'চাপ ক্রিকেটারদেরই নিতে হয়'
ড্রেসিংরুমের বাইরে দেখা হয়ে গেল দুইজনের। মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। করমর্দন হলো, কথা হলো। হাসতেও দেখা গেল দুইজনকে। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। কদিন আগেও সব পরিকল্পনা মাশরাফির সঙ্গেই হতো হাথুরুসিংহের, এখন শুধুই কুশল বিনিময়।
কোচ আসে, কোচ যায়। ক্রিকেট দলে এ আর নতুন কী! হাথুরুসিংহে যেমন চলে গেছেন। নতুন কোচ আসেননি, তবে শুধু ‘প্রধান কোচ’ এর তকমা গায়ে কোনো সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া কোচিং প্যানেল বেশ সুদৃঢ়ই বাংলাদেশের। হাথুরুসিংহে তবুও চলে গিয়েও যেন যাননি। তাকে ঘিরে প্রশ্ন এখনও হয়, তার চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগেও যেমন হলো। বরাবরের মতোই মাশরাফির উত্তর হলো সোজা-সাপটা, যুক্তিযুক্ত।
‘দেখেন বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে যারা খেলোয়াড় আছে তারা অনেক বড় মানসিকতা নিয়ে ঘোরে। ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে আমি হাথুরুসিংহেকে স্যালুট জানাই। অবশ্যই তার অধীনে খেলে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। অবশ্যই কৃতিত্ব তাকে দিতে আমাদের বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই। আমরা এমন না যে তাকে কৃতিত্ব দিতে চাই না।’
মাশরাফি কৃতিত্ব দিতে পিছপা হননা। তবে, ‘আবার আমাদের তামিমের রেকর্ড, মুশফিকের রেকর্ড শেষ বছরে যদি দেখেন। সাকিবের ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ অংশ যদি দেখেন। বা মুস্তাফিজ। এগুলো যদি আলাদা আলাদা করে দেখেন….কোচ তাদেরকে বিশেষ কিছু করে দেয়নি। তাদের নিজেদের এটা করে নিতে হয়েছে।’
এবং এর চেয়েও বড় কথা, ‘সবচেয়ে বড় চাপটা তাদের নিতে হয়েছে। এবং তারা করে নিয়েছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন একশ মারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তখন আমার কাছে মনে হয়নি কেউ ওখানে গিয়ে তাদেরকে আলাদা করে ধরে খেলিয়ে দিয়ে আসছে। সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছে। এবং পারফরম্যান্স করেছে। এটাই…আমি যেটা মনে করি যেই কোচ থাকুক তাকে শতভাগ আমরা সমর্থন করেছি খেলোয়াড়রা। আমাদের বলতে সেটা দ্বিধা নেই। আবার কৃতিত্ব ছেলেদের দিতে হবে যেভাবে তারা খেলেছে…আমার বিশ্বাস এখন যারা কোচিং স্টাফ আছেন... (রিচার্ড) হ্যালসল, (খালেদ মাহমুদ) সুজন চাচা আছেন, আমরা ওনাদেরও শতভাগ সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করবো। এবং উনারাও আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই করবেন। অবশ্যই পেশাদারিত্ব দেখিয়ে সবকিছু চলবে। এবং চলছে। হাথুরুর জন্য শুভকামনা। আমরা আমাদেরটা নিয়ে বেশি চিন্তা করছি।’
শুধু হাথুরুসিংহে না, জিম্বাবুয়ের কোচ হিথ স্ট্রিকও কাজ করেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে। ছিলেন বোলিং কোচ। সেসব কিছু নিয়েও চিন্তা নেই মাশরাফির, ‘আমাদের পুরো দল সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকতে পারে। হিথ স্ট্রিক প্রায় দেড়-দুই বছর হলো বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে, হাথুরুসিংহে সম্প্রতি। তার বিশ্লেষণ কিছুটা হলেও কাছাকাছি হতে পারে। সে আমাদের শেষ সিরিজেও ছিল। ওদের চিন্তা ভাবনা যে পরিকল্পনা করতে পারে সেটা আমাদেরও সবাই জানে। আমাদেরকেও ওভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনার কমপক্ষে ৭০-৮০ ভাগ মাঠে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে আশা করি সমস্যা হবে না। আমাদের নজর এখন সেখানেই।’
আর সেই পরিকল্পনা নিয়ে মাশরাফি জানিয়েছেন, ‘দেখেন আমরা যে পরিকল্পনা করছি না সেটা কিন্তু না। ক্রিকেটে “স্মার্ট” হওয়া ভালো কিন্তু “ওভার-স্মার্ট” হওয়া ভালো না। আমরা “ওভার-স্মার্ট” হতে চাচ্ছি না। অবশ্যই হাথুরুসিংহে একটা পরিকল্পনা করবে। আমাদেরও থাকবে। বাস্তবায়ন যদি করতে পারি…আমরা অবশ্যই নতুন কিছু করার চেষ্টা করব। ঝুঁকি থাকলেও থাকলেও আমরা সেরকমই কিছু কাজ করবো। আমি মনে করি, পূর্ণ সহযোগীতা আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের করব। এবং তাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। তারা যেটা করে আসছে সেটাই যেন করে। আমরা কোনো চিন্তা না করে সেটাই করবো।’
সেই স্বাধীনতা, পরিকল্পনা- সবকিছুর সমন্বয়ে ড্রেসিং রুম বেশ নির্ভার এখন। তবে সবাই খুব বেশি ‘রিল্যাক্স’ থাকুক, মাশরাফি এটাও চান না। মূল লক্ষ্যটাই শুধু ঠিক রাখতে চাইছেন তিনি। সেখানে কোচ হিসেবে কে থাকলেন, না থাকলেন- সেটা যেখানে একেবারেই গৌণ বিষয়!