• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    স্যামির ঝড়ের পর সামির তোপ

    স্যামির ঝড়ের পর সামির তোপ    

    রাজশাহী ১৮৫/৭, ২০ ওভার (স্যামি ৪৭*, রাইট ৪২, সাইফউদ্দিন ৩/৫০)  
    কুমিল্লা ১৫৫ অল-আউট, ১৯.১ ওভার (তামিম ৬৩, মালিক ৪৫, সামি ৪/৯)
    ফল : রাজশাহী ৩০ রানে জয়ী 


    একজনের বয়স ৩৪ ছুঁইছুঁই। আরেকজন ৩৬ পেরিয়ে গেছেন। একজন অধিনায়ক, আরেকজন বোলিংয়ে অন্যতম ভরসা। ব্যাটিংয়ে ড্যারেন স্যামির ঝড়ের সময় দর্শক ছিলেন মোহাম্মদ সামি। এরপর বোলিংয়ে সামি দেখালেন ঝলক, স্যামি তৃপ্ত অধিনায়ক। স্যামি আর সামিতে মিলেই কুমিল্লাকে হারিয়ে বিপিএল থেকে এখনও হারিয়ে গেল না রাজশাহী। 

    ১৮৬ রানের লক্ষ্য। ৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ৮৭ রানের জুটি তামিম-মালিকের। একটা চার মারার পরের বলেই টাইমিংয়ে গড়বড় করে ২৬ বলে ৪৫ রান করা মালিক ফিরতি ক্যাচ দিলেন ডোয়াইন স্মিথকে। 
    ৩৬ বলে ৬২ দরকার, ক্রিজে ফিফটি করা তামিম ইকবালের সঙ্গে জস বাটলার। মোহাম্মদ সামিকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছয় মারতে গিয়ে তামিম দিলেন ডিপ পয়েন্টের স্মিথের হাতে ক্যাচ। অথচ এভাবেই মারা তামিমের ছয়টাই দিনের সেরা শট। যাওয়ার পথে অলক কাপালিকে কী যেন বুঝালেন, কাপালি এসে যেটা করলেন, নিশ্চয়ই সেটা নয়। ব্যাক অব আ লেংথের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে হলেন বোল্ড। সাইফউদ্দিন এলেন, এক বল ডট দিয়ে তিনিও দিলেন ক্যাচ! যেন স্যামির ‘পিটুনি’ ভুলতে পারেননি, লাইন লেংথ না বুঝে খেলতে গিয়ে দিলেন সহজ ক্যাচ। ১৫তম ওভারে সামি দিলেন ২ রান, নিলেন ৩ উইকেট! শেষ পর্যন্ত সামির বোলিং ফিগার, ৪-০-৯-৪!

    সেই ওভারের পরও কুমিল্লার আশা হয়ে ছিলেন বাটলার। বেশি কৌশলি হতে গিয়ে তিনিও গেলেন! ফ্র্যাঙ্কলিনের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ। আরেক দফা আশা জোগালেন হাসান আলি, প্রথমে ফ্র্যাঙ্কলিন, পরে মুস্তাফিজকে ছয় মেরে। তার সেই পরিচিত স্লোয়ার অপরিচিত ঠেকেছিল, তুলে মারতে গিয়ে দিয়েছেন লং-অনে ক্যাচ, বিপিএলে মুস্তাফিজের প্রথম উইকেট এবারের আসরে। পরে রশিদ ফিরেছেন স্মিথের বলে। শেষ ওভারে স্যামি তুলেছিলেন ৩২ রান, কুমিল্লার শেষ ওভারেও প্রয়োজন ছিল সেটাই! মুস্তাফিজের দ্বিতীয় উইকেট পাওয়ার আগে কুমিল্লা নিতে পারলো ১ রান!  

     

     

    শেষের মতো কুমিল্লার শুরুটাও হয়েছিল বিভীষিকার মধ্য দিয়ে। প্রথমে ফাখার জামানকে ‘বুড়ো হাড়ের ভেলকি’ দেখালেন তার দেশীয় সামি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আলো ছড়ানো ফাখার স্টাম্পে বল ডেকে এনে শুরুতেই হারিয়ে গেলেন আঁধারে। এরপর মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউ ইমরুল, সেবার অবশ্য কিছুটা আঁধারে ছিলেন আম্পায়ার। বলটা যেতো লেগস্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। 

    তার আগে রাজশাহীর শেষটা হয়েছিল দারুণ। মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন বলেছিলেন, ডেভিড মিলারের দেওয়া সেই দুঃস্বপ্ন ভুলে গেছেন তিনি। ড্যারেন স্যামি আজ আবার মনে করিয়ে দিলেন তাকে! তার শেষ ওভারে রাজশাহী অধিনায়ক নিলেন ৩২ রান! চারটা ছয়ের সঙ্গে একটা চার, বিপিএলের ইতিহাস সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার এটিই! স্যামির ১৪ বলে ৪৭ রানের ঝড়ে রাজশাহী তুলেছে ১৮৫ রান। 

    ২২ বল বাকি থাকতে নেমেছিলেন স্যামি। খেলার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, শরীরটা ফিট হয়নি পুরোপুরি। সেই ২২ বলে তবুও এলো ৬২ রান! 

    চোট কাটিয়ে এদিন রাজশাহী দলে এসেছেন মুস্তাফিজ, সঙ্গে লুক রাইট। ওপেনিং জুটির পর দলকে টেনেছিলেন রাইটই, ৩৬ বলে ৪২ করে ক্যাচ দিয়েছেন হাসান আলিকে, ‘অভাগা’ সাইফুদ্দীনের বলেই। ৪৩ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙ্গেছিল ডোয়াইন স্মিথের ভাবলেশহীন শটে, ফুটওয়ার্ক নেই, বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। মুমিনুল ফিরলেন খানিক বাদেই, রাইটের সংগে রানটা প্রাপ্যই ছিল, তবুও হলেন রান-আউট। 

    জাকির, মুশফিক বা ফ্র্যাঙ্কলিন, শুরু করেও ধরে রাখতে পারলেন না কেউই। এক স্যামি ছাড়া। পুরো বিপিএলের ঝলক যেন দেখিয়ে দিলেন এক ইনিংসেই! 

    শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিল সেটাই!