কিক অফের আগেঃ রিয়ালের ইতিহাস না জুভেন্টাসের শাপমোচন?
প্রায় দশক দুয়েক আগে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল জুভেন্টাস ও রিয়াল মাদ্রিদ। আমস্টারডাম অ্যারেনাতে ৯৭-৯৮ মৌসুমের সেই ফাইনালে জয় ছিনিয়ে এনেছিল রিয়ালই। প্রায় সোয়া যুগ পেরুনোর পর আজ আবারো ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপের দুই ‘রাঘব-বোয়াল’। সেদিনের ‘বিজিত’ জিদান আজ থাকবেন ‘লস ব্লাঙ্কোস’দের ডাগআউটে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে অধরা ইউসিএল জয়ের স্বপ্নে বুঁদ জিয়ানলুইজি বুফন। ওদিকে রিয়ালকে হাতছানি দিচ্ছে প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার অভূতপূর্ব ইতিহাস।
জুভেন্টাসকে ভুলে যাননি ‘রিয়ালের’ জিদান
বর্ণিল ক্লাব ক্যারিয়ারের সিংহভাগ রিয়ালে কাটালেও জুভেন্টাসে ফেলে আসা সোনালী সময়গুলো স্মৃতিতে এখনো সজীব জিদানের। সবসময়ই বলে এসেছেন, “একজন ফুটবলার হিসেবে আমার বেড়ে ওঠাতে জুভেন্টাসের অবদান অনস্বীকার্য”। কিন্তু ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে এসে আবেগটা চেপেই যাচ্ছেন জিদান। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “রিয়াল মাদ্রিদই আমার প্রাণের ক্লাব। এখানে ম্যানেজার হিসেবে ফিরে আসতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের”। পাঁচ বছর পর লিগ জেতা রিয়ালকে ‘ফেভারিট’ মানতে নারাজ ‘জিজু’। “মাঠে নিজেদের প্রমাণ করে শিরোপা নিয়েই ফিরতে চাই”- কার্ডিফে ফাইনাল-পূর্ব শেষ সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই কিংবদন্তী।
আত্মবিশ্বাসই মূল ভরসা অ্যালেগ্রির
ইতালীতে একচেটিয়া দাপট বিরাজ করা অ্যালেগ্রির জুভেন্টাসের মূলে আছে তাদের ইস্পাতদৃঢ় আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই ’৯৬-এরপর ইউসিএল জিততে যান অ্যালেগ্রি। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আগামীকাল রিয়ালের বিপক্ষে জিততে হলে এই আত্মবিশ্বাসকেই কাজে লাগাত হবে আমাদের”। প্রতিপক্ষে একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকলেও কিছুটা বিস্ময়করভাবে ক্যাসেমিরোকে রিয়ালের মূল অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন এই কোচ। বলেছেন, “ক্যাসেমিরো রিয়ালের ‘ফালক্রাম’। ও না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল মধ্যমাঠ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে রিয়ালের ছন্দপতন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি”।
কথার লড়াই চালাচ্ছেন ‘বার্সেলোনার’ আলভেজ
দল বদলালেও তার গায়ে এখনো বইছে বার্সেলোনার রক্ত। একসময়ের ‘চিরশত্রু’দের বিপক্ষে দানি আলভেজ যে আগুনে ঘি ঢেলে দিবেন না, এমনটা ভাবাই অবশ্য বোকামী। ৯৭-৯৮ মৌসুমে রিয়াল অফসাইড গোলে জিতেছিল- এমন দাবি নিয়েই সংবাদ সম্মেলন শুরু করেছিলেন এই ব্রাজিলীয়ান। তবে আলভেজের এসব স্পর্শকাতর কথা কানেই তোলেননি মার্সেলো, রামোসরা। মার্সেলো বলেছেন, “আমরা জানি ও কেন এমনটা করছে। প্রত্যেক বড় ম্যাচের আগেই আমাদের এসব শোনা লাগে”। মার্সেলোর সাথে সহমত প্রকাশ করেছেন অধিনায়ক রামোসও।
পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন দুই ম্যানেজার
মৌসুমের সবচেয়ে বড় ম্যাচে নিজেদের পছন্দের একাদশ মাঠে নামাতে পারবেন দুই ম্যানেজারই। বেল, কারভাহালের ইনজুরি সংশয় থাকলেও ফিটনেস টেস্ট উতরে গেছেন দুজনই। অবশ্য বেলের শুরু থেকে খেলার সম্ভবানা ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে মূল একাদশে দেখা যাবে ইস্কোকে। শেষ ট্রেনিং মিস করায় দর্শক বনেই উপভোগ করতে হবে পেপেকে।
মাঞ্জুকিচ, খেদিরাদের ইনজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন অ্যালেগ্রি। বেলের মত ‘মেডিক্যাল গ্রীন লাইট’ পেয়েছেন এই দুজনও।
সম্ভাব্য একাদশ
জুভেন্টাস (৩-৪-৩): বুফন; বনুচ্চি, কিয়েল্লিনি, বারজাগলি; আলভেস, খেদিরা, পিয়ানিচ, অ্যালেক্স সান্দ্রো; ডিবালা, হিগুয়াইন, মাঞ্জুকিচ।
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩): নাভাস; কারভাহাল, ভারান, রামোস, মার্সেলো; ক্রুস, ক্যাসেমিরো, মদ্রিচ; ইস্কো; রোনালদো, বেনজেমা।
সংখ্যায় সংখ্যায়
ইউরোপসেরা প্রতিযোগীতায় ১৯তম বারের মত মুখোমুখি হতে যাচ্ছে জুভেন্টাস-রিয়াল। দুই দলের জয় ৮টি করে, ড্র ২টি। ১৫তম বারের মত ইউরোপীয়ান কোনো প্রতিযোগীতার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল। ফাইনালে রেকর্ড যতটা ঈর্ষণীয়, ঠিক ততটাই মলিন জুভেন্টাসের রেকর্ড। সেই ’৮১-তে শেষবার ফাইনালে হেরেছিল রিয়াল, ওদিকে ছ’বার ইউসিএল ফাইনাল হেরেছে তুরিনের বুড়িরা।
আজকের ফাইনালের মোরাতা, হিগুয়াইনের জন্য একটি বেশিই তাৎপর্যপূর্ণ। রিয়ালে সাত মৌসুম কাটানো হিগুয়াইন মজেছেন ফাইনালে জুভেন্টাসের হয়েই শেষ হাসিটা হাসতে। ১৪-১৫ মৌসুমে মোরাতার গোলেই সেমি থেকে বাদ পড়েছিল রিয়াল। প্রিয় ক্লাবে ফিরেই বলেছেন, “আমার কাছে রিয়ালের একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ পাওনা আছে”। সেই ‘পাওনা’টা কি ‘সাবেক’ ক্লাব জুভেন্টাসের বিপক্ষেই চুকিয়ে দিবেন এই স্প্যানিয়ার্ড? জুভেন্টাস কি পারবে ফাইনাল হারের ‘রেকর্ড’ ভাঙ্গতে? নাকি প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ঘরে তুলবে রিয়াল? এতশত প্রশ্নের উত্তর মিলবে দুর্দান্ত এই ফাইনালের পরই। বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে একটায় শুরু হবে ম্যাচটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে টেন ১, টেন ২, সনি সিক্স।