রোনালদো ৩: ০ অ্যাটলেটিকো
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হ্যাটট্রিক করেছেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান, এটা কোনো খবর হলো নাকি? রোনালদোর জন্য তো হ্যাটট্রিক নতুন কিছুই নয়। ক্যারিয়ারে কম তো আর করেননি। তবে রোনালদো জানেন, বার্নাব্যু জানে, আজকের হ্যাটট্রিক কতটা প্রার্থিত ছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগে পর পর দুই ম্যাচে বা সেমিফাইনালে মাত্র চতুর্থ হ্যাটট্রিক বলে শুধু নয়, অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যও তো। তার চেয়েও বড় কথা, অ্যাটলেটিকোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কার্ডিফে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও রিয়াল টিকিট বুকিং দিয়েই ফেলল। টানা দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার অভিশাপ রোনালদো কাটাতে পারবেন, এই বাজিও ধরে ফেলতে পারেন।
এক সপ্তাহ আগে বার্নাব্যুর ওই স্মৃতি নিশ্চয় রোনালদো ভুলে যাননি। সুযোগ পেয়েও পায়ে ঠেলেছিলেন, মাথা নিচু করে ক্লাসিকোতে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। রোনালদোর সমালোচনাও তো তখন কম হয়নি। আজ শুরু থেকেই যেন পণ করে রেখেছিলেন, সব কিছু উত্তর দেবেন মাঠেই।
ম্যাচের শুরু থেকেই অ্যাটলেটিকো খেই হারিয়ে ফেলেছিল। প্রথম সুযোগটাও পেয়ে যায় রিয়ালই। নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা করিম বেনজেমা হঠাৎ করে পায়ে চলে আসা বলটা বলটা জালে ঠেলতে পারলে এগিয়ে যেত রিয়াল। তবে সেজন্য খুব বেশিক্ষণ আক্ষেপ করতে হয়নি। এবার কর্নারটা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে না পারায় বল এসে পড়ে কাসেমিরোর পায়ে। তাঁর ক্রসে দারুণ এক হেডে লাফিয়ে উঠে বল জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো। প্রথমার্ধেই আরও অন্তত দুই গোল রিয়াল দিতে পারতই। গোটাদুয়েক সুযোগ নষ্ট করেছেন করিম বেনজেমা, ২৪ মিনিটে মদ্রিচের শট অল্পের জন্য চলে গেছে বাইরে। গোল শোধ করতে পারত অ্যাটলেটিকোও। কেভিন গামেইরোকে একা পেয়ে দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন কেইলর নাভাস।
কিন্তু অ্যাটলেটিকোকে দেখে মনে হচ্ছিল না, তারা আদৌ ম্যাচে ফিরতে পারবে। বার্নাব্যুর গগনবিদারী চিৎকার যেন তাদের বিভ্রান্ত করে দিচ্ছিল, এর মধ্যেই আবারও এগিয়ে যায় রিয়াল। গোল না করার জন্য বেনজেমাকে যতটা শাপশাপান্ত করেছেন রিয়াল-ভক্তরা, দ্বিতীয় গোলের পর কিছুটা ক্ষমা করতে পারেন। ৭৩ মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে তাঁর বল পেয়েই দারুণ এক ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন রোনালদো। জিদানের উদযাপনটাও তখন বলে দিচ্ছিল, এই জয় তাঁর জন্যও কতটা দরকার ছিল।
রিয়ালের জয় তখন নিশ্চিত হয়ে গেছে অনেকটাই। তবে আরও বাকি ছিল কিছু। ৮৬ মিনিটে আবারও দারুণ এক প্রতি আক্রমণ থেকে ফাঁকায় বল পেলেন রোনালদো। আগের দুই গোলের তুলনায় এবার সুযোগটা ছিল সহজ, কাজে লাগাতে ভুল করেননি। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০৩তম গোলটাও পেয়ে গেলেন, প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ছয় মৌসুমে অন্তত ১০ গোলও হয়ে গেল। ইতিহাস হয়েছে আরও অনেক কিছুই। রিয়াল যেমন অবিশ্বাস্যভাবে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ক্লিন শিট পেয়েছে। তবে আপাতত রোনালদো এসব সংখ্যা-টংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইবেন না। তাঁকে চেনানোর জন্য যে সংখ্যার দরকার হয় না!