কেপটাউনে ১৩ উইকেটের রোমাঞ্চ
১ম টেস্ট, কেপটাউন
টস- দক্ষিণ আফ্রিকা (ব্যাটিং)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ২৮৬ (ডি ভিলিয়ার্স ৬৫, ডু প্লেসি ৬২, ভুবনেশ্বর ৪/৮৭, আশ্বিন ২/২১)
ভারত ১ম ইনিংস ২৮/৩* (পুজারা ৫*, ধাওয়ান ১৬, মরকেল ১/০)
ফাফ ডু প্লেসি টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন। বিরাট কোহলিও টসে জিতলে নিতেন বোলিং-ই। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর অল-আউট ২৮৬ রানে। দিনশেষে ভারত তুলেছে ২৮ রান, ৩ উইকেটে। কেপটাউনে টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চে ঠাসা দিন দেখেছে ১৩ উইকেট।
দুই দলেই চার পেসারসহ পাঁচ বোলার। আজিঙ্কা রাহানের জায়গা হয়নি ভারতীয় দলে, সেটা যদি নাটকীয় হয়ে থাকে, এর চেয়েও বড় কিছু দিয়েছেন শুরুতে ভুবনেশ্বর কুমার। ডিন এলগার, এইডেন মার্করাম, হাশিম আমলা- ভুবনেশ্বরের সুইং সামলাতে পারেননি কেউই। এলগার বেরিয়ে যাওয়া বলে আর আমলা শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে ঋদ্ধিমান সাহাকে দিয়েছেন ক্যাচ, মার্করাম ইনসুইংয়ে এলবিডাব্লিউ। টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে ভারত এর চেয়ে ভাল শুরু আর কিইবা চাইতে পারতো!
রংবদল এরপরই। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ইনসাইড-এজগুলো ঠিক ফল আনলো না ভারতের জন্য, তিনি শুরু করলেন প্রতি-আক্রমণ। সঙ্গে ডু প্লেসি। দুইজনই করলেন ফিফটি, তবে লাঞ্চের পরপরই জাসপ্রিত বুমরাহর প্রথম টেস্ট উইকেট বনে গেলেন ডি ভিলিয়ার্স। ফুললেংথের বলটা অতি আত্মবিশ্বাসি হয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। দুজনের জুটি ১১৪ রানের। ডু প্লেসিও থাকেননি বেশিক্ষণ, হারদিক পান্ডিয়ার গুডলেংথে কাট করতে গিয়ে সাহার গ্লাভসকে আরেকবার ব্যস্ত করেছেন তিনি। এর দুইবল আগেই তার বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিল ভারত, উইকেট হিটিংয়ে ছিল আম্পায়ারস কল। তারও আগে আরেকটা রিভিউ আটকে গিয়েছিল প্রথম ধাপেই, বুমরাহ করেছিলেন নো বল।
ডি কক-ফিল্যান্ডার ৬ষ্ঠ উইকেটে যোগ করেছেন ৬০ রান। ডি কক ভুবনেশ্বরের রঙিন দিনে আরেকটু রঙ যোগ করেছেন। ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ধোঁকা খেয়ে সামনের পায়ে এসেছিলেন, সেটাই ব্যাট ছুঁয়ে গেছে সাহার কাছে। ফিল্যান্ডার শিকার মোহাম্মদ শামির, ফুললেংথের ইনসুইংয়ে হয়েছেন বোল্ড। এরপর কেশভ মহারাজ-কাগিসো রাবার ৮ম উইকেট জুটিতে এসেছে ৩৭। মহারাজ ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছেন রান-আউট, এর আগেও এই ভুলটা হয়েছিল তার। রাবাদা আর মরনি মরকেল ভারতের একমাত্র স্পিনার রবি আশ্বিনের ভাগে গেছেন- রাবাদা কাট করতে গিয়ে আউটসাইড-এজ, আরেকবার ক্যাচ সাহার কাছে, মরকেল আর্ম বলে এলবিডাব্লিউ।
সকালে বোলারদের যে সুযোগটা ডু প্লেসি দেননি, সে সুযোগটা এলো পড়ন্ত বেলায়। ফিল্যান্ডার-স্টেইন-মরকেল-রাবাদা এই প্রথম খেলছেন একসঙ্গে, তারা যেন অপেক্ষায় ছিলেন ভারতকে আগুন ফিরিয়ে দেওয়ার। তবে সুইংয়ের চেয়ে তাদের বেশি কাজে দিল পেস আর বাউন্স। কাভারে ফিল্যান্ডারকে ড্রাইভ করতে গিয়ে এলগারকে ক্যাচ দিয়ে শুরুটা করলেন মুরালি বিজয়।
শিখর ধাওয়ান শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে খাড়া ওপরে তুললেন বল, ক্যাচটা নিজে নিয়েই প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে প্রথম উইকেটের স্বাদ পেলেন স্টেইন। এরপর এলেন মরকেল, প্রথম ওভারেই নিলেন ভারতীয় ইনিংসের মহামূল্যবান কোহলির উইকেটটা। ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাটে যেন ফিরে এল পুরোনো ভূত, অফস্টাম্পের বাইরের বলে দিলেন খোঁচা। চতুর্থ বা পঞ্চম স্টাম্প লাইনের এমন বলে এভাবেই আউট হয়ে কোহলি যেন জানিয়ে দিলেন, দেশের বাইরে এমন কন্ডিশনে এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
ভারতের বিদেশের ‘রাজা’ রাহানে তো আগেই বাদ, এরপর আশা হয়ে রইলেন পুজারা, সঙ্গী রাহানের জায়গায় দলে থাকা রোহিত শর্মা। তবে দ্বিতীয় দিনের সকালে নিশ্চয়ই আরেকবার নিউল্যান্ডসের পিচ থেকে ফায়দা তুলতে চাইবেন আফ্রিকান পেসাররা, যে সুযোগটা প্রথম দিনের সকালে পাননি তারা! সে সুযোগ ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তাদের কতোখানি দেবেন বা দেবেন না, তার ওপরই নির্ভর করছে দ্বিতীয় দিনের রোমাঞ্চের খতিয়ান।