তুরিনে টটেনহামের স্মরণীয় রাত
ম্যাচের শুরুতেই দুই গোলের লিড গিয়ে টটেনহাম হটস্পারের সাথে নিজেদের পার্থক্যটাই যেন বুঝিয়ে দিয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু এরপর বাকিটা সময় টটেনহাম বুঝিয়ে দিয়েছে এখন দুই ক্লাবের দূরত্বটা কমে এসেছে অনেক! তুরিনের বুড়িদের মাঠে শেষ পর্যন্ত মনে রাখার মতো এক ফিরে আসার গল্প লিখেছে টটেনহাম। চ্যাম্পিয়সন লিগের শেষ-১৬ এর প্রথম লেগে অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে জুভেন্টাসের সাথে ২-২ ব্যবধানে ড্র করেছে তারা।
মাত্র ৯ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে ম্যাচটা জুভেন্টাসের পক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। প্রথমটা ২ মিনিটে, মিরালেম পিয়ানিচের বাড়ানো বল ভলি করেছিলেন ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে। সেই শট আছড়ে পড়েছিল টটেনহামের জালে। আর পরের গোলটা করেছেন পেনাল্টি থেকে। দুই গোল করেও ম্যাচ শেষে অবশ্য সেই হিগুয়াইনকেই পুড়তে হয়েছে হতাশায়। প্রথমার্ধের শেষদিকে আরও একবার পেনাল্টি পেয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু পরের বার আর গোল করতে পারেননি হিগুয়াইন। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের নেওয়া পাওয়ার শট ফেরত এসেছিল বারপোস্ট থেকে।
প্রথমার্ধের শুরু আর শেষের সময়টাই ছিল হিগুয়াইনের, আর মাঝেরটা পুরোপুরি ছিল টটেনহামের দখলে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও জুভেন্টাসের সাথে সমানে লড়ে যাচ্ছিল মারুসিও পচেত্তিনোর দল। ঘরের মাঠে জুভেন্টাসকে কোনঠাসা করে রাখার সুফলটা ২৬ মিনিটে পেতে পেতেও পাওয়া হয়নি স্পার্সের। হ্যারি কেইনের হেড ঠেকিয়ে সে দফায় আর স্পার্সকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেননি জিয়ানলুইজি বুফন। এর কিছুক্ষণ পর আরও একবার কেইনকে ফেরান বুফন, এবার বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আঙুলের ছোঁয়ায় গোলবঞ্চিত করেন তাকে।
প্রতি আক্রমণে জুভেন্টাসও একবার ভালো সুযোগ পেয়েছিল। পিয়ানিচের সাথে ওয়ান টু খেলে স্পার্সের ডিবক্সের ঢুকে গেলেও হিগুয়াইন শট মারেন বারপোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। হিগুয়াইনের সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করার আফসোসটা এরপরই আরও বাড়িয়ে দেন কেইন। ৩৫ মিনিটে ড্যালে আলির বাড়ানো বল থেকে বুফনকে ওয়ান-অন-ওয়ানে এবার হারাতে পারলেন ইংলিশ স্ট্রাইকার। বুফনকে কাটিয়ে বাঁ দিক থেকে ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে কেইন ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন স্পার্সকে।
প্রথমার্ধ শেষের আগেই সমতায়ও ফিরতে পারত টটেনহাম। কিন্তু ৪০ মিনিটে আরও একবার বাধা হয়ে দাঁড়ান বুফন। এবার ঠেকিয়ে দেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনকে। বিরতির ঠিক আগে ডগলাস কস্তাকে ফাউল করে স্পার্সের ফিরে আসার গল্পটা প্রায় ভেস্তে দিয়েছিলেন সার্জ অরিয়ের। ম্যাচ শেষে অবশ্য পেনাল্টি মিসের জন্য হিগুয়াইনকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন স্পার্স ডিফেন্ডার!
বিরতির পর দুই দলের খেলার গতিই কিছুটা কমে আসে। তবে খেলার উত্তেজনায় ভাটা পড়েনি তাতে। ৫৭ মিনিটে ফ্রেডেরিকো বার্নারদেস্কিকে ঠেকিয়ে দেন হুগো লরিস। ম্যাচে তখনও টটেনহামই এগিয়ে ছিল বল দখলের লড়াইয়ে। আর দুই একবার প্রতি আক্রমণে উঠলেও, খাপছাড়া ছিল জুভেন্টাসের আক্রমণ। দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠে বেশ কয়েকবার বল পেয়েও সঙ্গীর অভাবে আক্রমণেই যেতে পারেননি হিগুয়াইন।
মুসা ডেম্বেলে, এরিক ডায়াররা মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজটা কঠিন করে তুলেছিলেন জুভেন্টাসের জন্য। আর কেইন, আলিদের সামলাতে শুরু থেকেই বেগ পেতে হচ্ছিল জুভেন্টাসের রক্ষণকেও। সমতায় ফেরার গোলটা তাই সময়ের ব্যাপারই ছিল টটেনহামের জন্য। ৭১ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে দারুণ এক গোল করে টটেনহামের ফিরে আসার গল্পটা শেষ করেন এরিকসন।
এরিকসন ফ্রি কিকটা নিয়েছিলেন ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে। জুভেন্টাসের ওয়ালের উপর দিয়ে না মেরে লো গ্রাউন্ড শটই করেছিলেন এরিকসন। বুফন বুঝেও বুঝলেন না, ডানে সরতে গিয়েও সময় মতো পারলেন না। তার আগেই বল ঢুকে গেল জালে। এই ম্যাচের আগে ৬৯৪ মিনিট কোনো গোলই হজম করেননি বুফন। আজ এক ম্যাচেই তার জালে বল জড়াল দুইবার! এই পরিসংখ্যানটাই যেন আজকের ম্যাচে জুভেন্টাসের পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি হয়ে রইল। ঘরের মাঠে দুই গোল হজম করে জুভেন্টাস আর বুফনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সমীকরণটাও কঠিন হয়ে গেল!