• লা লিগা
  • " />

     

    জিরোনার জালে বার্সার গোল উৎসব

    জিরোনার জালে বার্সার গোল উৎসব    

    ক্যাম্প ন্যুতে উপস্থিত প্রায় ৭৫ হাজার বার্সেলোনা সমর্থকেরা তখনও হয়ত বসতেই পারেননি আসন গেড়ে। তার আগেই গোল করে বসল জিরোনা। এই মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদকে হারানো জিরোনা তখন বুঁদ আরও এক মহাকাব্যিক জয়ের স্বপ্নে। কিন্তু ম্যাচের বাকিটা সময় বার্সা জানান দিল, কেন তারা এবারের লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার। পিছিয়ে পড়েও জিরোনাকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। আজকের জয় দিয়েই ২০০৯-১০ মৌসুমে পেপ গার্দিওলার বার্সার টানা ৩১ লা লিগা ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিল ভালভার্দের বার্সা (৩২)। জিরোনার বিপক্ষে বড় জয়ে মূল অবদানটা লুইস সুয়ারেজের। হ্যাটট্রিক করেছেন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি। বার্সার অন্য গোলটি এসেছে ফিলিপ কুতিনিয়োর পা থেকে।

     

    বার্সার দুর্দান্ত জয়ের রাতে মেসি নিজেও দুটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। লা লিগার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছিলেন আগেই। আজ সুয়ারেজের প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করে লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টও এখন মেসির (১৪৮)। লা লিগায় এতদিন ৩৫টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোল করেছিলেন রিয়াল কিংবদন্তী রাউল গঞ্জালেজ এবং অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের আরিৎজ আদুরিজ। স্প্যানিশ লিগে এটিই ছিল এতদিনের রেকর্ড। আজ জিরোনার বিপক্ষে গোল করে এই রেকর্ডটাও নিজের করে নিলেন ‘লিও’ (৩৬)।

     

     

    বড় ব্যবধানে হারলেও ক্যাম্প ন্যুতে লিডটা নিয়েছিল জিরোনাই। ম্যাচের মাত্র ২ মিনিটেই গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগেন এবং ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতির ভুল বুঝাবুঝিতে বল পেয়ে যান জিরোনা স্ট্রাইকার ক্রিশ্চিয়ান পর্তু। প্রথম টাচেই টার স্টেগেনকে কাটিয়ে দলকে লিড এনে দেন তিনি। এই মৌসুমে একমত্র ফুটবলার হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করলেন পর্তু। ক্যাম্প ন্যুতে উপস্থিত প্রায় ৭৫ হাজারের দর্শকের মাঝে তখন পিনপতন নীরবতা। অবশ্য জিরোনাকে মাটিতে নামিয়ে আনতে একেবারেই সময় নেয়নি বার্সা। ম্যাচের ৪ মিনিটেই সুয়ারেজের গোলে সমতায় ফেরে বার্সা। মাঝ মাঠ থেকে সার্জিও বুস্কেটসের পাস নিয়ন্ত্রণে এনে সুয়ারেজের দিকে বাড়ান মেসি। বাঁ-পায়ের নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন ‘এল পিস্তোলেরো’। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটেই জিরোনার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারত বার্সা। কিন্তু গোলরক্ষক বোনোর দক্ষতায় টা আর হয়ে ওঠেনি। অবশ্য এজন্য সতীর্থ বার্নার্দোকে একটি ধন্যবাদ জানাতেই পারেন বোনো। ১৯ মিনিটেই মেসির চিপ তার মাথার ওপর দিয়ে গেলেও বার্নার্দোর দুর্দান্ত ক্লিয়ারেন্সেই সে যাত্রায় বেঁচে যায় জিরোনা। তবে ৩০ মিনিটে আর বার্সাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। ইভান রাকিটিচের লম্বা পাস থেকে বল পান সুয়ারেজ। প্রথম টাচেই মেসির উদ্দেশ্যে পাস বাড়ান এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। সুয়ারেজের পাস থেকে চমৎকার ড্রিবলিংয়ে জিরোনার তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বোনোকে পরাস্ত করেন ‘এলএম১০’।

     

     

    লিড নেওয়ার পর থেকে যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে ঘরের দল। ৩৭ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় বার্সা। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে জিরোনার রক্ষণদেয়ালের সবাইকে বোকা বানিয়ে নেওয়া বাঁ-পায়ের মাপা নিচু শটে বল জালে জড়ান মেসি। তখনও শেষ হয়নি বার্সার ধ্বংসযজ্ঞ। প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে ৪৪ মিনিটে ব্যবধান ৪-১ করেন সুয়ারেজ। মেসির থ্রু বল থেকে ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে বল পান ফিলিপ কুতিনিয়ো। প্রথম টাচেই সুয়ারেজের দিকে পাস বাড়ান তিনি। গোলের মাত্র গজ দুয়েক দূর থেকে ডানপায়ের আলতো টোকায় গোল করেন সুয়ারেজ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হ্যাটট্রিকটাও পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু ৫২ মিনিটে প্রতি আক্রমণে সুয়ারেজের ডানপায়ের বাঁকানো শট ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। সুয়ারেজের মত দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হয়নি কুতিনিয়োকে। ৬৬ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে ডানপায়ের ‘ট্রেডমার্ক’ বাঁকানো শটে লা লিগায় বার্সার হয়ে নিজের প্রথম গোল করেন এই ব্রাজিলিয়ান। এর মিনিট চারেক পরই হ্যাটট্রিকটা পেয়ে যেতে পারতেন মেসিও। কিন্তু ডিবক্সের বাইরে থেকে মেসির নেওয়া ফ্রিকিক দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন বোনো।

     

    মেসি না পারলেও ৭৬ মিনিটে ঠিকই হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সুয়ারেজ। ডানপ্রান্ত থেকে উসমান ডেম্বেলের পাস থেকে ‘ট্যাপ ইন’-এ হ্যাটট্রিক নিশ্চিত করেন তিনি। ছয় গোল করেও থামেনি বার্সার আক্রমণের জোয়ার। ৮২ মিনিটে থমাস ভার্মাইলেনের হেড ক্রসবারে প্রতিহত না হলে ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত। শেষদিকে ক্রিশ্চিয়ান মাফেওর হেড অবিশ্বাস্যভাবে বাঁচিয়ে দেন টার স্টেগেনও আর ব্যবধান কমাতে দেননি জিরোনাকে। মেসি এবং বার্সার রেকর্ডের রাতটা বড় জয় দিয়েই স্মরণীয় করে রাখল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।