• ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    সাকিব-তামিমে চুরমার জিম্বাবুয়ে

    সাকিব-তামিমে চুরমার জিম্বাবুয়ে    

    জিম্বাবুয়ে ১৭০, ৪৯ ওভার (রাজা ৫২, মুর ৩৩, সাকিব ৩/৩৩, মুস্তাফিজ ২/২৯) 
    বাংলাদেশ ১৭১/২, ২৮.৩ ওভার (তামিম ৮৪*, সাকিব ৩৭, রাজা ২/৫৩) 
    ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী  



    কুয়াশা, শিশির- যাই বলুন না কেন, ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রভাব ফেলবে- এমন আশঙ্কাতে সময় এগিয়ে আনা হয়েছিল, টসের গুরুত্বও বেড়ে গিয়েছিল বেশ। তবে শিশির জেঁকে বসার আগেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচটা শেষ করে ফেললো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলো ১২৯ বল বাকি থাকতেই। বল বাকি থাকার হিসেবে বাংলাদেশের এটি ৮ম বৃহত্তম জয়। 

    দুইদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে গ্রায়েম ক্রেমার স্বীকার করেছিলেন, বাংলাদেশ সফর করার জন্য সবসময়ই কঠিন জায়গা তাদের কাছে। মিরপুরের উইকেট আজ জিম্বাবুইয়ানদের জন্য হয়ে উঠলো কঠিনতর। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৭০ রানে, এরপর ওভারথ্রো, মিসফিল্ড, আর নো-বলের পসরা সাজিয়ে ম্যাচটাকে শুধু হাতছাড়াই করলো নিজেরা। অবশ্য বাংলাদেশ সে অর্থে জিম্বাবুয়েকে সুযোগই দেয়নি তেমন!  

    ১৭১ রানের লক্ষ্য, তামিমের নতুন ওপেনিং সঙ্গী এনামুল।। স্ট্রেইট ড্রাইভের পর ফ্লিকে চার। এনামুল চার মারলেন আরও দুইটি, তবে টিকলেন না বেশিক্ষণ, প্রত্যাবর্তনের দিনে সিকান্দার রাজাকে স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন ১৪ বলে ১৯ রান করে। আগেই ঠিক হয়ে ছিল, তিনে খেলবেন সাকিব। 

    তামিম সাকিবের জুটি ৭৮ রানের, মাঝের ওভারগুলোতেও ডিপে দুইজন ফিল্ডার রেখে বড় শটের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন ক্রেমার। সাকিব শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ৩৭ রানে, রাজার বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট সিরিজে রিভিউ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক, তবে সাকিবের বিপক্ষে রিভিউটি নিলেন ঠিকঠাক। রাজা পেলেন দ্বিতীয় উইকেট। এর আগে অবশ্য রিভিউ নিয়েই বেঁচেছিলেন তামিম। 

    রাজার এক ওভারে দুই চারের পর সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি করলেন, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৯৩ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৮৪ রানে। মুশফিক রানের কলাম পূর্ণ করলেন ছয় মেরে, জয়ের রানটাও এসেছে তার ব্যাট থেকেই।

    ব্যাটিংয়ের আগে কিপিংয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলেন মুশফিক।  

    ধীরগতির উইকেট, বল ‘গ্রিপ’ করছিল ভাল। দুইদিক থেকেই স্পিনারকে দিয়ে শুরু করালেন মাশরাফি, সাকিব প্রথম ওভারেই পেলেন দুই উইকেট, প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে। প্রথম দুই বলই ওয়াইড, এর মধ্যে দ্বিতীয়টায় ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে স্টাম্পড সলোমন মিরে। শূন্য বলে শূন্য রানে স্টাম্পড হওয়া তৃতীয় ব্যাটসম্যান মিরে, প্রথম ওপেনার। এক বল বাদে মিডউইকেটে সাব্বির রহমানকে ক্যাচিং অনুশীলন করালেন ক্রেইগ এরভিন। টসে জিতে বোলিং নেওয়া মাশরাফি এর চেয়ে বেশি খুশি আর কিভাবেই বা হতে পারতেন! 

    এক সিকান্দার রাজা ছাড়া জিম্বাবুয়ের সবার কাছেই মিরপুরের উইকেট হয়ে উঠেছিল তীব্র শীতে পাতলা জামা গায়ে টেকার লড়াইয়ের ক্ষেত্রের মতো। 

    আয়েসি ভঙ্গিমায় জোরের ওপর খেলতে গিয়ে মুশফিককে ক্যাচ দিয়েছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, মাশরাফির প্রথম সাফল্য। পিচে যখন বল গ্রিপ করে, তখন সবচেয়ে খুশি হন বোধহয় মুস্তাফিজুর রহমান। আজ তার খুশির দিন ছিল। থিতু হওয়ার চেষ্টারত ব্রেন্ডন টেইলর অফস্টাম্পের বাইরের লাইনে ধুঁকছিলেন, শেষ পর্যন্ত মুশফিককে ক্যাচ দিয়েছেন তিনিও। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ২৪ রানের বেশি করা হয়নি তার। 

    ২ ওভারের পর সানজামুলকে সরিয়ে নিয়েছিলেন মাশরাফি, এরপর দ্বিতীয় স্পেলে এসে করেছেন টানা ৮ ওভার। এ স্পেলেই পেয়েছেন ম্যালকম ওয়ালারের উইকেট। বেশি কাছের বল কাট করতে গিয়ে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। ইনিংসজুড়েই ভাল ফিল্ডিং করে যাওয়া বাংলাদেশকে এবার সাফল্য এনে দিয়েছেন সাব্বির। অবশ্য গোটা ইনিংসে কালিমার মতো লেগে আছে শুধু একটি ফেলে দেওয়া সুযোগ, দলীয় ৫৮ রানে স্লিপে ওয়ালারের ক্যাচ ফেলেছিলেন নাসির। 

    এরপর ১৩ ওভার জিম্বাবুয়ের জন্য একটু স্বস্তির, পিটার মুরের সঙ্গে রাজার ৫০ রানের জুটি, রাজা নিজে ছুঁয়েছেন ৫০। তবে তার শেষটা হয়েছে ভুল বুঝাবুঝিতে। ফাইন লেগে খেলে রান নিতে গিয়েছিলেন, সাকিবের থ্রো জমিয়ে স্টাম্প ভেঙ্গেছেন মুশফিক, রাজা ডাইভ দিয়েও বাঁচতে পারেননি। 

    আর মুর আউট হয়েছেন রুবেলের ইয়র্কারে, ৪৮তম ওভারে গিয়ে। এ উইকেট দিয়েই ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট পূরণ করেছেন এই পেসার। পরের ডেলিভারিতে টেনডাই চাতারা বল ডেকে এনেছেন স্টাম্পে। রুবেলের জোড়া সাফল্যের আগে নিজের তৃতীয় সাফল্য পেয়েছেন সাকিব, সেখানেও আছেন রুবেল, লন-অফে সামনে ঝুঁকে নিয়েছেন দারুণ ক্যাচ। 

    শেষটা করেছেন মুস্তাফিজ। তার লেগকাটারের জবাব দিতে পারেননি ব্লেসিং মুজারাবানি।

    পরে যেমন তামিমের ব্যাটিংয়েরও জবাব দিতে পারলো না জিম্বাবুয়ে।