'বক্স অফিস' বক্সিং ডে ফুটবল
বক্সিং ডে ফুটবল মানেই প্রিমিয়ার লিগে জমজমাট ফুটবল, ব্যত্যয় ঘটল না এবারো। তথাকথিত 'বিগ সিক্স' থেকে আর্সেনাল ছাড়া মাঠে নেমেছিল সব দলই, জয় পেয়েছে কেবল লিভারপুল। লিগের শীর্ষ স্থানীয়দের তাড়া করতে থাকা চেলসিও হেরে বসায় আর্ন স্লটের দল এখন শীর্ষে সাত পয়েন্ট এগিয়ে, সেটাও হাতে এক ম্যাচ নিয়ে।
লিভারপুল নেমেছিল দিনের শেষ ম্যাচ খেলতে। আর শুরুটা হয়েছিল টানা চারবারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের দিয়ে, যাদের এখন চেনাই দায়। চেনা গেলো না এদিনও। ম্যানচেস্টার সিটির এই গেরো কবে খুলবে এই প্রশ্ন বোধহয় কারো জানা নেই। এভারটনের বিপক্ষে সুযোগ যে মেলেনি এমন না। ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে পারত সিটিজেনরা, এগিয়ে দিতে পারতেন আরলিং হালান্ড। তবে তার পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেয় জর্ডান পিকফোর্ড, ফিরতি শটে হালান্ড বল জালে জড়ালেও ভিএআরের সিদ্ধান্তে বাতিল হয় সেই গোল। অবশ্য বার্নার্ডো সিলভার গোলটাও তারা ধরে রাখতে পারেনি। এনদিয়ায়ের ৩৬ মিনিটের গোলের পর ইতিহাদ থেকে ঠিকই পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে আগের ম্যাচে চেলসিকে আটকে দেওয়া এভারটন।
এই চেলসির ভাগ্যও পুড়েছে লন্ডনের ডার্বিতে। ফুলহামের বিপক্ষে মাঝমাঠ ছিঁড়েখুঁড়ে দারুণ এক গোল পান কোল পালমার। এক পঞ্জিকাবর্ষে চেলসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়ে বসেন ১৬ মিনিটেই (২৬ গোল)। কিন্তু শেষ পনেরো মিনিটের ঝড়ে চেলসি নিজেদের মাঠেই উড়ে গেল। হ্যারি উইলসনের গোলে ফুলহাম সমতা ফেরানোর পর যেভাবে ব্লুজদের ওপর চেপে বসেছিল তারই পরিক্রমায় একদম শেষ মুহূর্তে গোল পেয়ে যান মুনিজ। তাতেই কপাল পোড়ে চেলসির।
চেলসির চেয়েও পোড়া কপাল তাদের লন্ডনের ক্লাব টটেনহামের। বড় ক্লাবের বিপক্ষে দুর্দান্ত স্পার্স যেখানে সেখানে পয়েন্ট খোয়াচ্ছে। তবে নামের বিচারে নয়, মৌসুমের মান বিচারে হয়তো এই ম্যাচে ফেবারিট ছিল প্রতিপক্ষ নটিংহাম ফরেস্ট। চারে থাকা ক্লাবটা শেষ মুহূর্তে লাল কার্ডে জর্জরিত টটেনহামকে স্তব্ধ করে দিয়েছে অ্যান্থনি এলাঙ্গার একমাত্র গোলে।
এলাঙ্গার সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অন্যদিকে নতুন কোচের অধীনেও স্বস্তিতে নেই। চার ম্যাচ পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোনো প্রিমিয়ার লিগ কোচ হিসেবে সর্বনিম্ন পয়েন্টের (৭) রেকর্ডটা এখন রুবেন আমোরিমের নামের পাশে। শঙ্কার জায়গাটা অবশ্য গতকাল মাঠে যা ঘটে গেছে সেখানে। আমোরিমের অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজ গতকাল দেখেছেন লাল কার্ড; ওখান থেকেই শুরু রেড ডেভিলদের আরো এক দুর্ভোগের রাতের। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার সময় ব্রুনোর দিকে ফিরেও তাকানই আমোরিম! দশজনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে দারুণ খেলা ম্যাতেউস কুনিয়া ও শেষ মুহূর্তে হুয়াং হি-চানের গোলে নতুন কোচের অধীনে জয়ের ধারা বজায় রাখলো উলভস।
লাল কার্ডের ছড়াছড়ি বক্সিং ডে-তে একই দুর্ভাগ্যের চক্করে পড়েছে অ্যাস্টন ভিলা। তাদের তারকা ফরওয়ার্ড জন ডুরান লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নিউক্যাসলের কাছে। মজার ব্যাপার - বক্সিং ডে ফুটবলে সর্বোচ্চ লাল কার্ডের রেকর্ড এই অ্যাস্টন ভিলারই, ৫ লাল কার্ড দিয়ে সেই রেকর্ডটাই আরো উপরে নিয়ে গেছে ক্লাবটা। দশজনের সুযোগ নিয়ে ছুটতে থাকা নিউক্যাসল পেয়েছে তাদের টানা চতুর্থ জয়। অ্যান্থনি গর্ডন, আলেক্সান্ডার ইসাক ও জোয়েলিন্টনের গোলে নিউক্যাসল জয় পেয়েছে প্রতাপের সাথে।
সেই প্রতাপটা দেখা গেছে লিভারপুলের খেলাতেও। মাত্র ৬ মিনিটেই জর্ডান আইয়ুর গোলে পিছিয়ে পড়েছিল অল রেডরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধ এলেই যেন লিভারপুল এবার অন্য গ্রহের দল। স্লট তাদের কী শেখান, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ধারা বজায় রেখে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে না হতেই লিড নিয়ে নেয় লিভারপুল। কোডি গাকপোর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের পর দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিট গড়াতেই দারুণ গোলে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন কার্টিস জোনস। প্রিমিয়ার লিগে এতদিন অ্যাসিস্ট খড়া কাটছিল অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের; আর এদিন প্রথম দুই গোলেই তার অবদান! সেখান থেকে অবধারিতভাবেই পরে ম্যাচে গোল পান সালাহ। গড়েন একাধিক রেকর্ড। থিয়েরি অরিকে ছাড়িয়ে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে ছুঁয়েছেন ২৫০ গোল/অ্যাসিস্টের মাইলফলক, সেটাও মাত্র ২৬৭ ম্যাচে! সেই সাথে ছুঁয়েছেন ঘরের মাঠে ১০০ প্রিমিয়ার লিগ গোলের মাইলফলক। আর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিন মৌসুমে ১০+ গোল ও অ্যাসিস্টের রেকর্ড গড়েছেন। 'ইজিপশিয়ান কিং' যেন এবার অপ্রতিরোধ্য! যেখানে আগের মৌসুমে সর্বসাকুল্যে পেয়েছিলেন ১৮ গোল, সেখানে এরই মধ্যে পেয়ে গিয়েছেন ১৬ গোল, আগের মৌসুমের অ্যাসিস্ট সংখ্যা ছাড়িয়ে এরই মধ্যে নামের পাশে সেই সাথে আছে ১১ অ্যাসিস্ট! সালাহর মতো লিভারপুলও এবার তাই দুর্দমনীয়। সেই চতুর্থ গেমউইকে একমাত্র হারের পর এখনো অপরাজিত লিভারপুল!