• ইউরো
  • " />

     

    ইউরো-স্মৃতির সরণির বাঁকে: পর্ব ২

    ইউরো-স্মৃতির সরণির বাঁকে: পর্ব ২    

    আগের আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু শিরোপা জয়ের পথে, কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন-বাধাটা খুব সহজেই উতরে গিয়েছিল দলটি, স্প্যানিশ শাসক জেনারেল ফ্রাঙ্কো যে দলকে মাঠেই নামতে দেননি! ইউরোপীয় ফুটবলের পরাশক্তি হয়েও প্রতিপক্ষকে বিনা বাধায় পরের রাউন্ডে যেতে দেখাটা হয়তো ভালো লাগেনি স্পেনের, আর পরের আসরেই যা ঘটলো, সেটা তো ইতিহাস হয়েই থাকবে।

    ইউরোপীয় ফুটবলের ফুটবলীয় মহোৎসব উয়েফা ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ, বা সংক্ষেপে ইউরোর সতেরোতম আসর শুরুর আগে, দ্যা অ্যাথলেটিক হেঁটেছে স্মৃতির সরণি বেয়ে, যে পথের বাঁকে বাঁকে উঠে এসেছে আগের ষোল আসরের জানা-অজানা খুঁটিনাটি তথ্য আর গল্পের পেছনের গল্পগুলো। এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে ১৯৬৪ সালে অনুষ্ঠিত ইউরোর দ্বিতীয় আসর আর স্পেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গল্প।

    Image Source: Getty Images

    কেমন ছিল সেই ইউরো?

    ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত ইউরোর প্রথম আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে নিজেদের মাটিতে পরাজয়ের আশঙ্কায় স্পেন দলকে মাঠেই নামতে দেননি জেনারেল ফ্রাঙ্কো। সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তীতে শিরোপাও জিতে নিয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ইউরোর পরের আসরটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্পেনের মাটিতেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের নামটা জড়িয়ে ছিল এবারও, টুর্নামেন্টের ফাইনালে যে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুটো দলই!

    জেনারেল ফ্রাঙ্কো এবার আর কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি, বরং নিজেই উপস্থিত হয়েছিলেন ফাইনাল ম্যাচ দেখতে। আর ওই ম্যাচটা আর দশটা টুর্নামেন্টের ফাইনালের মতো ছিল না, বরং ম্যাচটা ছিল দুই দেশের আদর্শের লড়াই। সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে ডানপন্থী একনায়কতন্ত্রের লড়াই।

    ম্যানেজার

    শিরোপাজয়ী ম্যানেজার হোসে ভিয়ালোঙ্গার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে অবশ্য বলার মতো তেমন কিছু ছিল না। ষোল বছর বয়সে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সৈনিক হিসেবে যোগদান করেছিলেন তিনি, এরপর ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি পেয়ে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল এডুকেশনের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ফুটবল কোচিংয়ের কোর্স করেন তিনি, এর কিছুদিন পর দায়িত্ব নেন রিয়াল মাদ্রিদের। প্রথম ম্যানেজার হিসেবে ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন তিনি, সর্বকনিষ্ঠ হিসেবেও।

    হোসে ভিয়ালোঙ্গা; Image Source: Flickr

    সেই যুগে অবশ্য ভিয়ালোঙ্গাকে একটু বাঁকা চোখে দেখা হতো, ধারণা করা হতো যে রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর সাফল্যের পেছনে সিংহভাগ অবদানই দলের দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের দারুণ পারফরম্যান্সের। তবে এমন ধারণা যে পুরোপুরি ঠিক নয়, সেটা ভিয়ালোঙ্গা পরবর্তীতে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোর হয়েও ভালো পারফর্ম করেছিলেন তিনি, যদিও এর বিনিময়ে ‘বিশ্বাসঘাতক’ উপাধি জুটেছিল তাঁর।

    ভিয়ালোঙ্গার কোচিংয়ের দুটো প্রধান দিক ছিল। প্রথমত, বিদেশী খেলোয়াড়দেরকে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব দিয়ে স্পেন দলে খেলানোর প্রচলন বন্ধ করেন তিনি। এর আগে আলফ্রেডো ডি স্টেফানোসহ বেশ কিছু খেলোয়াড়কে নাগরিকত্ব দিয়ে স্পেন দলে ভেড়ানো হয়েছিল, কিন্তু এর ফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি, উল্টো স্প্যানিশ দলটা তাদের নিজেদের ফুটবলীয় পরিচয় এবং ধরন প্রায় হারিয়েই ফেলেছিল। টেকনিক্যাল দক্ষতার চেয়ে শারীরিক শক্তি আর সাহসের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছিল স্পেন দল।

    দ্বিতীয়ত, ভিয়ালোঙ্গা তাঁর দলে তরুণ, চনমনে, কর্মচঞ্চল খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দিতে শুরু করেন। তাদের সবাই খুব বেশি দিন জাতীয় দলে খেলতে পারেননি সত্য, কিন্তু একটা নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। এরই ফলাফল হিসেবে স্পেনকে ইউরো জিতিয়েছিলেন ভিয়ালোঙ্গা, যে জয়টা জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। তবে জাতীয় দল এবং ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বেশ সফল হলেও স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসের বইয়ে হোসে ভিয়ালোঙ্গার পাতাটা যেন ঢেকে আছে অবহেলার ধুলোতে।

    ট্যাকটিক্স

    ফাইনালের আগে দলের কাছে নিজের ট্যাকটিক্স বোঝানোর জন্য বেশ অদ্ভুত এক উপায় ব্যবহার করেছিলেন ভিয়ালোঙ্গা। দলের ইনসাইড-লেফট চুস পেরেদা যেমনটা বলেছিলেন, গেমপ্ল্যান বোঝানোর জন্য দলের ট্রেনিং গ্রাউন্ডের বালুতে একটা অস্থায়ী ট্যাকটিক্স বোর্ড বসিয়েছিলেন ভিয়ালোঙ্গা, সেখানে পাইন কাঠের তৈরি ত্রিকোণ দিয়ে বুঝিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন দলের খেলোয়াড়দের, আর স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের নির্দেশ করেছিলেন পাথর দিয়ে। বুঝিয়েছিলেন, পাথরগুলো কীভাবে পাইন কাঠের ত্রিকোণগুলোর চেয়ে শক্তিশালী, ঠিক যেভাবে সোভিয়েতদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী স্প্যানিশরা।

    স্পেন দলটা আসলেই বেশ শক্তিশালী ছিল। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের মাঝে তৈরি হওয়া জায়গা কাজে লাগাতে সিদ্ধহস্ত ছিল তারা, অ্যাটাকাররা নিজেদের অবস্থান পাল্টে প্রতিপক্ষকে রাখতেন ধোঁয়াশায়। ওদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ৪-২-৪ ফরমেশনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে, স্পেন তখনো খেলছে ষাটের দশকের জনপ্রিয় “ডব্লিউ-এম” বা ৩-২-২-৩ ফরমেশনে। 

    Image Source: The Athletic

    ফাইনালের দুই দলেরই মূল জার্সি ছিল লাল রঙের। তাই অনুষ্ঠিত হয় মুদ্রা নিক্ষেপ, আর তাতে জয়ী হয়ে লাল জার্সি পরার সুযোগ পায় সোভিয়েতরা। স্প্যানিশরা মাঠে নামে নীল রঙের অ্যাওয়ে জার্সি পরে।

    মূল খেলোয়াড়

    এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। এই দলটার বাকি সব খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ। বাকিরা ছিল অনেকটাই তাঁর সহযোগীর দায়িত্বে। 

    দশ নম্বর জার্সিটাও সুয়ারেজের গায়ে উঠেছিল। কিন্তু তখনকার প্রেক্ষাপটে দশ নম্বর জার্সিধারীর জন্য কিছুটা অপ্রচলিত, ইনসাইড-লেফটের পরিবর্তে সুয়ারেজ খেলতেন ইনসাইড-রাইটে। আর এর অর্থ, ফাইনাল ম্যাচে তাঁর লড়াইটা ছিল আগের টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ভ্যালেন্টিন ইভানোভের সাথে।

    লুইস সুয়ারেজ; Image Source: Getty Images

    দারুণ সব পাস দেওয়া আর লম্বা পাসে ডান উইংয়ে বল পাঠিয়ে ক্রস করার সুযোগ তৈরি করতে পারদর্শী ছিলেন সুয়ারেজ, খেলার ধরনে এখনকার সময়ের কেভিন ডি ব্রুইনার সাথে কিছুটা তুলনা করা যেতে পারে তাঁর। সৃষ্টিশীলতার চমৎকার উদাহরণ ছিল তাঁর খেলায়, ডান পাশ থেকে তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকেই সেমিফাইনাল আর ফাইনাল ম্যাচের প্রথম গোল করেছিলেন চুস পেরেদা।

    কাকতালীয়ভাবে, তিন বছর আগে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এই পেরেদাকেই দলে ভিড়িয়েছিল লুইস সুয়ারেজের স্থলে। কাতালানদের কাছ থেকে বিশ্বরেকর্ড ১,৫২,০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে সুয়ারেজকে দলে টেনেছিল ইন্টার মিলান। নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশী এক ক্লাবে চলে যাওয়ায় অনেকেই তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তবে দেশের মাটিতে ইউরো জয়টা তাঁর সুনাম ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট কার্যকর ছিল।

    সুয়ারেজের ব্যাকহিলও ছিল চমৎকার, ফাইনালেও এর স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। পুরো মাঠ জুড়ে খেলতে পারতেন তিনি, মাঝমাঠে প্রত্যেকের সম্ভাব্য গতিবিধি পড়তে পারতেন নিখুঁতভাবে। তাঁর ব্যাকপাসগুলোও ছিল মাপা। থ্রো-ইনও নিতেন তিনি।

    এর আগেই ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন সুয়ারেজ, তবে খেলোয়াড় হিসেবে বেশ ‘আন্ডাররেটেড’ থেকে গেছেন তিনি। স্পেন ও ইতালির দুটো শীর্ষস্থানীয় ক্লাবের হয়ে দেশীয় ও মহাদেশীয় সাফল্য পেয়েছেন তিনি, আর স্পেনের হয়ে তো ইউরো জিতেছেনই। ‘এল আরকুইটেকটো’ বা ‘দ্যা আর্কিটেক্ট’ ছিল তাঁর ডাকনাম, যখন ইন্টার মিলানের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে তিনি সুইপার রোলে খেলেছেন। 

    ২০২৩ সালে পরলোকগমন করেছেন স্পেনের হয়ে এই একমাত্র ব্যালন ডি’অর বিজয়ী খেলোয়াড়। 

    ফাইনাল ম্যাচ

    ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ইউরোর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসের কর্দমাক্ত মাঠে। এর চার বছর পর মাদ্রিদে যখন দ্বিতীয় ইউরোর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে, চারপাশে তখন ঝলসানো রোদ। তাতেও সুন্দরভাবে ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা যেতে পারতো, যদি না ম্যাচের আগের বৃষ্টিতে মাঠ পিচ্ছিল হয়ে যেত। পুরো ম্যাচে দুই দলই ভুগেছে এই কারণে, বল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছিল।

    তবে ম্যাচের দশ মিনিটের মধ্যেই স্পেন-সোভিয়েতের ‘গোল বিনিময়’ সারা। ছয় মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন, আট মিনিটে সমতা ফেরায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ম্যাচের প্রথম গোলে দুই সোভিয়েত ডিফেন্ডারের ভুলে গোল পেয়ে যান পেরেদা। বলটা এক্ষেত্রে হারিয়েছিলেন ওই ইভানোভই, তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। সোভিয়েতের পক্ষ থেকে জবাবটাও এলো খুব দ্রুতই। লং বলটা আয়ত্তে নিয়ে বাম পাশ থেকে শট নিয়েছিলেন গালিমজিয়ান খুসাইনোভ, চমকে যাওয়া স্প্যানিশ গোলরক্ষক হোসে আনহেল ইরিবার আটকাতে পারেননি শটটা। 

    পেরেদোর গোলে স্পেনের এগিয়ে যাওয়া; Image Source: Getty Images

    তবে এরপর থেকে স্পেন-সোভিয়েতের লড়াইয়ে স্পেন এগিয়ে ছিল সন্দেহাতীতভাবে। একের পর এক আক্রমণ করে সোভিয়েতের রক্ষণকে তটস্থ করে রাখছিলেন স্প্যানিশরা। কিন্তু সোভিয়েতদের সাথে একের পর এক শারীরিক সংঘর্ষে ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেন তাঁরা। হলুদ কার্ড বা খেলোয়াড় বদলির নিয়ম না থাকায় স্প্যানিশদের খুব বেশি কিছু করার ছিল না।

    ওই যুগে অনেক স্বাগতিক দলই রেফারিংয়ের সুবিধা পেত। কিন্তু স্পেন তো সেই সুবিধা পায়নি, উল্টো ইংরেজ রেফারি আর্থার হল্যান্ড যেন স্প্যানিশদের কাজটা আরো কঠিন করে তুলেছিলেন। স্পেনের দুটো পেনাল্টির জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে যায়। পরের ঘটনাটা আরো বেশি ক্ষেপিয়ে দেয় স্প্যানিশদের। বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন পেরেদা, সোভিয়েতের ভিক্টর আনিচকিন চেষ্টা করেছিলেন ফাউল করার, পেরেদা তাঁর দৌড় অব্যাহত রাখেন এবং গোল করেন। কিন্তু আনিচকিনের ওই চেষ্টাকেই ফাউল ধরে বাঁশি বাজান রেফারি হল্যান্ড, গোল বাতিল করেন। পেরেদা ক্ষেপে যান স্বাভাবিকভাবেই, যদিও সোভিয়েতদের পক্ষে যুক্তি ছিল, রেফারির বাঁশি বাজানোর সাথে সাথেই ডিফেন্ডাররা থেমে গিয়েছিলেন। পেরেদার কথাতেও তাই পাত্তা দেননি রেফারি।

    ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল যে মুহূর্ত

    চার বছর আগের ইউরোর ফাইনালের মতো এই ফাইনালের স্কোরলাইনও ছিল ২-১, এবং ম্যাচ জেতানো গোলটা এসেছিল হেডে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগে, প্রথম গোলস্কোরার পেরেদার আক্রমণ থেকে আসে গোলটা। ক্লান্ত সুয়ারেজ যেটা করতে পারছিলেন না সেটাই করেছিলেন পেরেদা, মাঠের ডান দিকে সরে গিয়ে ক্রস করেছিলেন। ক্রসটা যে খুব ভালো ছিল এমন নয়, সোভিয়েতের পোস্টের সামনে একটা বেমক্কা ড্রপ খায় বলটা। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান সেন্টার ফরোয়ার্ড মার্সেলিনো। তাঁর হেডে বলটা জড়িয়ে যায় জালে। দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া গোলরক্ষক লেভ ইয়াশিনের কিছুই করার ছিল না।

    টেকনিক আর গুরুত্ব বিবেচনায় ওই গোলটাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা হেডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    জেনে অবাক হবেন যে…

    ঠিক যে মুহূর্তে শিরোপাজয়ী গোলের অ্যাসিস্ট করেছিলেন পেরেদা, টেলিভিশন ফিডে কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে মূল ব্রডকাস্টে গোলটা প্রচারিত হয়নি। আর্কাইভ ফুটেজেও একই সমস্যা ছিল, তাই অনেক বছর যাবত নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে গোলটা ঠিক কীভাবে এসেছিল। শেষমেশ ধারণা করে নেওয়া হয়েছিল যে আমান্সিও আমারোর ক্রস থেকেই কর্নার পেয়েছিল স্পেন, আর সেখান থেকেই এসেছিল শিরোপা জেতানো গোলটা।

    পরবর্তীতে আরো কিছু বিদেশী ফুটেজ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো থেকেও পুরো ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে, প্রায় ত্রিশ বছর পরে পুরো ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব হয়, যেটা নিশ্চিত করে, পেরেদার ক্রস থেকেই এসেছিল শেষ গোলটি। চুপচাপ স্বভাবের পেরেদাও ওই ফুটেজ দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।

    স্পেন কি সত্যিই ইউরোপের সেরা দল ছিল?

    এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু তর্ক-বিতর্ক থাকতে পারে। প্রথমত, পশ্চিম জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কিছু পরাশক্তি দল তখনো ইউরোতে অংশ নেয়নি। দ্বিতীয়ত, ঘরের মাঠের সুবিধা পেয়েছিল স্পেন। তৃতীয়ত, স্পেন দলের খেলায় খুব বেশি মানুষের মন ভরেনি। এমনকি ওই দলের সুয়ারেজ এবং পেরেদা বলেছিলেন যে, ইউরোর পরে বিভিন্ন সময়ে ইউরোর চেয়ে ভালো খেলা উপহার দিয়েছিল স্প্যানিশ দলটি।

    তবে হ্যাঁ, খেলায় খুব নান্দনিকতা না থাকলেও, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে জয়টা স্পেনেরই প্রাপ্য ছিল।

    শিরোপা হাতে স্পেনের উল্লাস ; Image Source: UEFA

    “১৯৬০-এর স্পেন দলটা বেশি প্রতিভাবান ছিল। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ছিলেন, লাজলো কুবালা ছিলেন। কিন্তু নাম দিয়ে ফুটবলে জেতা যায় না, জেতায় দল,” পেরেদা বলেছিলেন, “আমরা একটা দল হিসেবে ভালো ছিলাম, আর আমাদের অর্কেস্ট্রার পরিচালনা করতেন সুয়ারেজ।”

    “আমরা দল হিসেবে ভালো খেলেছি,” সুয়ারেজও একমত, “দল হিসেবে দৃঢ়তা দেখিয়েছি। আমাদের খেলোয়াড়রা একে অপরকে খুব ভালোভাবে বুঝতো। ক্লাব পর্যায়ে আমরা ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটা দল থেকে এসেছিলাম, কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে আমরা ছিলাম একটা দল। নির্দিষ্ট কিছু ভালো খেলোয়াড় নন, আমাদের বিজয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের দলীয় সমন্বয়।”