ম্যাচ শেষ করতে না পারার আক্ষেপ মিরাজের, আশাবাদী পরের ম্যাচ নিয়ে
মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হাসান শান্ত জুটি ভাঙার পর যেভাবে তাসের ঘরের মতো ব্যাটিং লাইনআপ লুটিয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশের যেকোনো ক্রিকেট অনুরাগীদের তা ভাবিয়ে তুলবে। স্বভাবতই মিরাজকে পরের দিন সাংবাদিকদের কাছে ব্যাটিং নিয়ে বেশি প্রশ্ন শুনতে হল। মিরাজ অবশ্য সরল বিশ্বাসে স্বীকারোক্তি দিলেন, দোষটা তাদের দুজনেরই।
উইকেটের আচরণ নিয়ে অবশ্য মিরাজ আলাদা করে একটু আলোকপাত করলেন অজুহাতের সুরেই, "যখন আমি আর শান্ত ব্যাটিং করছিলাম, তখন উইকেটটা আমাদের কাছে ইজি মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিশ ওভারের পর বলটা যখন একটু সফট, একটু পুরনো হউয়ে যায়, তখন থেকে বলটা একটু বেশি টার্ন করছিল। আমি আর শান্ত কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে বেশ স্ট্রাগল করছিলাম, সেট ব্যাটসম্যান হয়েও। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের দুজন সেটা ব্যাটসম্যানের ভেতর একজনের ম্যাচ শেষ করে আসা উচিৎ ছিল।"
তবে সেটা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই শেষমেশ দিলেন অকপট স্বীকারোক্তি, "আমি শান্তকে বারবার বলছিলাম যে আমাদের দুজনের যেহেতু খেলতে অসুবিধা হচ্ছে, পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও ডিফিকাল্ট হবে। কারণ হঠাৎ করে উইকেটটা এমন টার্নিং হয়ে গিয়েছিল যে একবার স্লো টার্ন হচ্ছিল, একবার স্ট্রেট আসছিল। আপনি প্রেডিক্ট করতে পারবেন না কোন বলটা স্ট্রেট আসবে, কোন বলটা ঘুরবে। এটা হঠাৎ করে হয়েছিল। বাট এই সময়টায় আমিও মিস্টেক করেছি, শান্তও মিস্টেক করেছে। এই উইকেটে অবশ্যই একজন সেট ব্যাটসম্যানের ম্যাচ শেষ করে আসা উচিৎ। কিন্তু যেটা ডিসকাস করছিলাম - আমি ও শান্ত দুজনেই মিস্টেক করেছি।"
বাংলাদেশে যেখানে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ম্যাচটা অবিশ্বাস্যভাবে হেরে বসল, সেখানে আগের ইনিংয়ে আফগানিস্তান দেখিয়েছিল মুদ্রার উল্টো পিঠ। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর শহীদি-নবী শতরানের জুটি গড়ে আফগানদের পথ দেখিয়েছিল। অথচ ৮৪ রান করা নবী ফিরতে পারতেন বহু আগেই। রিশাদের বলে এলবিডব্লিউটা স্পষ্টই দেখা গেল, অথচ বাংলাদেশ আবেদনই করল না। সেটা নিয়ে জানতে চাইলে মিরাজ হেসে ওঠেন, "দেখেন আমি যখন নিজে বল করি তখন ভালো বুঝতে পারি, বা বাইরে থাকলে যখন সার্কেলের ভেতরে ফিল্ডিং করি। কিন্তু কালকে যে মোমেন্টামটা ছিল, সেখানে দূর থেকে আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। আর এটা ভালো বলতে পারে বোলার বা উইকেটকিপার। তো বোলার হয়তো কনফিডেন্স নিয়ে ক্যাপ্টেনকে কনভিন্স করতে পারেনি। এজন্য হয়তো রিভিউটা নিতে পারেনি"
তবে বোলারদের আলাদা করে কোনো দোষ দেখছেন না মিরাজ। পেসারদের তো ভাসালেন প্রশংসায়। প্রথমেই দ্রুত পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেলতে পারার জন্য পেসারদের কথা আলাদা করে বলতে গিয়েই অবশ্য নিজের ভূমিকা পালন করতে না পারার ব্যর্থতাটা তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। সাকিব দলে না থাকায় এখন যে উইকেট শিকারের ভূমিকাটাও তাকে বুঝে নিতে হচ্ছে সেটা মানছেন তিনি। মাঝের ওভারগুলোতে তিনি বা রিশাদ একটা, দুটো উইকেট বের করতে পারলে যে চিত্রটা ভিন্ন হত সেটাও মেনে নিচ্ছেন মিরাজ।
তাই প্রথম ম্যাচ হেরে হাল ছাড়ছেন না। বরং এসব থেকে শক্তি নিয়ে তাকাতে চাচ্ছেন পরের ম্যাচের দিকে, "আমাদের অপরচুনিটি আছে, একটা ম্যাচ হেরেছি। এখনও দুটো ম্যাচ আছে। নেক্সট ম্যাচটা আমাদের জন্য ইম্পরট্যান্ট। এখন ব্যাকফুটে আছি। আর যেহেতু আমরা একটা ম্যাচ খেলেছি এখানে, লম্বা সময় পরে ওয়ানডে খেলেছি, আপনারা দেখেন আমরা ৭-৮ মাস পর ওয়ানডে খেলেছি। তো একটু সবার ভেতরে ওই বিষয়টাও কাজ করছিল, যে অনেকদিন পর একটা ওয়ানডে খেলছি। আমরা প্রিপেরাশেনটাও ওভাবে নিচ্ছি। এই মাঠে একটা ম্যাচ খেলেছি। তো মোমেন্টামটা কীভাবে নিতে হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করছি আমরা।"
পরের ম্যাচের আগে অবশ্য বাংলাদেশ শিবির পেয়েছে দুঃসংবাদ। মুশফিকের ছিটকে পড়া নিয়ে তাই মিরাজকে কথা বলতে হল আলাদা করে, "আমাদের জন্য অবশ্যই দুঃখজনক যে মুশফিক ভাই ইনজুরড হয়েছেন। এবং মুশফিক ভাই টিমের ভেতর কত ইম্পরট্যান্ট পারসন সেটা আমরা সবাই জানি। উনি যেভাবে ক্রিকেট খেলেন ও দেশকে যেভাবে সার্ভিস দিয়ে গিয়েছেন, সেটা অসাধারণ ছিল। "