একদিকে হিগুয়াইন, অন্যদিকে বুফন
চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে এর আগে ২৪ ম্যাচ খেলে গোলের দেখা পেয়েছিলেন মাত্র দু'বার। আজ মোনাকোর বিপক্ষে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে সেই গোল সংখ্যাটা দ্বিগুণ করলেন। গঞ্জালো হিগুয়াইনের দুই গোলেই ফ্রান্স থেকে জয় নিয়েই ফিরল জুভেন্টাস। মোনাকোকে ২-০ তে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের মতো দ্বিতীয় লেগের আগেই কার্ডিফের ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
লিগে যতো ভয়ঙ্কর, চ্যাম্পিয়নস লিগে ততোটাই নিষ্প্রভ- এমন তকমাও জুটেছিল হিগুয়াইনের নামের সাথে। ম্যাচের প্রথম বিশ মিনিটেও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ২৯ মিনিটে করেন নিজের প্রথম গোল। এটি ছিল চলতি মৌসুমে হিগুয়াইনের ৩০ তম গোল। ২০০১-০২ এ ডেভিড ত্রেজেগের পর প্রথম জুভেন্টাস খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমে ৩০ গোলের রেকর্ড গড়েন এই আর্জেন্টাইন। দ্বিতীয়ার্ধে আরও এক গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজের গোলের সংখ্যাও বাড়িয়ে নিয়েছেন 'এল পিপিতা'।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে মাত্র দুই গোল হজম করা জুভেন্টাসের প্রতিপক্ষ ছিল গত চার ম্যাচে ১২ গোল করা মোনাকো। জুভেন্টাসের রক্ষণ বনাম মোনাকোর আক্রমণই ছিল ম্যাচের মূল আকর্ষণ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তুরিনের ওল্ড লেডিদের রক্ষণদুর্গের সামনেই পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে মোনাকোকে।
ম্যানচেস্টার সিটি ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে বিদায় করে সেমিতে পা রাখা তরুণ দলটিই অবশ্য আশাব্যঞ্জক শুরু করেছিল। গত ১৮ ম্যাচে ১৮ গোল করা স্ট্রাইকার এমবাপ্পেই শুরু করেছিলেন মোনাকোর আক্রমণ। দু'বার গোলের সুযোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত ১৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার হার মানেন জিয়ানলুইজি বুফনের কাছে।
তারুণ্যনির্ভর মোনাকো এরপর ম্যাচে পথ হারায় আসলে জুভেন্টাসের অভিজ্ঞতার কাছেই। ২৯ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে জুভেন্টাসকে ম্যাচে ফেরান হিগুয়াইন। পাউলো দিবালার চোখ ধাঁধানো ব্যাক ফ্লিকে মাঝমাঠে বল পেয়ে যান জুভের নাম্বার নাইন। মোনাকোর ডিফেন্স লাইন বরাবর রাইট উইং পজেশনে খেলা দানি আলভেজকে পাস দেন এই স্ট্রাইকার। দানি আলভেজের আরেকটি ব্যাক ফ্লিক থেকে নিখুঁত ফিনিশে বল জালে জড়ান হিগুয়াইন। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ তেই।
বিরতির পর খেলার শুরুতেই ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল মোনাকো। কিন্তু র্যাদামেল ফ্যালকাওয়ের দূর্বল শট সহজেই নিজের তালুবন্দী করেন বুফন। ৫৯ মিনিটে হিগুয়াইনের দ্বিতীয় গোলের আগ পর্যন্ত এরপর ম্যাচে আর তেমন আক্রমণ সাজাতে পারেনি কেউই।
হিগুয়াইনের দ্বিতীয় গোলটিও সেই দানি আলভেজ-দিবালারই তৈরি। মোনাকোর অর্ধ থেকেই বাকায়োকোর কাছ থেকে বল ছিনিয়ে দিবালা পাস দেন দানি আলভেজকে। ব্রাজিলিয়ানের ক্রসে আবারও গোল করেন হিগুয়েইন। পার্থক্য, এবার জালে বল জড়ালেন বাঁ পায়ে। দুই গোলে প্রতিপক্ষের মাঠে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচ অনেকটাই সহজ হয়ে যায় জুভেন্টাসের। তবে এরপর হিগুয়াইন বদলী হয়ে মাঠের বাইরে আসলে থেমে যায় জুভেন্টাসের আক্রমণের ধারও!
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করা মোনাকোকে পুরো ম্যাচজুড়েই হতাশ করেছেন কিয়োলিনি, বনুচ্চিরা। তবে ফ্যালকাওদের গোলবঞ্চিত করার সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা বুফনেরই। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও নিজের গোলবার সামলেছেন শক্ত হাতে। চ্যাম্পিয়নস লিগে এই নিয়ে টানা ৬ বার ক্লিনশিট রেখে নিজের শততম ম্যাচটা স্মরণীয় করেই রাখলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান। নিজের ছেলের বয়সী এমবাপ্পেকে তো বটেই, ম্যাচের শেষদিকে ভ্যালেরে জার্মেইনের দুর্দান্ত এক হেড এক হাতে ঠেকিয়ে দিয়ে জুভেন্টাসের কার্ডিফ যাত্রাটা একরকম নিশ্চিত করেছেন বুফন নিজেই।
আরও একবার নিজের গোলপোস্ট আগলে রেখে ম্যাচশেষে কপালে হাত রেখে গ্যালারির জুভেন্টাস সমর্থকদের কিছু একটা ইঙ্গিত করছিলেন বুফন! হয়তো বোঝাতে চাচ্ছিলেন ফাইনালেই চোখ রাখছেন তিনি! এই একটি শিরোপাই তো অধরা রয়ে গেছে জিয়ানলুইজি বুফনের বর্ণিল ক্যারিয়ারে!