আট গোলের থ্রিলারে জিতল ম্যান সিটি
গোল, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, কার্ডের ছড়াছড়ি- কী ছিল না ৯০ মিনিটের ম্যাচে! ইতিহাদ স্টেডিয়াম দেখল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ! আট গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। দু' বার পিছিয়ে পড়েও মোনাকোকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে গার্দিওলার ম্যান সিটি।
প্রথমার্ধ শেষেই হারের শঙ্কা ভর করেছিল গার্দিওলার দলের ওপর। ২৫ মিনিটে স্টার্লিং এর গোলে এগিয়ে গিয়েও প্রথমার্ধটা শেষ করতে হয়েছিল ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেই। ফ্যালকাও এর গোলে ৩২ মিনিটে সমতা আনার পর মোনাকোকে এগিয়ে দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে । উত্তেজনায় ভরা প্রথমার্ধ যেন ছিল দ্বিতীয়ার্ধের ট্রেলার! দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফ্যালকাওকে ফাউল করে মোনাকোকে পেনাল্টি দিয়ে বসেন নিকোলাস ওটামেন্ডি। ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচের লিড আরও বড় করার সুযোগ পায় মোনাকো।
ম্যাচে দুই গোল করলেও ম্যাচশেষে ওই মুহুর্তটাই আক্ষেপে পোড়াবে ফ্যালকাওকে! কলাম্বিয়ান স্ট্রাইকারের নেয়া দুর্বল স্পটকিক সহজেই ঠেকিয়ে দেন সিটি গোলরক্ষক ক্যাবেয়ারো। একপাশে যখন ক্যাবেয়ারো 'হিরো' অন্যপাশের গোলরক্ষক তখন করে বসেন এক 'ভুল'। ছোট-ছোট ওই ভুলগুলোর খেসারতই আসলে দিতে হয় মোনাকোকে ম্যাচ হেরে।
৫৮ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরোর কাছের পোস্টে নেয়া শট মোনাকো গোলরক্ষক সুবাসিচ ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফিরে আসে ম্যানসিটি। ২-২ গোলে সমতার ম্যাচে তখন টানটান উত্তেজনা। আগুয়েরোরের গোলের রেশ না কাটতেই আবারও গোল খেয়ে বসে সিটিজেনরা। একটু আগে পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারা ফ্যালকাও এবার নিজের জাত চেনালেন! ৬১ মিনিটে দারুণ এক চিপে ক্যাবেয়ারোর মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে পুরো স্টেডিয়াম নীরব করে দেন ফ্যালকাও।
৩-২ গোলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ জয়টা তখনও দুরাশাই মনে হচ্ছিল গার্দিওলার দলের জন্য। তার ওপর তিন অ্যাওয়ে গোল হজম করার অস্বস্তি তো ছিলই। ফ্যালকাও জাদু দেখাবেন কিন্তু আগুয়েরো বসে থাকবেন তা কি করে হয়? ইতিহাদে এসে নায়ক হয়ে যাবেন সাবেক ওল্ড ট্রাফোর্ডের খেলোয়াড় ফ্যালকাও- সেটাও বোধ হয় চাননি ফুটবল বিধাতা।
ফ্যালকাও এর ওই গোলের ঠিক ১০ মিনিট পর এবার নিজের মুন্সিয়ানা দেখালেন আগুয়েরো। কর্নার থেকে ভলিতে গোল করে ৩-৩ এ সমতা আনেন ম্যাচে। এরপর বাকি সময়ের পুরোটাই চলে সিটির 'বীরত্বগাথা'।
দু'বার পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনাটা করেছিলেন আগুয়েরো। এবার পথ দেখালেন অন্যরা। আরও একবার কর্নার থেকেই এলো গোল। ৭৭ মিনিটে ডি ব্রুইনার কর্নার থেকে ইয়াইয়া তোরের মিস হেড এসে পড়ে জন স্টোনসের পায়ে। প্রথম সুযোগেই বল জালে জড়িয়ে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন স্টোনস। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম গোলটা এই সিটি ডিফেন্ডার আলাদা করে মনে রাখবেন আজীবনই!
স্কোরলাইন যখন ৪-৩, অনেকেই তখন ব্যস্ত দ্বিতীয় লেগের হিসেব কষতে। কিন্তু নাটকের শেষ ছত্র তখনও বাকি। তিন অ্যাওয়ে গোল আর মাত্র এক গোলে পিছিয়ে থাকায় ঘরের মাঠে পরের লেগে মোনাকোকেই মনে হচ্ছিল ফেভারিট। আর দুইবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচটা জিততে পারলে খুশি মনেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল সিটি সমর্থকদের। এমন সময় আবারও গোল! লিরয় সানে! ৮২ মিনিটে আগুয়েরোর ক্রস থেকে গোল করে ম্যাচটা পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় ম্যানসিটি।
পাশাপাশি সুবিধাজনক স্থানে থেকেই দ্বিতীয় লেগে যাচ্ছে গার্দিওলার দল। আট গোলের ম্যাচটা অবশ্য সহজেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারত! ম্যাচের শেষ দিকে দুই গোলরক্ষকই দারুণ কিছু সেভ না করলে গোলসংখ্যা আরও বাড়ত!
ইংল্যান্ডে যখন ৫-৩ গোলের 'থ্রিলার' চলছিল, পিছিয়ে ছিল না চ্যাম্পিয়নস লিগে রাতের অন্য ম্যাচটাও। বেয়ার লেভারকুসেন আর অ্যাটলেটিকোর ম্যাচ দেখেছে ছয় গোল। তবে জার্মানদের মাঠ থেকে শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের জয় নিয়েই ফিরতে পেরেছে সিমিওনের দল।
প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচে সহজ জয়ের আশাই করছিল অ্যাটলেটিকো। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কাজটা কঠিন বানিয়ে দেন কারিম বেলারাবি। এক গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন লেভারকুসেনকে। কিন্তু ৫৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে আবারও পিছিয়ে পড়ে লেভারকুসেন।
৩-১ এ পিছিয়ে পড়েও হাল না ছাড়ার ফল পেতে অবশ্য দেরি হয়নি জার্মান দলটির। স্টেফান সাভিচের আত্মঘাতী গোলে আরও একবার ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় লেভারকুসেন। কিন্তু ৮৬ মিনিটে বদলী স্ট্রাইকার ফার্নান্দো তোরেসের গোলে দুই গোলের ব্যবধানটা আবারও পুনুরুদ্ধার করে অ্যাটলেটিকো। ম্যাচ শেষ হয় ৪-২ গোলে।
অ্যাটলেটিকোর জয়ের দিনে একটা রেকর্ডও করে ফেলেছেন অ্যান্টোয়ান গ্রিজমান। ২৫ মিনিটে করা দলের দ্বিতীয় গোল দিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন লুইস আরাগোনাসকে। ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতায় এখন গ্রিজমানই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৩)। অ্যাটলেটিকোর হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন সল নিগুয়েজ।