• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    রংপুরকে জিতিয়েই ঢাকার শেষ দেখে ছাড়লেন গেইল

    রংপুরকে জিতিয়েই ঢাকার শেষ দেখে ছাড়লেন গেইল    

    ফাইনাল, বিপিএল

    রংপুর রাইডার্স ২০ ওভারে ২০৬/১ (গেইল ১৪৬*, ম্যাককালাম ৫১*; সাকিব ১/২৬)

    ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ ওভারে ১৪৯/৯ (জহুরুল ৫০; উদানা ২/১৯, গাজী ২/৩২)  

    ফলঃ রংপুর ৫৭ রানে জয়ী


    সাকিব আল হাসান কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন?

    ক্রিস গেইলের রান তখন ২২, ষষ্ঠ ওভারে বল করতে এলেন মোসাদ্দেক হোসেন। কাভারে সাকিবের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন গেইল, কিন্তু ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক হাতে নিয়েও ফেলে দিলেন। আদতে তার হাত থেকে পড়ে গেল বিপিএলের শিরোপাটাই! কারণ, এরপর যা হলো, অনেক দিন মনে রাখবে মিরপুর, সাকিব বোধ হয় মনে রাখবেন তার চেয়েও বেশি দিন।  ঝড় বললে আসলে কম বলা হয়, গেইলের এই ইনিংসকে তো আসলে প্রলয়ই বলা উচিত। গেইল ছিলেন শেষ পর্যন্ত, বা বলা উচিত শেষ দেখে ছাড়লেন ঢাকার। নিজে করলেন ১৪৬, দল করল ২০৬। সেই পাহাড় টপকাতে গিয়ে অল্পতেই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেল ঢাকার, শেষটা হলো একতরফাই। বিপিএলের ফাইনালে মাশরাফি হারেন না, তা প্রমাণ হলো আরও একবার। আর রংপুর পেল বিপিএলে নিজেদের প্রথম শিরোপা।

     

     

    ১৪৬ রানে অপরাজিত থেকে যখন গেইল মাঠে ছেড়েছেন, 'টি-টোয়েন্টির ব্র্যাডম্যান' তখন ওলটপালট করে ফেলছেন রেকর্ডবুক। ১৮টি ছক্কায় টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন। বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংস, ফাইনালে প্রথম সেঞ্চুরি, কোনো টি-টোয়েন্টি ফাইনালে সর্বোচ্চ ইনিংস, ফাইনালে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি, ১১ হাজার রান... রেকর্ড যেন শেষ হওয়ার নয়। রংপুরের ইনিংস এতোটাই গেইলময় ছিল, সাকিবের শেষ ওভারে ম্যাককালাম গেইলকে স্ট্রাইকে রাখার জন্য নিজেই সিঙ্গেল নেননি। ওই ওভারেই তিন ছয় মেরেছেন গেইল, ম্যাককালামের চেয়ে বেশি কেউ তাতে বোধ হয় খুশি হননি !

    তবে আর যাই হোক, ইনিংসটা ঠিক ‘গেইলীয়’ ছিল না। শুরুতে এমনিতে খুব একটা তাড়াহুড়ো করেন না, কিন্তু আজ যেন আরও বেশি সতর্ক। সাকিব, নারাইনের শুরুর দিকের ওভারগুলো একদম দেখেশুনে খেলেছেন, অপ্রয়োজনীয় কোনো ঝুঁকিই নেননি। প্রথম পাঁচ ওভারে গেইলের কোনো ছয়ই নেই, রংপুরের রান তখন ২২। চার্লস আউট হয়ে গেছেন আগেই, সাকিবের দ্বিতীয় ওভারে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। তবে ম্যাককালাম আর গেইল যেন পণ করে রেখেছিলেন আজ তাঁরা কোনো ঝুঁকিই নেবেন না।

    গেইল তাই বুঝেশুনেই প্রথম ‘টার্গেট’ করেছেন ষষ্ঠ ওভারে এসে, পার্টটাইম বোলার মোসাদ্দেক হোসেনকে। ওই ওভারে গেইল দুই ছয়ে পৌঁছে গেছেন ২৯ রানে, ম্যাককালামও মেরেছেন প্রথম ছয়। কিন্তু  ওই ওভারেই আউট হতে পারতেন গেইল, যে ক্যাচটা ফেলে দিয়েছেন সাকিব। ঢাকা এরপর গেইলকে আউট করার আর কোনো সুযোগই পায়নি।

    কিন্তু আগে এমন অনেকবার ঝড় শুরুর পরেও গেইল ফিরে গেছেন উইকেটটা উপহার দিয়ে। কিন্তু আজ প্রতিটা বল খেলেছেন শ্যেন দৃষ্টিতে, প্রথম ১০ ওভারে রংপুরের রান হয়েছে ৬৩। ম্যাককালামের ব্যাটে-বলে ঠিক হচ্ছিল না, গেইলকে সুযোগ পেলেই দিচ্ছিলেন স্ট্রাইক। তবে প্রলয় যাকে বলে, সেটা গেইল শুরু করেছেন ১১তম ওভারে এসে।

    খালেদ আহমেদের ওই ওভারেই দুই ছয় আর এক চারে গেইল পৌঁছে গেছেন ফিফটিতে, সেজন্য খেলতে হয়েছে ৩৩ বল। পরের চার ওভারেও গেইল দেখেশুনেই খেললেন, আফ্রিদির শেষ ওভারে মারলেন দুই ছয়। ১৪ ওভার শেষে রংপুরের রান ১১২, গেইলের তখন হয়ে গেছে ৭৮। আবু হায়দারের পরের ওভারেই আরও দুই ছয়, পৌঁছে গেলেন নব্বইয়ে। নারাইনের ১৭তম ওভারে পৌঁছলেন ২০তম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিতে, ৫৭ বলে। নিশ্চিতভাবেই টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সবচেয়ে স্লথতম সেঞ্চুরিগুলোর একটি। তবে তখনও বাকি ছিল অনেক কিছুর।

    ১৭ ওভার শেষে রংপুরের রান ১৪২, ২০০ তখন অনেক দূরের পথ। কিন্তু গেইল যখন শেষ পর্যন্ত থাকবেন ঠিক করেছেন, তখন তো অনেক কিছুই বদলে যায়। ১৮তম ওভারে পোলার্ডকে মারলেন তিন ছয়, পরের ওভারে খালেদকে আরও দুইটি। অন্যদিকে ম্যাককালাম অনেকটা নিভৃতেই পৌঁছে গেছেন ফিফটিতে, শেষ ওভারে তো আক্ষরিক অর্থেই হয়ে গেলেন দর্শক। সাকিব দারুণ দুই ওভার করার পরেও কেন মাঝে আর বল নিলেন না, সেটা বিস্ময় হতে পারে। তবে তার চেয়েও বড় বিস্ময় শেষ ওভারে এসে অমনভাবে মার খাওয়া। গেইল আরও তিন ছয় মারলেন, রেকর্ডবুকে আরও কিছু যোগ হলো নতুন করে। শেষ পর্যন্ত যে রান হলো, এই উইকেটে তা হওয়া উচিত ছিল যথেষ্টরও বেশি।

    সেই রান তাড়া করার মতো ব্যাটিং যে ঢাকার ছিল না, তা নয়। কিন্তু সেজন্য দরকার ছিল এভিন লুইসের কাছ থেকে দারুণ একটা শুরুর। এই টুর্নামেন্টে লুইস আলো ছড়িয়েছেন ভালোই, কিন্তু আজ দরকারের সময়ই সেটা পারলেন না। তার আগেই অবশ্য প্রথম দুই ওভারে মেহেদী মারুফ ও জো ডেনলি আউট হয়ে গেছেন। কিন্তু চতুর্থ ওভারেই সোহাগ গাজীকে মারতে গিয়ে লুইস তুলে দিলেন ক্যাচ। ৯ বলে ১৫ রানে শেষ লুইসের, ঢাকার আশাও বড় একটা ধাক্কা খেল।

    এরপরও সাকিব ছিলেন, পোলার্ড-আফ্রিদি-নারাইন ছিলেন। কিন্তু এমন স্পিনিং ট্র্যাকে পাহাড় টপকানোর জন্য যা দরকার ছিল, সেটা করতে পারলেন না কেউই। ঢাকার ইনিংস নিয়ে তাই যত কম বলা যায় ততই ভালো। সাকিব ১৬ বলে ২৬ রান করে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ওই পর্যন্তই সার। ৫ রান করে আউট পোলার্ড, ৮ রান করে ফিরে গেছেন আফ্রিদি। জহুরুলের ৫০ রানের ইনিংসটা সান্ত্বনা ছাড়া শেষ পর্যন্ত আর কিছু দিতে পারেনি। প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে ঢাকার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। মাশরাফি আর বিপিএল যে 'মেড ফর ইচ আদার', সেটাও যেন আরও একবার স্বতঃসিদ্ধ বলে প্রমাণিত।