• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    ভারতের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে অসহায় বাংলাদেশ

    ভারতের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে অসহায় বাংলাদেশ    

    ১ম টেস্ট, চেন্নাই (টস - বাংলাদেশ/ফিল্ডিং)
    ভারত - ৩৭৬ ও ৮১/৩ (গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, রানা ১/১২, মিরাজ ১/১৬)
    বাংলাদেশ - ১৪৯  (সাকিব ৩২, মিরাজ ২৭*, লিটন ২২, বুমরাহ ৪/৫০, দ্বীপ ২/১৯, জাদেজা ২/১৯)
    ২য় দিন, স্টাম্পস
    ভারত ৩০৬ রানে এগিয়ে 


    চীপকে কেবল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হল, তবে এরই মধ্যে যেন ঠিক হয়ে গিয়েছে ম্যাচের বিজয়ী। স্বাগতিকদের দাপটে দিশেহারা বাংলাদেশ। ভারতের ব্যাটিংয়ের অবসান ঘটানোর পর নিজেরা ব্যাটিংয়ে নামতেই যেন মনে হল চেন্নাইয়ের অন্য কোনো মাঠে খেলতে দেওয়া হয়েছে তাদের। যথারীতি তাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছে ভারত।

    সকালের সেশনটায় গতকালের মতো শুরু না করলেও ভারতকে লাগামছাড়া হতে দেয়নি বাংলাদেশ। লাইন-লেংথ ধরে রেখে বল করে গিয়েছেন তাসকিন, হাসান। তারই ফল তাসকিন পেয়েছেন ৮৬ রানে থাকা জাদেজা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে। ১৯৯ রানের সেই জুটি ভাঙার পর তাসকিন আকাশ দ্বীপের ১৭ রানের ইনিংসের অবসান ঘটিয়েছেন, পরে থামিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান আশ্বিনকেও। শেষদিকে রান বাড়াতে ড্রাইভ করতে গিয়ে শান্তকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ দিয়ে ফেরার আগে অবশ্য ১৩৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংসে ভারতের জন্য কাজটা সেরে দিয়েই গিয়েছেন। এরপর ভারতকে গুটানোর কাজটা হাসান সারেন ফাইফার দিয়ে। পাকিস্তানের পর এবার ভারতের মাটিতেও প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে ফাইফারের রেকর্ড গড়েন তিনি।

    বাংলাদেশের সুখকর অধ্যায়ের সমাপ্তি ওখানেই। ব্যাট হাতে নেমেই লাঞ্চের আগে তিন উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ। বল পিচে পড়ে যে বনবন করে ঘুরছিল এমন নয়। ভারতের টানা লাইন ধরে রাখাতেই যেন পর্যুদস্ত বাংলাদেশ। বুমরাহর বলের লেংথ না বুঝে স্টাম্প বরাবর আসা বল ছেড়ে সাদমান দেখলেন তার অফ স্টাম্পের বেইল উড়ে গেছে। লাঞ্চের ঠিক আগেই আকাশ গুড লেংথের সিম-আপ ডেলিভারিতে পরপর দুই বলে স্টাম্প উপড়ে ফেললেন জাকির ও মুমিনুলের। দুজনেই ব্যাট-প্যাডের ফাঁকটা আটকাতে পারেননি, দুজনেই ব্যাট নামাতে ঢের দেরি করেছেন।

    ব্যাটিংয়ের মনঃসংযোগের ঘাটতি দেখা গেল পরের সেশনেও। শুরুটা ভালো করলেও অধিনায়ক শান্ত বরাবরই খেলে আসছিলেন শক্ত হাতে, সেটা আঁচ করেই লেংথ নিচে টেনে আনলেন সিরাজ। লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে থাকা শান্ত তাও একইভাবে ব্যাট চালালে স্বাভাবিকভাবেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক ২০ রানে ফেরার পর বুমরাহর টানা গুড লেংথের বল খেলতে খেলতে মুশফিকও ওই ফাঁদে পা দিয়ে ফিরলেন ৮ রানে।

    মুশফিকের বিদায়ের পর আবারও দলের হাল ধরার দায়িত্ব বর্তায় সেই লিটনের ওপর, সাথে এবার অফ-ফর্মের সাকিব। সাকিবের শুরুটাও হল নড়বড়ে। তবে দ্রুতই মানিয়ে নিয়ে পেসারদের সামলে নিলেন সাকিব, লিটনও একবার ব্যাটের কানা থেকে বাউন্ডারি পাওয়ার পর ফিরলেন ছন্দে। তবে আক্রমণে জাদেজা আসতেই যেন দুজনেরই মতিভ্রম হল। অনেকটাই শরীর বাড়িয়ে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট-বলের সংযোগ করতে না পেরে আকাশে বল ভাসিয়ে লিটন থামলেন ২২ রানে। সাকিব যেন আরও এক কদম ওপরে! লেংথ না দেখেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা একেবারেই! ৩২ রানে তিনি ফিরলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। সেশন শেষের আগে হাসানের প্রতিরোধ ভেঙে বুমরাহ নিশ্চিত করলেন - ওখানেই বাংলাদেশের নামের পাশে নেই আরো পাঁচ উইকেটে!

    অন্য প্রান্তে থাকা মিরাজ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও বারবারই স্ট্রাইক দিয়ে গিয়েছেন টেইল এন্ডারদের। তাসকিন, রানারা গুরুত্বপূর্ণ রান যোগ করেছেন বটে। তবে ২৭ রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ আরও দায়িত্ব নিতে পারতেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিমর্ষ বাংলাদেশ বোলিংয়েও সেই অর্থে আর ধার খুঁজে পায়নি। দারুণ এক বলে তাসকিন ভারত অধিনায়ককে শুরুতেই ফিরিয়েছিলেন ঠিকই। তবে আগের ইনিংসে ডাকের পর এই ইনিংসে ব্যাট হাতে শক্ত জবাব দিতে বদ্ধপরিকর গিল সেসব সামলে নিয়েছেন। ফর্মে থাকা জয়সওয়াল রানার বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ফেরার পর দিনের শেষাংশে এসে মিরাজের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন কোহলি। অবশ্য রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন, ব্যাটে যে বল লেগেছে বোঝেননি নিজেও! তবে তিনশো রানের ওপর লিড পেয়ে যাওয়ায় ভারতের তাতে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ হওয়ার কথা নয়।