কিক অফের আগে: অসম্ভবের আশায় অ্যাটলেটিকো, সতর্ক রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ তিন মৌসুমেই অ্যাটলেটিকোকে হারালেও চার ম্যাচে গোল করেছিলেন মাত্র একবার। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সেমিফাইনাল প্রথম লেগে যেন স্বরূপে ফিরলেন রোনালদো। ‘সিআর৭’-এর হ্যাটট্রিকে ৩-০ গোলের লিড নিয়ে ভিসেন্তে ক্যালদেরনে আজ দ্বিতীয় লেগে নামবে জিদানের দল। অঘটনের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামা অ্যাটলেটিকো এখনো স্বপ্ন দেখছে কার্ডিফের। ওদিকে শেষ চার মৌসুমে তৃতীয়বারের মত ইউরোপসেরা প্রতিযোগীতার ফাইনালে যাওয়ার হাতছানি রিয়ালের সামনে।
খেলার ধরন বদলাবেন না জিদানঃ
৩-০ গোলের লিড থাকলেও পা মাটিতেই রাখছেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। দ্বিতীয় লেগের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “নিজেদের মাঠে অ্যাটলেটিকো ভয়ঙ্কর এক প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমরা রিয়াল মাদ্রিদ। এগিয়ে থাকলেও আমাদের খেলার ধরনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। অ্যাটলেটিকোর শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল। মনোসংযোগের সামান্যতম ব্যঘাত ঘটলে তারা আমাদের ভোগাবে। আমরা এখনো ফাইনালে জায়গা পাকা করিনি, তারাও এখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয়নি। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য অন্য যেকোনো ম্যাচের মতই। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে চাই আমরা”।
শিষ্যদের ওপর অগাধ আস্থা সিমিওনেরঃ
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর অধীনে প্রথম লেগের মত এমন গড়পড়তা পারফরম্যান্স খুব কমই আছে অ্যাটলেটিকোর। আজ পাহাড়সম লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়েও নিজ খেলোয়াড়দের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন না দিয়েগো সিমিওনে, “কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আমি ওদেরকে বছর ছয়েক ধরে চিনি। বছর দুয়েক আগেই আমরা রিয়ালকে এই মাঠেই ৪-০ গোলে হারিয়েছিলাম। ফাইনালে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। আশা করি ক্যালদেরনের শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে আমরা বিস্ময়কর কিছু করে দেখাতে পারবো”।
কথার লড়াইটা টুইটারে
প্রথম লেগে রিয়াল সমর্থকদের একটিব্যানার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অ্যাটলেটিকো প্রেসিডেন্ট সেরেজো। প্রকান্ড এক প্রতীকী চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফির দুপাশে লিখা ছিল “লিসবন এবং মিলান”, আর উপরে লিখা ছিল “হারতে কেমিন লেগেছিল?”
এই ঘটনার কয়েকদিন পরই টুইটারে অ্যাটলেটিকো লিখেছিল, “আমরা জিততেও জানি, হারতেও জানি”। এর নিচে হ্যাশট্যাগে ছিল “তারা কখনোই সেটা বুঝতে পারবে না”। একই হ্যাশট্যাগ দিয়ে আরো একটি টুইটে তারা লিখেছে, “আমরা অ্যাটলেটিকোকে ভালবাসি মান-মর্যাদার জন্য, শিরোপাসম্ভারের জন্য নয়”।
এর পাশাপাশি গত সপ্তাহে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর পর রিয়ালের মাহাত্ম্য নিয়ে কথা বলেছিলেন রামোস। প্রত্যুত্তরে অন্য এক সংবাদ সম্মেলনে গাবি বলেছেন, “অর্থ-যশ-খ্যাতি-প্রতাপ এগুলো দিয়ে মাহাত্ম্য বোঝায় না”। গাবির এমন কথায় বেশ চটেছেন রিয়াল অধিনায়ক। গতকাল বলেছেন, “মানুষের হাবভাব দেখলে মনে হয় আমরা সবাই যেন বেভারলি হিলসে জন্মেছিলাম (উঁচু জাতে)। অথচ আমাদের প্রত্যেকেই শৈশব-কৈশোরে অনেক বাধা অতিক্রম করে এই অবস্থায় এসেছি”।
ইঞ্জুরি সমস্যা আছে দু দলেইঃ
প্রথম লেগে রাইটব্যাকে হুয়ানফ্রানের অনুপস্থিতি বেশ ভুগিয়েছিল সিমিওনেকে। এই ম্যাচের আগে হুয়ানফ্রান, হিমেনেজ অনুশীলনে ফিরলেও দুজনকে নিয়েই আছে সংশয়।
গ্রানাদার বিপক্ষে ম্যাচটি মিস করলেও অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে শুরু থেকে খেলবেন ভারান। এই অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষেই পাঁজরের হাড় ভাঙ্গা পেপে অনুশীলনে ফিরলেও তাকে স্কোয়াডে রাখেননি জিদান। রাইটব্যাকে কারভাহালের পরিবর্তে নাচোকেই দেখা সম্ভাবনা প্রবল। ইঞ্জুরির কারণে ম্যাচটি মিস করবেন গ্যারেথ বেল।
সম্ভাব্য একাদশঃ
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (৪-৪-২): ওবলাক, হুয়ানফ্রান, সাভিচ, গোদিন, লুইজ; গাবি, সল, কোকে, কারাস্কো; গ্যামেইরো, গ্রিয়েজম্যান।
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩): নাভাস; নাচো, ভারান, রামোস, মার্সেলো; ক্রুস, ক্যাসেমিরো, মদ্রিচ, ইস্কো; রোনালদো, বেনজেমা।
সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ
চ্যাম্পিয়নস লিগে পঞ্চমবারের মত মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী, আগের চারবারই অ্যাটলেটিকোকে হারিয়েছে রিয়াল। ইউসিএলে নিজেদের মাঠে ৩৫ ম্যাচে মাত্র দুবার হেরেছে সিমিওনের দল। কিন্তু সিমিওনের অধীনে নকআউট পর্বে মাত্র একবারই ৩+ গোল করতে সক্ষম হয়েছে অ্যাটলেটিকো। আজ গোল পেলে বায়ার্নের টানা ৬১ ম্যাচে জাল খুঁজে পাওয়ার রেকর্ডে ভাগ বসাবে রিয়াল।
ইউসিএল-এর নকআউট পর্বে তিন গোলের ব্যবধান টপকে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি কোনো দলই (পিএসজির কাছে বার্সা প্রথম লেগ হেরেছিল ৪-০ ব্যবধানে)। প্রিয় ভিসেন্তে ক্যালদেরনে শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে ইতিহাস গড়তে হবে অ্যাটলেটিকোকে। গ্রিয়েজম্যানরা কি পারবেন মহাকাব্যিক কিছু করতে? নাকি আবারো রিয়ালের হাতেই শেষ হবে সিমিওনের আরো একটি ইউরোপ অভিযান? জানা যাবে আজকের দ্বিতীয় লেগের পরই। বাংলাদেশ সময় রাত ১২:৪৫ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে টেন ২।