে। একমাত্র দল হিসেবে একই সময়ে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে একই সময়ে বিশ্বসেরার ট্রফিতে হাত রাখার সুযোগটা এসেছে অস্ট্রেলিয়ার সামনে। খেলোয়াড়দের সামর্থ্য এবং বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় ২০২১ এর পর আবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে মাত্র ছয় সপ্তাহ পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপের জন্য আসলে কতটুকু প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া? কেমন হতে পারে পনেরো জনের স্কোয়াড? উইজডেন আলোচনা করেছে সেগুলো নিয়েই।

    অজিদের প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি অবশ্য বলেই দিয়েছেন, শুধু সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দুটো আন্তর্জাতিক সিরিজই নয়, নির্বাচকমণ্ডলী গুরুত্ব দেবেন চলমান আইপিএলের পারফরম্যান্সেও। আইপিএলে আলো ছড়িয়েও তাই বিশ্বকাপের বিমান ধরার সুযোগটা থাকছে অজিদের সামনে।

    ওপেনার

    ট্র্যাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার, ম্যাট শর্ট

    অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলে ডেভিড ওয়ার্নারকে ‘অটো চয়েস’-ই বলা চলে। চলতি বছরে খেলা চার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৬৫ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ২০৫। চলমান আইপিএলে অবশ্য কিছুটা অনুজ্জ্বল তিনি, ৭ ইনিংসে ২৪ গড় আর ১৩৮ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেছেন ১৬৭ রান। তাতেও বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়াটা আটকাবে না তাঁর। মূল ওপেনার হিসেবেই নিজের শেষ বিশ্বকাপটা খেলবেন ওয়ার্নার।

    ওয়ার্নার-হেডই ওপেনিং করবেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে; Image Source: Getty Images

    অন্য সব হিসাব বাদ, শুধু চলমান আইপিএলেই যেমন আগুন ঝরছে ট্র্যাভিস হেডের ব্যাটে, তাতেই ওপেনারদের তালিকায় সবার আগে তাঁর নাম লিখতে বাধ্য নির্বাচকেরা। চলমান আইপিএলের প্রথম ৬ ইনিংসে ৩২৪ রান সংগ্রহ করে ফেলেছেন হেড। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ২১৬ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে থাকা হেড ইতোমধ্যে দাঁড়িয়েছেন বোলারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে। আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম ঈর্ষণীয়। ২০২৩ এর শুরু থেকে এই পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে অজি ওপেনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান তার, ১৬৬ স্ট্রাইক রেটে ৩১১।

    আইপিএল শুরুর আগে দৃশ্যটা এমন ছিল, ওয়ার্নারের সাথে ওপেনিংয়ে নামার জন্য লড়ছিলেন হেড এবং ম্যাট শর্ট। হেড তো নিজের জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছেনই, এখন তৃতীয় ওপেনার হিসেবে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়ছেন শর্ট এবং স্টিভ স্মিথ।

    ম্যাট শর্ট থাকবেন ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে; Image Source: Getty Images

    গত বছর থেকে এ পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আটবার ব্যাটিং করেছেন শর্ট, এর মধ্যে পাঁচবারই ওপেনার হিসেবে। এই পাঁচ ম্যাচে তিনি রান করেছেন ১১৮, তবে সেটা ১৮৭ স্ট্রাইক রেটে। ওদিকে স্টিভ স্মিথ ওপেনার হিসেবে খেলেছেন মাত্র চার ম্যাচ, ১২৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৮৬। বাড়তি স্ট্রাইক রেটটাই তাই এগিয়ে দিচ্ছে শর্টকে, সাথে খণ্ডকালীন অফস্পিনটাও একটু সুবিধা দিচ্ছে। স্টিভ স্মিথের কপাল তাই হয়তো পুড়তেই যাচ্ছে।

    মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান

    জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাচওয়েল, টিম ডেভিড

    হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে আইপিএলের বর্তমান আসর থেকে ছিটকে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মিচেল মার্শ। তবে প্রত্যাশিত, জুনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের আগেই খেলায় ফিরবেন তিনি। গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৮ ম্যাচে ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ৩৪৬ রান করেছেন অজিদের টপ-মিডল অর্ডারের এই অন্যতম ভরসা।

    অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী নিয়েই বিশ্বকাপে যাবেন মার্শ; Image Source: Getty Images

    গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আইপিএলে নিজের ফর্ম হারিয়েছেন, মানসিক চাপ কমানোর জন্য সাময়িক বিরতিও নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ একাদশে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন নেই টিম ডেভিডের জায়গা নিয়েও। দুই হাজার তেইশ থেকে আজ অবধি সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি।

    খুব ভালো ফর্মে না থাকলেও ম্যাক্সওয়েল-ডেভিড যাচ্ছেন বিশ্বকাপে; Image Source: Getty Images

    মার্শ-ম্যাক্সওয়েল-ডেভিডের সাথে ব্যাকআপ হিসেবে মার্কাস স্টয়নিস আর ক্যামেরন গ্রিন, এমনটাই ভেবে নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে গেল চলতি আইপিএলে, পাল্টে দিলেন জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক নামের এক অখ্যাত বাইশ বছরের তরুণ। নিজের প্রথম চার আইপিএল ইনিংসেই তিনি তুলে ফেললেন ১৬৩ রান, সেটাও ২১২ স্ট্রাইক রেটে। তাতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হলেন সবাই, হয়তো বিশ্বকাপের টিকেটও নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনো অভিষেক না হলেও আইপিএলে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংটাই পেছনে ফেলে দিলো স্টয়নিস-গ্রিনকে।

    আইপিএল মাতাচ্ছেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক; Image Source: Getty Images

    অথচ স্টয়নিস খুব খারাপ ফর্মে ছিলেন না। এই তো সেদিনই চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে একা হাতে ম্যাচ জেতালেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে। ২১১ রানের টার্গেটে নেমে নিজে অপরাজিত রইলেন ১২৪ রানে। তবুও শেষ রক্ষা বোধ হয় হবে না তাঁর, ফ্রেজার-ম্যাকগার্কই নিশ্চিত করবেন বিশ্বকাপে যাওয়া। ওদিকে ক্যামেরন গ্রিন অবশ্য ফর্মে নেই আইপিএলে। ‘২৩ আর ‘২৪ মিলিয়ে মাত্র একটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার ব্যাপারটাও তাঁর বিপক্ষে যাচ্ছে।

    উইকেটকিপার

    জশ ইংলিস, ম্যাথু ওয়েড

    গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেটকিপার ছিলেন ইংলিস আর ওয়েড। এবারও হয়তো তাঁরাই ধরে রাখবেন নিজেদের জায়গাটা। তবে প্রথম একাদশে কে সুযোগ পাবেন, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

    ওয়েড-ইংলিসের হাতেই উঠছে দস্তানা; Image Source: Getty Images

    সম্ভাবনা খুবই কম, তবে অজি নির্বাচকমণ্ডলী চাইলে এখানে একটা সুযোগও নিতে পারেন। ডেভিড ওয়ার্নারকে দ্বিতীয় উইকেটকিপারের জন্য প্রস্তুত রেখে ইংলিস বা ওয়েডের বদলে মার্কাস স্টয়নিসের মতো একজন অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়ার চিন্তা করতে পারেন। সম্ভাবনা খুবই কম, তবে ব্যাপারটাকে একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।

    পেসার

    প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্ক, নাথান এলিস, স্পেন্সার জনসন

    স্টার্ক-হ্যাজেলউড-কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণের ‘হলি ট্রিনিটি’। অন্তত তাঁদেরকে দলে নেওয়ার জন্য যে আলাদা করে ভাবতে হবে না নির্বাচকদের, সেটা নিশ্চিত। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে মিচেল স্টার্ক তেমন একটা ভালো করছেন না, প্রথম ৭ ইনিংসে মাত্র ৬ উইকেট পেয়েছেন, রান দিয়েছেন বলপ্রতি প্রায় দুই করে। সেদিক থেকে কামিন্সের বর্তমান ফর্ম অনেক ভালো, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক ৭ ইনিংসে বল করে ওভারপ্রতি ৮ রান দিয়ে পেয়েছেন ৯ উইকেট। তবে বর্তমান ফর্ম যেমনই হোক, চোটে না পড়লে এই ত্রয়ী বিশ্বকাপে যাচ্ছেনই।

    অজিদের 'হলি ট্রিনিটি'; Image Source: Getty Images

    এর বাইরে, বাকি দুই পেসার হিসেবে কে কে যাবেন বিশ্বকাপে, সেটাই হলো প্রশ্ন। উত্তর হিসেবে, গত বছর থেকে অজি জার্সিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন জ্যাসন বেরেনডর্ফ। কিন্তু আইপিএলের আগেই চোটে পড়ে বিশ্বকাপে খেলাটাই অনিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। একই সময়ে ছয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দশ উইকেট নিয়ে দৌড়ে ছিলেন শন অ্যাবটও, কিন্তু ডেথ-ওভার স্পেশালিস্ট হওয়ায় নাথান এলিস এগিয়ে রয়েছেন একটু হলেও। ওদিকে গুজরাট টাইটান্সের বাঁহাতি পেসার স্পেন্সার জনসন নির্বাচকদের রাডারে রয়েছেন বেরেনডর্ফের রিপ্লেসমেন্ট এবং স্টার্কের ব্যাকআপ হিসেবে।

    স্পিনার

    অ্যাডাম জাম্পা

    ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে গিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডাম জাম্পা। এ নিয়ে শুরুতে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল দলটিকে। কিন্তু জাম্পা ঠিকই নিজের কাজটা করে দিয়েছিলেন, ১১ ইনিংসে ২২ গড় আর ৫.৩৯ ইকোনমিতে তুলেছিলেন ২৩ উইকেট, হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। সম্ভবত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে, সবশেষ আটটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০.৩৭ ইকোনমিতে বোলিং করলেও বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে অ্যাডাম জাম্পাই যাচ্ছেন বিশ্বকাপে। এই লেগ স্পিনারকে সময়ে সময়ে সাহায্য করবেন অফ স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর ট্র্যাভিস হেড।

    বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে জাম্পাই ভরসা; Image Source: Getty Images

    সব মিলিয়ে, স্কোয়াডের দুয়েকটা জায়গা নিয়ে লড়াই চললেও খেলোয়াড়দের সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় একই সাথে তিন ফরম্যাটের রাজমুকুট পরার এমন সুযোগ অস্ট্রেলিয়া নিকট ভবিষ্যতে আর নাও পেতে পারে!