বিপিএলের সেরা একাদশ
বিপিএলের আরেকটি আসর শেষ, আরেকবার শিরোপা মাশরাফির হাতে। মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স আছে বেশ কয়েকটি। আছেন তাই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখানো ক্রিকেটারও। পেছন ফিরে তাকালে যাদের নাম আসবে সবার আগে, তাদেরকে নিয়েই প্যাভিলিয়নের সেরা একাদশ....
এভিন লুইস (ঢাকা ডায়নামাইটস)
ফাইনালটা তার কাছে হয়ে থেকেছে হতাশার নাম। রংপুরও মূলত ম্যাচ জিতেছে তার উইকেট পাওয়ার পরই। এটাই বুঝিয়ে দেয়, ঢাকাকে ঝড়ো শুরু এনে দিতে কতখানি ভরসার নাম ছিলেন ক্যারিবীয় ওপেনার। ৩৬ গড় আর ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুইয়ে আছেন লুইস। আর আছেন এ একাদশের ওপেনিংয়ে।
ক্রিস গেইল (রংপুর রাইডার্স)
এলিমিনেটরটা বলতে গেলে রংপুরকে একাই পার করেছেন। ফাইনালের কথা নাহয় বাদই দেওয়া হলো। রংপুরের স্কোয়াডে যোগ দিয়েছেন পরে, তবে তাতেই যেন পালটে গেছে তাদের চেহারা। এই বিপিএলে সর্বোচ্চ রান তার, ফাইনাল বাদ দিয়েও ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনবার। স্ট্রাইক রেটও আঁতকে ওঠার মতো- ১৭৬! আর সব গেইল-রেকর্ড? দেখে নিতে পারেন, মেশিন হিসেবে, বা দেখে নিতে পারেন দৈত্য হিসেবে।
লুক রঙ্কি (চিটাগং ভাইকিংস)
একসময় চিটাগংয়ের নেতৃত্বের ভারও এসে পড়েছিল তার ওপর। পয়েন্ট টেবিলে তবুও তার দল থেকেছে তলানীতেই। তবে রঙ্কি বলতে গেলে চেষ্টা করে গিয়েছিলেন একা হাতেই। ১৬৯ স্ট্রাইক রেটে ৩২১ রান করেছেন, ভাইকিংসদের ভাল শুরু এনে দিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি ম্যাচে। রঙ্কি অবশ্য পারফরম্যান্স আর দলের ওপর প্রভাবে এই একাদশে ঠিকই থাকবেন।
মোহাম্মদ মিঠুন (রংপুর রাইডার্স)
জহুরুল ইসলাম বা লিটন দাস- দেশীয় উইকেটকিপারের মাঝে মিঠুনের প্রতিযোগি তারাই। তবে লিটন ছিলেন অধারাবাহিক, জহুরুলও তাই। ডিসমিসালে সবার আগে ১২টি নিয়ে জহুরুল, লিটনের সমান ১০টি নিয়ে দুইয়ে মিঠুন। তবে তার আছে ৩২৯ রান। সব মিলিয়ে প্যাভিলিয়নের একাদশেও উইকেটকিপার হিসেবে তিনিই।
সাকিব আল হাসান (ঢাকা ডায়নামাইটস)
টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট, ২২টি। ইকোনমি ৬.৪৯। সাকিব শুধু বোলার হিসেবেই সেরা একাদশে জায়গা পান। কিন্তু তিনি সাকিব বলেই, নামের পাশে ২১১ রানও আছে, ১২৩ স্ট্রাইক রেটে। ধারাবাহিকতার আরেক নাম তিনি, বিপিএলের এই একাদশেও তাই অপরিহার্য এক নাম।
রবি বোপারা (রংপুর রাইডার্স)
রংপুরে মাশরাফির এক ভরসার নাম যেন ছিলেন তিনি। হারার আগ পর্যন্তও ব্যাটিংয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বেশ কয়েকবার, জেতা ম্যাচ তো বাদই থাকলো। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু। ৩৬৫ রানের সঙ্গে আছে ৮টি উইকেটও। বিপিএলে শুধু সেরা ইংলিশ পারফর্মার নন, সেরা একাদশেও তার জন্য বরাদ্দ থাকে একটি জায়গা।
আরিফুল হক (খুলনা টাইটানস)
রাজশাহীর সঙ্গে বলতে গেলে খুলনাকে জিতিয়েছিলেন অসম্ভব এক ম্যাচ। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই পারফর্ম করছেন, এবার বিপিএল দিয়ে ‘পাওয়ার-হিটিং’য়ে নিজের জাত সবার কাছেই মেলে ধরেছেন বেশ ভালভাবেই। লোয়ার অর্ডারে খেলেছেন, জেতা ম্যাচগুলোতে গড় ২৮, স্ট্রাইক রেট ১৩৮। প্রভাববিস্তারী এমন লোয়ার অর্ডারকে তো একাদশে রাখতেই হয়!
মাশরাফি বিন মুর্তজা (রংপুর রাইডার্স)
১৫ উইকেট। ৬.৭৪ ইকোনমি রেট। হঠাৎ তিনে উঠে এসে ১৭ বলে ৪২ রানের একটা ইনিংসও আছে। যথেষ্ট নয় এখনও? ক্যাচগুলো? গ্রাউন্ড ফিল্ডিং? শুধু পারফরমার না তিনি, আছে অধিনায়কত্বর কারিশমাও। বিপিএলের সমার্থক হয়ে গেছেন প্রায়। রংপুরকে প্রথম শিরোপা এনে দেওয়া অধিনায়ক এই একাদশের অধিনায়ক হবেন না তো কে হবেন?
হাসান আলি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস)
খেলেছেন মোটে ৯টি ম্যাচ। উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তবুও আছেন তিনে। দ্বিতীয় কোয়ালাইফাইয়ারে কুমিল্লার বোলারদের ওপরে যে ঝড় বয়ে গেল, সেখানেও তিনি দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৫.৭৫ করে রান! ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রানের লাগাম টেনে ধরেছেন, এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রুও। সব মিলিয়ে তাকে আনা হয়েছে বিপিএলের সেরা একাদশেও।
আবু জায়েদ (খুলনা টাইটানস)
প্রথম ম্যাচে দুই উইকেট পেলেও পরের ম্যাচে ৪০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশুন্য। সেটার কারণ জানতে চাওয়া হলে জায়েদ হাসতে হাসতে বললেন, ‘ঘরের একটু চাপ তো ছিলই। তার উপর টিকেটের জন্য অনেক বেশি চাপ ছিল। আউট অব ক্রিকেট ছিলাম। হয়তো বা এ জন্য।’ অদ্ভুত এক কারণ শুনিয়ে হাসির রোল তুলেছিলেন খুলনার পেসার। তবে বিপিএলে পারফরম্যান্স করে গেছেন নিয়মিত, সব মিলিয়ে উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তিনি দুইয়ে, পেসারদের মধ্যে সবার আগে।
মেহেদি হাসান (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস)
নিজের প্রথম ম্যাচেই ম্যাচসেরা। পরে হয়েছেন আরও একবার। কুমিল্লার বোলিংয়ে একপ্রান্ত থেকে ওপেন করেছেন এই অফস্পিনারই। এনে দিয়েছেন শুরুর ব্রেকথ্রু। কোয়ালাইফাইয়ারেও গেইলকে ফিরিয়েছিলেন, তবে চার্লসের চাপ নিতে পারেনি কুমিল্লা। এই একাদশে অবশ্য সাকিবের সঙ্গে অফস্পিনার হিসেবে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন মেহেদি।