জাকের-ঝড়ের পর বোলারদের দাপটে বাংলাদেশের 'ক্লিন সুইপ'
৩য় টি-টোয়েন্টি, সেইন্ট ভিনসেন্ট (টস - বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ - ১৮৯/৭, ২০ ওভার (অনিক ৭২*, ইমন ৩৯, মিরাজ ২৯, শেফার্ড ২/৩০, চেইজ ১/১৫, মোতি ১/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ১০৯, ১৬.৪ ওভার (শেফার্ড ৩৩, চার্লস ২৩, পুরান ১৫, রিশাদ ৩/২১, মাহেদী ২/১৩, তাসকিন ২/৩০)
ফলাফল - বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ, সেটাও তাদের মাটিতেই। জাকের আলীর 'ক্যালিপ্সো' ইনিংসের পর বোলারদের দাপটে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
১৯০ রানের বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েই যেন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলেই কিংকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাসকিন উইকেট পাওয়ার পর বৃষ্টির কারণে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকলে এরপর আবারো উইন্ডিজ ব্যাটারদের যমরূপে আবির্ভূত হন মাহেদী। পাওয়ারপ্লেতে আবারো পান দুই উইকেট। মজার ব্যাপার পুরানকে তিনি বোল্ড তো করলেন বটেই, সেই সাথে সিরিজের তিন ম্যাচেই তাকে ফেরান মাহেদী। পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই বল হাতে নিয়ে হাসান উইকেট পেলে অলস এক দৌড়ে রান আউট হয়ে ফেরেন চার্লস। কিছুক্ষণ পরে ১২ বলে ২ রানে ধুঁকতে থাকা পাওয়েলকে রিশাদ ফেরালে ম্যাচ কার্যত শেষ হয়ে যায় সেখানেই।
সেই রিশাদ এরপর রীতিমত ছড়ি ঘোরান, পেয়ে যান ক্যারিয়ার সেরা ফিগারের দেখা। অন্যদিকে ম্যাচের ভাগ্য কেবল বিলম্বিত করেছেন শেফার্ড। যেই তানজিম সাকিবের ওপর চড়াও হয়েছিলেন শেফার্ড, ২৭ বলে ৩৩ রানে সেই সাকিবই তার ইনিংসের ইতি টানেন। সেখান থেকে রিশাদের তিন উইকেটের সাথে তাসকিনের তুলির শেষ আচড়ে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৮০ রানের বড় জয়।
জয়ের রাস্তাটা আজ গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটাররা, বিশেষ করে জাকের আলী। সৌম্যর ইনজুরিতে দলে সুযোগ পাওয়া ইমন এদিন ঝড় তুলেছিলেন শুরুতেই। তবে অন্য প্রান্তে সুবিধা করতে না পারা লিটন ফেরেন পঞ্চম ওভারেই, শেফার্ডের শিকার হয়ে ১৩ বলে ১৪ রানে। আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আলজারির শিকার হয়ে থামেন ইমনও। ডিপ স্কয়্যার লেগে গ্রেভসের ক্যাচে শেষ হয় ইমনের ২ ছয় ও ৪ চারে সাজানো ২১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। তবে এরপর বাংলাদেশের ইনিংসে কিছুটা ভাটা পড়ে।
একেবারেই সুবিধা করতে না পারা তানজিদ তামিম বলপ্রতি ৯ রানে ফেরার পর হাত খুলতে না পারা মিরাজ ফেরেন ২৩ বলে ২৯ রান করে। পরের অংশটুকু যেন নাটকীয়তায় পূর্ণ! বাউন্ডারির দিকে বল ঠেলে দিয়ে জাকের দৌড়ালেন প্রাণপনে; তিন রান নিতে গিয়েই দেখলেন ফিল্ডার মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ব্যথায়। স্পোর্টসম্যানশিপের দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জাকের নিলেন না তৃতীয় রানটি। অথচ পরের ওভারেই শামীমের সাথে চরম ভুল বোঝাবুঝি! দুজনেই এক প্রান্তে চলে গেলে গজগজ করতে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। তবে থার্ড আম্পায়ার বেশ সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত দিলেন তার পক্ষে। শামীমকে তখন ফিরতে হলে তাকে ড্রেসিং রুম থেকে ডেকে পাঠান আম্পায়ার। তবে ওভার গড়াতেই এবার তার সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে ডায়মন্ড ডাকের শিকার শেখ মাহেদী।
সেখান থেকে যেন পণ করেছিলেন সব পুষিয়ে দেওয়ার। দিলেনও ঠিকই! সেই অফ স্টাম্প পেরিয়ে আরও বেরিয়ে এসে চিরাচরিত সব ছয় লেগ সাইড দিয়ে। তবে আজ অবাক করলেন অফ সাইডটাও কাজে লাগিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবিয় স্টাইলে হাঁকালেন বিশাল সব ছয়। শেষ ওভারে তো আলজারির ওপর চড়াও হয়ে তিন ছয়ে নিলেন ২৫ রান, যা টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের শেষ ওভারে সর্বোচ্চ। জাকেরের ৩ চার ও ৬ ছয়ে সাজানো ৪১ বলে ৭২* রানের ইনিংসটাই যেন বাংলাদেশকে জুগিয়েছিল আত্মবিশ্বাস।