অবশেষে বুফনকে 'হারালেন' মেসি
গোলশূন্যভাবেই বিরতির দিকে এগুচ্ছিল ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচটি। ৪৫ মিনিটে লিওনেল মেসি দৌড় শুরু করলেন মাঝমাঠ থেকে। ডিবক্সের কাছাকাছি এসে লুইস সুয়ারেজের সাথে খেললেন ওয়ান টু। ফিরতি পাস নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর ঢুকে স্বভাবসুলব মেসিময় ভঙ্গিতে বল জড়ালেন জালে। ওই গোলটাই যেন নির্ধারণ করে দিল ম্যাচের ভাগ্য। অথচ এর আগ পর্যন্ত পুরো ম্যাচেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। নিজের খারাপ দিনেও যে ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি, সেটাই যেন প্রমাণ করলেন আরও একবার। করেছেন দুই গোল, করিয়েছনও আরেকটি। আর তাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ 'ডি' এর ম্যাচে জুভেন্টাসকে ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনা হারাল ৩-০ ব্যবধানে।
জিয়ানলুইজি বুফনের বিপক্ষে এতোদিন কোনো গোল ছিল না মেসির। ৪৫ মিনিটের ওই গোলেই ভাঙলেন বুফনের প্রতিরোধ। পরে আরও একবার বুফনকে হার মানতে হয়েছে মেসির কাছে। বার্সার শেষ গোলটিও করেছেন এই আর্জেন্টাইন। অপরটি এসেছে রাকিতিচের কাছ থেকে।
ইনজুরির কারণে জর্জিও কিয়েলিনি, মার্কিসিও, মাঞ্জুকিচদের ছাড়াই দল সাজাতে হয়েছিল ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রিকে। অন্যদিকে এই ম্যাচ দিয়েই বার্সেলোনার জার্সি গায়ে প্রথম একাদশে জায়গায় পেয়েছিলেন উসমান ডেম্বেলে। এস্পানিওলের সাথে নামানো দলের সাথে পার্থক্য ছিল কেবল ডেলফুর না থাকাটাই। তবে, শুরুর ১০ মিনিট জুভেন্টাসের দাপটই ছিল বেশি। এমনকি পুরো ম্যাচে গোলের জন্য বেশি সংখ্যক শট করেছে জুভেন্টাসই। যদিও স্কোরলাইন তেমনটা বলছে না।
প্রথমে কিছুটা বেগ পেতে হলেও ঘরের মাঠে সময়ের সাথেই গুছিয়ে খেলতে শুরু করে বার্সা। মেসির একটি ফ্রি কিক প্রথমে জুভের দেয়ালে বাধা পেলেও, ফিরতি বলে ভালো শট করেছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু বুফন শক্ত হাতেই প্রতিরোধ করেন সেই শট। পরে জুভে ডিফেন্ডারদের ভুলে ডিবক্সের ভেতর একবার বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডেম্বেলেও। এবার গোল আর ডেম্বেলের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ান অ্যালেক্স সান্দ্রো।
প্রথমার্ধে অবশ্য বার্সেলোনার আগে জুভেন্টাসই ভালো গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। ডিবক্সের বাইরে থেকে মিরালেম পিয়ানিচের একটি শট টার স্টেগান দারুণভাবে ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারত তুরিনের ওল্ড লেডিরাই। গোল হজমের পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও খেই হারিয়ে ফেলে তারা। পাউলো দিবালা, গঞ্জালো হিগুয়াইনরাও ছিলেন ম্যাচজুড়ে নিষ্প্রভ। শেষদিকে গিয়ে অবশ্য দিবালা একটি শট নিয়েছিলেন। তবে হারাতে পারেননি স্টেগানকে।
বিরতির পর জুভেন্টাসকে আরও চেপে ধরে বার্সার আক্রমণভাগ। ইনিয়েস্তা, রাকিতিচরা মিলে মাঝমাঠের বল নিয়ন্ত্রণও বজায় রাখছিলেন আরও শক্তভাবে। প্রথমার্ধে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও পরের অর্ধে স্বমহিমায় হাজির লিওনেল মেসি। পেয়ে যেতে পারতেন হ্যাটট্রিকও! ৫২ মিনিটে মেসির নেয়া শট বারপোস্টে বাধা পেয়ে, বুফনের গায়ে লেগে গোললাইনের বাইরে চলে গেলে সে দফায় আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি বার্সার। তবে দ্বিতীয় গোলের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। এবার গোলের উৎস মেসি। ডান প্রান্ত থেকে ক্রস করেন মেসি। গোল লাইনের খানিকটা সামনে থেকে স্টেফানো স্টুরারোর আনাড়ি ক্লিয়ার থেকে বল পেয়ে যান রাকিতিচ। ৫৬ মিনিটে সেখান থেকে গোল করে বার্সার হয়ে লিড বাড়ান ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার।
৬৯ মিনিটে ইনিয়েস্তার পাস থেকে দুজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে রাকিতিচের মতো প্রায় একই জায়গা থেকে শট করেন লিওনেল মেসি। বারপোস্টের কল্যাণে আগেরবার বেঁচে গেলেও, আরও একবার হারতে হল বুফনকে। তিন গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট আসলে তখনই নিশ্চিত করে ফেলেছিল বার্সা। ৮০ মিনিটে দিবালার চেষ্টার দুই মিনিট পরই মেহেদি বেনাতিয়ার হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন জেরার্ড পিকে। তাই শেষদিকের সান্ত্বনাটাও জোটেনি জুভেন্টাসের কপালে। অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে গত এপ্রিলের হারটাই আসলে ফেরত দিল বার্সা। সেই ম্যাচে দুই গোল করেছিলেন দিবালা, এবার করলেন মেসি! আর তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ঘরের বাইরে কোনো মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারটাও কপালে জুটেছে জুভেন্টাসের।