রেকর্ড গড়েই ফাইনালে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ৩২০/৭, ৫০ ওভার (তামিম ৮৪, সাকিব ৬৭, মুশফিক ৬৪, পেরেরা ৩/৬০, প্রদীপ ২/৬৬)
শ্রীলঙ্কা ১৫৭, ৩২.২ ওভার (পেরেরা ২৯, থারাঙ্গা ২৫, সাকিব ৩/৪৭, রুবেল ২/২০, মাশরাফি ২/৩০)
ফল- বাংলাদেশ ১৬৩ রানে জয়ী
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচটা যদি লিটমাস টেস্ট হিসেবে ধরা হয়, তাহলে বাংলাদেশ তাতে উৎরে গেছে আগেই। প্রথম ম্যাচে যে জিম্বাবুয়েকে পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ, তারাই এর আগের ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। এবার সেই শ্রীলঙ্কাকে পেয়ে নিজেদের ইতিহাস গড়ে ফেললো বাংলাদেশ, ১৬৩ রানের জয়টিই রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। ২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জয়ের ব্যবধান ছিল ১৬০ রানের। তিন ফিফটিতে ৩২০ রান করা বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে অল-আউট করেছে ১৫৭ রানেই। ফিফটির পর ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। এ জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ।
৩২১ রানের লক্ষ্য, প্রথম ২ ওভারে ২ রানের চাপ আলগা করতে বোলিং ওপেনিংয়ে আসা নাসিরকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে চাইলেন, শুধু স্টাম্পই পড়তে দেখলেন পেরেরা। ভেতরের দিকে ঢোকা বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড, আগের ম্যাচে ৮০ রানের ইনিংসের পর এ ইনিংসে করলেন ১। থারাঙ্গা ভুগলেন প্রথমে নাসিরের স্পিনে, পরে মাশরাফির অফস্টাম্প করিডোরে। আম্পায়ারের এলবিডাব্লিউয়ের সিদ্ধান্তে বাঁচলেন রিভিউ নিয়ে, বল লেগস্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ায়। এই রিভিউয়ে অন্তত ভাল একটা দিন কাটিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
প্রথমে নাসিরের বলে একটির পর মাশরাফির বলে দুইটি চারে টাইমিং ছিল ঠিকঠাক, তবে মাশরাফিকে তুলে মারতে গিয়ে সেটা হয়ে গেল গড়বড়। অ্যাঙ্গেল বদলিয়ে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসেছিলেন মাশরাফি, থারাঙ্গা ধরা পড়লেন মিড-অফে মাহমুদউল্লাহর হাতে। অফস্টাম্পের বাইরের করিডোড়ে ধুঁকছিলেন, বারকয়েক নীচু হওয়া বলেও নাগাল পেলেন না। ছোট লড়াইটা জিতলেন মাশরাফিই।
কুশাল মেন্ডিসের ফর্মের গরিবী হাল চলছেই, মাশরাফির স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড-অফে, রুবেলের হাতে। গত ৭ ইনিংসে মেন্ডিসের সম্বল বলতে এই ১৯ রানেরই ২টি ইনিংস। মুস্তাফিজের পেস আর বাউন্সহীনতা কাল হলো ডিকভেলার, আগেভাগেই শট খেলে ফেলে বোল্ড হলেন ১৬ রানে। চান্ডিমালের সঙ্গে জুটিটা বিনষ্ট হলো অঙ্কুরেই।
চান্ডিমালের টিকে থাকাটা জরুরি ছিল শ্রীলঙ্কার, সেই তিনি হলেন রান-আউট। সাইফউদ্দিনের আগের বলে এলবিডাব্লিউর আবেদন হয়েছিল, সেটা নাকচ হলেও পরের বলে চান্ডিমাল হলেন সাকিবের সরাসরি থ্রো-এর শিকার। মিড-অফে ঠেলেই রানের জন্য ছুটেছিলেন, যে রানের ঝুঁকিটা শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হলো মারাত্মক হিসেবেই।
১০৬ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর নামলেন থিসারা পেরেরা, উত্তাল সমুদ্রে শ্রীলঙ্কার টিমটিমে বাতিঘর। সেই তিনি সাকিবকে মারের পর মার দিতে গিয়ে নিজেই মার খেয়ে গেলেন। চার, ছয়, চার, ছয়, আউট। সাকিবের বলে থিসারা পেরেরার উইকেটের ধরন এমনই।। স্থান লং-অফ, ফিল্ডার মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে গুণারত্নে ক্যাচিং অনুশীলন করালেন সাইফউদ্দিনকে, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাকিবের বলে কাট করতে গিয়ে দিলেন ‘লোপ্পা’ ক্যাচ। আর হাসারাঙ্গা অনুশীলনের জন্য বেছে নিলেন মুশফিককে, স্লগ করতে গিয়ে যে খাড়া ক্যাচ তুললেন, সেটা শুধু তার গোল্ডেন ডাকেরই যথার্থতা প্রমাণ করলো।
চতুর্থ ওভারে বোলিং করতে এসেছিলেন রুবেল, তিনি সফল হলেন ৩১তম ওভারে এসে, সুরাঙ্গা লাকমালের স্টাম্প ভেঙ্গে। এরপর দনঞ্জয়া দিয়েছেন ক্যাচ, সাকিবের হাতে, ওই রুবেলের বলেই!
টসে জিতে এবার ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। তামিমের ইনিংসটাও মিরপুরের এ উইকেটের মতোই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা হয়ে উঠেছে ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ। ৭২ বলে ফিফটি করা তামিম পরের ৩৪ রান করলেন ৩০ বলে। দনঞ্জয়ার টার্ন সামনে বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ‘এজ’ হয়ে শেষ হয়েছে তার ইনিংস। সেটা অবশ্য শ্রীলঙ্কা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে।
৭১ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙেছিল এনামুলের উইকেটে। বারকয়েক সুযোগ পাওয়া এনামুল ব্যর্থ সেসবের সদ্ব্যবহার করতে, অতি-আক্রমণাত্মক মানসিকতায় বেরিয়ে যাওয়া শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে নুয়ান প্রদীপের বলে ক্যাচ দিলেন পেছনে। স্লিপ কর্ডনের দায়মোচন করলেন ডিকভেলা- বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিলেন ক্যাচ।
চাইলে যেখানে খুশি মারতে পারতেন- এমন বলে স্টাম্প থেকে সরে এসে জায়গা বানানো সাকিব মারলেন সোজা বোলার গুণারত্নের হাতেই। এনামুলের মতো নড়বড়ে বা তামিমের মতো দুই অর্ধে দুই গিয়ারের ইনিংস নয়, সাকিবের ইনিংস ছিল সোজাসাপটা, আক্রমণাত্মক। তিন নম্বরে এই ৬৭-ই তার সর্বোচ্চ, তামিমের সঙ্গে ৯৯ রানের পর আউট হওয়ার আগে মুশফিকেরে সঙ্গে গড়েছেন ৫৭ রানের জুটি।
মুশফিকের ইনিংস ছিল পেরেরাকে মারা ছয়ের মতোই, দারুণ টাইমিংয়ের সমন্বয়। সেই ছয়ের সঙ্গে ৪টি চারে ৫২ বলে করেছেন ৬২, পেরেরাকে স্লগ করতে গিয়ে বলের নাগাল পাননি, হয়েছেন বোল্ড। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য শুরুতে টাইমিং-হীনতায় ভুগছিলেন, সেটা পুষিয়ে দেওয়ার পরপরই প্রদীপকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে দিয়েছেন ক্যাচ। দুজন মিলে ৪র্থ উইকেটে যোগ করেছেন ঠিকঠিক ৫০ রান।
নাসির-সাইফউদ্দিনের আগে এসেছিলেন মাশরাফি, তবে ১ চারে ৫ বলে ৬ করে মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন প্রদীপের বলে। শর্ট লেংথে পেয়েছিলেন, জায়গা বানাতে গিয়ে টাইমিংটা হয়নি যুতসই। অবশ্য নাসির শুধু যাওয়া-আসাতেই সময় নিয়েছেন, পেরেরার ইয়র্কারে বুটের আগে নিয়ে যেতে পারেননি ব্যাট। দিনের দ্বিতীয় সফল রিভিউয়ে নাসিরের উইকেট পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
শেষ ওভারে ১৯ রান নিয়ে অবশ্য সেসব পুষিয়ে দিয়েছেন সাব্বির-সাইফউদ্দিন। শেষ তিন বলে ১৪ রান নেওয়া সাব্বির এনামুলের মতোই এদিন ছুঁয়েছেন ওয়ানডেতে ১০০০ রান।