• লা লিগা
  • " />

     

    আলাভেসকে খালি হাতেই ফেরাল বার্সা

    আলাভেসকে খালি হাতেই ফেরাল বার্সা    

    ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজাতেই রেফারি ইগ্নাসিও ইগ্লেসিয়াসকে ঘিরে ধরেছিলেন আলাভেস খেলোয়াড়রা। ন্যু ক্যাম্পে ততোক্ষণে ম্যাচটা হেরেই গেছে তারা। কিন্তু ফলাফলটা হতে পারত অন্যরকমও। শেষদিকে ডিবক্সের ভেতর থেকে মুনির এল হাদ্দাদির নেওয়া একটি শট স্যামুয়েল উমতিতির হাতে লেগেও এড়িয়ে গেছে রেফারির চোখ। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতেই রেফারির কাছে 'নিষ্ফলা' অভিযোগ জানানো, ম্যাচ শেষে! বার্সেলোনার কাছে তাদের মাঠেই  ২-১ গোলে হেরে তাই নিজেদের 'অভাগা' ভাবতেই পারে আলাভেস। 

    আর বার্সার জন্য ঘরের মাঠে 'ছোট দলের' বিপক্ষে মাত্র ১ গোলের জয়টাও তাই মহা স্বস্তির। ম্যাচ শেষে লিওনেল মেসি আর লুইস সুয়ারেজদের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল এসব। এই দুইজনের গোলেই পিছিয়ে থাকা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিতে নিয়েছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।



    ২৩ মিনিটে জন গিদেত্তোর করা গোলে পিছিয়ে পড়ার পর চাপেই পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। অগোছালো আক্রমণ আর নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ হওয়া- ঘরের মাঠে বার্সাকে চেনাই যাচ্ছিল না আজ। অবশেষে ৭২ মিনিটে বার্সাকে সমতায় ফেরান সুয়ারেজ। এর পর ৮৪ মিনিটে দারুণ এক ফ্রি কিক থেকে গোল করে আলাভাসের হতাশাটা আরও বাড়িয়ে দেন লিওনেল মেসি। বিতর্ক আছে বার্সার পাওয়া ওই ফ্রি কিক নিয়েও। পাকো আলকাসেরকে ডিবক্সের ঠিক বাইরে যখন  ফাউল করেছিলেন ওয়াকাসো মোবারাক- তখন অফসাইডেই ছিলেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ফ্রি-কিক নয়, রেফারির বরং বাঁশি বাজানোর কথা ছিল অফসাইডের! 

    বার্সার জন্য ম্যাচটা এতো কঠিন হবে সেটা বোধ হয় আঁচ করতে পারেননি কেউই। জর্দি আলবা, সার্জিও বুস্কেটস, সার্জি রবার্তোদের বিশ্রামে রেখেছিলেন ভালভার্দে। তবে বার্সার শেষ ম্যাচে বদলি হয়ে খেলতে নামা ফিলিপ কুতিনহো ছিলেন শুরু থেকেই। ৬৫ মিনিটে মাঠে ছাড়ার আগ পর্যন্ত লা লিগায় নিজের প্রথম ম্যাচটা ভালোই খেলেছেন তিনি, মেসি-সুয়ারেজদের সাথে বোঝাপড়াটাও ছিল নজর কাড়ার মতো।

    ঘরের মাঠে মেসি-সুয়ারেজ-কুতিনহোদের শুরুটাও ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু প্রতি আক্রমণে আলাভেজও জানান দিচ্ছিল, লড়াই করতেই এসেছে আজ তারা। ১৬ মিনিটে ইবাই গোমেজের শট মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান আটকে না দিলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত আলাভেস। কিন্তু ২৩ মিনিটে আর ভুল করেননি গিদেত্তো। আরেকটি প্রতি আক্রমণ কাজে লাগিয়ে এবার ঠিকই জালের ঠিকানা খুঁজে নিল আলাভেস।



    প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও অন্তত দুইবার একই রকম সুযোগ পেয়েছিল আলাভেস, তবে স্টেগান বাধা পার করতে পারেনি তারা। অনুমিতভাবেই বার্সা সুযোগ পেয়েছিল আরও বেশি। প্রথমবার কুতিনহোর গোলমুখী শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে যায় বাইরে। পরে ৪২ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক গোলরক্ষক ফার্নান্দো পাচেকোর হাত ছুঁয়ে, বারপোস্টে লেগে অতিক্রম করে গোললাইন। পিছিয়ে থেকেই তাই বিরতিতে যায় বার্সা। 

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও অবশ্য বার্সার চিত্র পাল্টায়নি। একরকম বাধ্য হয়েই কৌশল বদলে ৫০ মিনিটে রবার্তো আর আলবাকে মাঠে নামান ভালভার্দে। পরে নামেন আলকাসেরও। কিন্তু আলাভাসের রক্ষণে চিড় ধরাতে তখনও ব্যর্থ কাতালানরা। ৬৯ মিনিটে পাউলিনহোর শট ঠেকিয়ে আরও একবার ম্যাচে দলকে টিকিয়ে রাখেন পাচেকো। উলটো প্রতি আক্রমণে বার্সাকে চোখ রাঙাচ্ছিল আলাভাসের আলাভেসের স্ট্রাইকাররা। রুবেন সব্রিনো, রুবেন দুয়ার্তেরা ভালো জায়গা থেকেও বল জড়াতে পারেননি বার্সার জালে। এরপরই শুরু হয় বার্সার ফিরে আসার লড়াই। এই মৌসুমে বার্সার ৭০ শতাংশ গোলই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে, সেটা আজকের পর বেড়ে গেছে আরও।

    ৭৫ মিনিটে বার্সা সমতায় ফেরে আজ শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার কল্যাণে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের বাঁ দিক থেকে করা দারুণ একটি ক্রস গোলে পরিণত করেন সুয়ারেজ। এই নিয়ে শেষ ১০ ম্যাচে সুয়ারেজের গোল সংখ্যা ১২ টি। শেষদিকে সব আলো কেড়ে নেন মেসি। ন্যু ক্যাম্পে লা লিগায় নিজের ২০০ তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আজ। মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে মনে রাখার মতো এক গোল করে শেষ পর্যন্ত দলের জয়টা নিশ্চিত করেছেন তিনিই। যোগ করা সময়ে পেয়ে যেতে পারতেন পরের গোলটাও, কিন্তু পাচেকোকে বোকা বানাতে পারেননি। 

    আজকের জয়ের পর ২০০৯ সালে নিজেদেরই গড়া টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আরও একবার ছুঁয়েছে বার্সা।